ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর

0
904
ছবি ক্রেডিট: প্রথমআলো-বাংলা

হিল ভয়েস, ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, বিশেষ প্রতিবেদক: বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফর করেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে দুই দিনের সফরে তিনি গত ২৬ মার্চ ২০২১ সকাল ১০:৩০ টার দিকে ঢাকায় পৌঁছান এবং দুই দিনের সফর শেষে ২৭ মার্চ ২০২১ রাত আনুমানিক ৯:৩০ টার দিকে ঢাকা ছাড়েন।

জানা গেছে, দুই দিনের এই সফরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগদান ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে একান্তে ও আনুষ্ঠানিক আলোচনা, নৈশভোজে অংশগ্রহণ, প্রেসিডেন্ট মো: আব্দুল হামিদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ছাড়াও দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদল, চলচিত্র ও ক্রীড়া তারকাসহ অনেকের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয়। সমঝোতা স্মারকগুলো হলো- দুর্যোগ দমনে সহযোগিতা, ব্যবসা-বাণিজ্য বিকাশে অশুল্ক বাধা দূরের পদক্ষেপ, দুই দেশের জাতীয় ক্যাডেট কোরের মধ্যে সহযোগিতা বিনিময়, তথ্য প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা এবং রাজশাহীতে খেলার মাঠ বিষয়ে দুই প্রকল্প বাস্তবায়ন। এছাড়া দুই নেতা ৭টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন এবং বৈঠকের পর ১০টি ঘোষণা দেওয়া হয়। সাতটি উন্নয়ন প্রকল্প হল- শিলাইদহের সংস্কারকৃত কুঠিবাড়ি, মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া হয়ে কলকাতা পর্যন্ত স্বাধীনতা সড়ক, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসমাধি, ভারতের উপহার ১০৯টি এ্যাম্বুলেন্স, চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল, দুটি সীমান্ত হাট ও স্মারক ডাকটিকিটের মোড়ক উন্মোচন। এছাড়া ঘোষণাসমূহের মধ্যে অন্যতম হল- চিলাহাটি-হলদিবাড়ি পথে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন চালু (ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে পশ্চিমবঙ্গের নিউজলপাইগুড়ি পর্যন্ত), দিল্লী ইউনিভার্নিটিতে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ চালু, বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের বিষয়টি উদযাপনের অংশ হিসেবে এখন থেকে ৬ ডিসেম্বর ‘মেত্রী দিবস’ পালন, এ বছর দুই দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের নিয়ে ‘ব্যবসায়িক সম্মেলন’ করা, মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবহার করা অস্ত্র বাংলাদেশের জাদুঘরে হস্তান্তর, ২০২২ সালে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশের প্রথম ‘এয়ার শো’তে অংশ নেবে ভারত।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বহুল আলোচিত তিস্তা নদীর পানিবন্টন সমস্যার সমাধান ও রোহিঙ্গ্যা প্রত্যাবাসনে ভারতের সক্রিয় ভূমিকা বিষয়ে আলোচনা উত্থাপিত হলেও এ বিষয়ে বিস্তারিত কোন আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।

একটি বিশেষ ফ্লাইটে আসা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে লালগালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পরই প্রধানমন্ত্রী মোদি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান এবং সেখানে তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

জানা গেছে, সরকার ও রাষ্ট্র নেতাদের সাথে বৈঠক ও সাক্ষাৎ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ২৬ মার্চ ২০২১ সকালের দিকে ঢাকার সোনারগাঁও পাঁচ তারকা হোটেলে মোদির সাথে অন্যান্যদের মধ্যে সাক্ষাৎ করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি, জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার, ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট আইনজীবী এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, নির্মল রোজারিও, ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, বিশিষ্ট অভিনেতা পীযুষ বন্দোপাধ্যায়, এরোমা দত্ত প্রমুখ।

২৭ মার্চ ২০২১ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে সাতক্ষীরায় গিয়ে যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে গিয়ে পূজা দেন। এরপর হেলিকপ্টারে সাতক্ষীরা থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে গিয়ে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে তিনি জেলার ওড়াকান্দিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রাণপুরুষ হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে গিয়ে পূজা করেন এবং এরপর মতুয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কিছক্ষণ মতবিনিময় করেন। সেখান থেকে ঢাকায় ফিরে বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে একান্তে ও আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসেন। এরপর তিনি সন্ধ্যার দিকে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট মো: আব্দুল হামিদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর রাত ৯:৩০ টার দিকে তিনি নিজ দেশ ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।

এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধীরা করে আসছিল হেফাজতে ইসলামসহ বেশ কিছু ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দল। তারা গত ২৬ মার্চ ২০২১ ঢাকার কিছু এলাকা, চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে প্রায় ৫ জনের মত প্রাণ হারায় বলে জানা যায়। ২৭ মার্চও বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। ২৮ মার্চ সকাল-বিকাল দেশব্যাপী তারা হরতাল আহ্বান করে।