২৬ মার্চ: বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ও আদিবাসীদের আত্মপরিচয়ের সংকট

0
786

মিতুল চাকমা বিশাল

স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার ধারণা: ব্যক্তি স্বাধীনতা, জাতীয় স্বাধীনতা, রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা এই প্রত্যায়গুলির উদ্ভব ও বিকাশ প্রধানত আধুনিক যুগে। প্রাচীনকালেও মানুষ গোত্রবদ্ধ এবং রাষ্ট্রবদ্ধভাবে গোত্রপ্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান বা রাজার অধীনে জীবনযাপন করেছে। রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পরে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে যুদ্ধ-বিগ্রহ সংঘঠিত হয়েছে। কিন্তু সেকালের স্বাধীনতার মধ্যে বর্তমান কালের আবেগের অস্তিত্ব দেখা যায় না। প্রাচীন গ্রীসেও ছোট ছোট নগর রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ ঘটে। এথেন্সের দার্শনিকগণ, বিশেষ করে প্লেটো এরিষ্টটল একালে রাষ্ট্রের সংজ্ঞা, রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন।

পরবর্তীতে ইউরোপের রিনেইসন্স বা নবজাগরণ বলে অভিহিত যুগের সূচনা হতে চতুর্দশ, পঞ্চদশ শতক থেকে ভূ-খন্ড, ভাষাভিত্তিক কেন্দ্রীয় শাসনবদ্ধ রাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা একটি নতুন অর্থে প্রকাশ লাভ করতে থাকে। এক রাষ্ট্র অপর রাষ্ট্র হইতে শৌর্যে, বীর্যে প্রধান এবং রাষ্ট্রের স্বাধীনতা কেবল শাসকের স্বাধীনতা এবং গৌরবের ব্যাপার নয়, রাষ্ট্রের সকল অধিবাসীরই আরাধ্য ব্যাপার। বিশেষ করে সমাজের অর্থনৈতিক রূপান্তর, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার ক্রম অগ্রগতি এরকম ধারণার পিছনে মূল কারণ।

১৭৮৯ সালে ফরাসী বিপ্লবের পরে এই সমস্ত ধারণাগুলো আরো বিকশিত হতে থাকে। একই সঙ্গে ব্যক্তি স্বাধীনতাও বিকশিত হতে থাকে। কালক্রমে ভাষা, ধর্ম, একাত্মবোধ ইত্যাদি জাতি এবং রাষ্ট্রের ঐক্যসূত্র হয়ে দাঁড়ায়। এই ঐক্যবোধেরই অপর নাম জাতীয়তাবাদ। এই সময় হতে মানুষের মধ্যে এই প্রবল প্রবণতা হতে থাকে যে, স্বীয় ভাষা, ধর্ম ও ঐতিহাসিক ঐক্যবোধসম্পন্ন সকলের অধিকার আছে এমন স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা: ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর সমগ্র ভারতবর্ষ ব্রিটিশদের হাতে চলে যায়। অতঃপর প্রায় ২০০ বছর শাসনের পর ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগে বাধ্য হন। তাদের ভারত ত্যাগের ভিত্তি হয়, অবিভক্ত ভারতের মুসলিম প্রধান এলাকা নিয়ে পাকিস্তান এবং হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে ভারত রাষ্ট্রের সৃষ্টি করে দেওয়া। কিন্ত অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামের ৯৭% ভাগের অধিক অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করে দেয় র‌্যাডক্লিফ কমিশন।

তদুপুরি, একই ধর্মমতাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক নীতি পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন বাংলাদেশে রূপান্তর করে। বিশেষ করে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের সংকীর্ণ এবং পূর্ববঙ্গের প্রতি বৈষম্যমূলক ও ঔপনিবেশিক আচরণে পূর্ব পাকিস্তানে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবোধ ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে তীব্র হতে থাকে। গোড়া থেকে স্বাধীনতা কথাটি উচ্চারিত না হলেও ১৯৬৬ সালের ছয় দফায় স্বাধীনতার ভাবটি স্পষ্টভবে ফুটে ওঠে। তৎপরবর্তী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ৬৯’এর গণঅভ্যূত্থান এর সাথে আরো নতুন মাত্রা যোগ করে দেয় এবং ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়।

স্বাধীনতার ৫০ বছর: বর্তমান সময়ে এসে আজ জনমনে একটি প্রশ্নের উদয় ঘটেছে, সেটি হচ্ছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, নাকি কেবল ক্ষমতার পালাবদলের ৫০ বছর। বিষয়টিকে সাধারণভাবে বিবেচনা করার কোন যৌক্তিকতা নেই। স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে বিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত একটা ক্রন্তিলগ্নের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশকে যেতে হয়েছে। তার মধ্যে দুই-দুই জন সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া এবং জেনারেল এরশাদ বাংলাদেশের মূল কাঠামো পাল্টিয়ে দিয়ে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের মত করে সৃষ্টি করেন। যা স্বাধীন বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে পুরোপুরি ক্ষুণ্ন করে।

বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসলেও দেশের সাংবিধানিক কাঠামো কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন ঘটে নি। বরং বিএনপি এবং আওয়ামীলীগ উভয়ই সামরিক শাসকদের ফেলে যাওয়া উচ্ছিষ্টকে ভোগ করে সেটিকে আরো পাকাপোক্ত করেছিল। দূর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, জনগণের মত প্রকাশ ও গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ ইত্যাদি দেশকে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। বলা যায়, বর্তমানে প্রায় একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের এক হীনযজ্ঞ চলমান রয়েছে। ফলশ্রুতিতে ক্ষমতাসীন দলের সীমাহীন দূর্নীতি এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর তথ্যমতে, দূর্নীতির সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ২য় এবং সারাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি দূর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২ তম। যা ২০১৭ সালে ছিল ১৭ তম, ২০১৮ সালে ১৩ তম এবং ২০১৯ সালে ছিল ১৪ তম। অর্থাৎ সাম্প্রতিক সময়ে ১৮০টি দেশের উপর চালানো জরিপে উপরের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম। সবচেয়ে কম দূর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় রয়েছে ডেনমার্ক ও নিউজিল্যান্ড।

অতিসম্প্রতি বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। যেটি সাধারণত দেশের মোট জনসংখ্যার মাথাপিছু আয় দিয়ে হিসেব করা হয়। যেখানে দেখানো হয়েছে বাংলাদেশের মানুষের মাথপিছু আয় প্রায় ৮ হাজার মার্কিন ডলার। কিন্তু এর দ্বারা কি দেশের সাধারণ জনগণের অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থা বিচার করা সম্ভব? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহম্মদের মতে, একটি পরিবারের প্রকৃত অবস্থা কখনোই দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দিয়ে নির্ণয় করা যায় না। কেননা মাথাপিছু আয় হিসাব করা হয় দেশের মানুষের গড় আয়ের হিসাবে। সেক্ষেত্রে একটি পরিবারের বার্ষিক আয় যদি ১০ লাখ হয় এবং অপর একটি পরিবার যদি ১০ হাজার টাকা আয় করে তাহলে দুইটি পরিবারের গড় আয় দাঁড়াবে ৫ লাখ ৫ হাজার টাকা। (সুত্র: প্রথম আলো)

সুতরাং দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে এমন ধারণা নিয়ে প্রতিটি জনগণের আর্থিক, সামাজিক অবস্থা উন্নত হয়েছে, এমন ধারণা পোষণ বা প্রচার করাটা একেবারেই ভ্রান্ত। সংখ্যালঘিষ্ঠ একটি গোষ্ঠীর হাতে দেশের সমস্ত অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে দেশে অসন্তোষের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দেশের জনমানুষের বাকস্বাধীনতাকে রুদ্ধ করতে রাষ্ট্র কর্তৃক ২০১৮ সালে আইসিটি এ্যাক্ট-২০১৮ নামে একটি আইন প্রণয়ন করা হয়। যে আইনটি পূর্বের ৫৭ দ্বারার পরিবর্তে করা হলেও, অনেকটা সেই পূর্বের আইনের অনুরূপ এক আইন এটিও। এর দ্বারা সংবাদপত্র, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে রোধ করা হয়েছে। বিতর্কিত এই আইনটি ঘিরে সারাদেশে অনেক বিক্ষোভ হয়েছে, কিন্তু রাষ্ট্র সেদিকে কোনো দৃষ্টিপাত করেনি। এই আইনের কবলে পড়ে লেখক মোশতাকের মৃত্যু সারাদেশকে এক উত্তপ্ত অবস্থায় নিয়ে যায়। সংবাদপত্রের উপর কড়া সেন্সরশীপ প্রয়োগের ফলে দেশের মানুষের কাছে সত্য,সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য কোন সংবাদ প্রকাশই করতে পারছে না গণমাধ্যমগুলো।

আত্মপরিচয়ের সংকট: ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের পূর্ণ বিজয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের আপামর বাঙালি জনগোষ্ঠীর সাথে পাহাড় এবং সমতলের বহু আদিবাসী প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন সাহায্য ও সহযোগিতা দিয়ে দেশের জন্য অবদান রেখে গেছেন অনেকেই। স্বাধীন রাষ্ট্রে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার স্বাদ নিতে চেয়েছিল সকল আদিবাসী, নিজেদের ভূমি, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতরে থেকে বাঁচার স্বপ্ন বুনেছিল আদিবাসী। কিন্তু সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোর ভিতরে পাহাড় কিংবা সমতলের কোন আদিবাসীদেরই ঠাঁই মেলে নি।

সংবিধান হচ্ছে একটি রাষ্ট্র পরিচালনার দলিল। একটি ভবন বা ইমারত যেমন তার নকশা দেখে তৈরি করা হয়, তেমনি সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের শাসনব্যাবস্থা পরিচালিত হয়। সরকার কী ধরনের হবে, রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতরে থেকে নাগরিক হিসেবে আমরা কী কী অধিকার ভোগ করব এবং রাষ্ট্রের অন্যান্য বিভাগ কী কী ক্ষমতা ভোগ করবে তা এই সংবিধানেই লিখিত থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালে সেই ইঙ্গিত আমরা পাই নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা প্রতিবাদের সুরে সেদিন সেই মহান সংদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন-

‘পার্বত্য চট্টগ্রাম হল বিভিন্ন জাতিসত্তার ইতিহাস। কেমন করে সেই ইতিহাস আমাদের সংবিধানের পাতায় স্থান পেল না, তা আমি ভাবতে পারি না। সংবিধান হচ্ছে এমন একটি ব্যাবস্থা, যা অনগ্রসর জাতিকে, পিছিয়ে পড়া, নির্যাতিত জাতিকে, অগ্রসর জাতির সাথে সমান তালে এগিয়ে আসার পথ নির্দেশ করবে। কিন্তু বস্তুতপক্ষে এই পেশকৃত সংবিধানে আমরা সেই রাস্তার সন্ধান পাচ্ছি না।’
প্রসঙ্গত, ১৮৬০ সালের পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল স্বাধীন রাজাদের অধীনে শাসিত ছিল, এমনকি ১৭৬০ সালে ব্রিটিশরা পার্বত্য চট্টগ্রামে আসলেও কেবলমাত্র কর আদায় ছাড়া অন্য কোন শাসনতান্ত্রিক কার্যে তারা হস্তক্ষেপ করে নি। সেই কারণেই এম এন লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি বিশেষ শাসনব্যবস্থা সম্বলিত এলাকা হিসেবে পেতে চেয়েছিলেন, যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের জন্য একটি শাসনতান্ত্রিক অধিকার থাকবে, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার থাকবে। কিন্তু বাঙালির উগ্র জাত্যভিমানের কাছে সেটা গৃহীত হয় নি।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধানের নাগরিকত্ব অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে,
‘(১) বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে
(২) বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালী এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিগণিত হইবেন।’

এছারাও সংবিধানের চার মূলনীতিতে জাতীয়তবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হলেও বস্তুত তা কেবলমাত্র লোক দেখানো।

জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞায় বলা আছে যে, ‘(৯) ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালী জাতির ঐক্য ও সংহতির প্রতীক হইবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।’

অর্থাৎ এখানে কেবল বাঙালী জাতীয়তাবাদের কথাই বলা হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে কেবলমাত্র একজাতি, একরাষ্ট্র গঠনের পাঁয়তারা। ভাবতে অবাক লাগে যে, বাংলাদেশে বাঙালি ছাড়াও যে, বহু সাংস্কৃতির এবং বহু বৈচিত্র্যের অপরাপর যে ৫০টির অধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে, তা দেশের নীতি নির্ধারকেরা কিভাবে ভুলে যান।

৭৫ পরবর্তী জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু জিয়াউর রহমানের সেই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মূল ভিত্তি ছিল উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতার নগ্ন আবরণ। তার শাসনামলেই ১৯৭৮ সালে ২য় ঘোষণাপত্র আদেশ নং ৪ এর মূলে উল্লিখিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিম্নোক্তভাবে পরিবর্তন করা হয়-
‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার-এই নীতিসমুহ এবং তৎসহ এই নীতিসমূহ হইতে উদ্ভূত এই ভাগে বর্ণিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে।’

উক্ত আদেশ বলেই সংবিধানের ১২নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্বলিত বিষয়গুলো সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়। এবং পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে আরেক স্বৈরশাসক এরশাদ ক্ষমতায় এসে সংবিধানে ‘২(ক) প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে’ বলে অনুচ্ছেদ সংযোজন করে সেটাকে আরো পাকাপোক্ত করেন।
এই সংশোধনীর মাধ্যমে বাঙালি জাতি ভিন্ন অন্যান্য আদিবাসী জাতিসমূহের ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি ও অন্যান্য মৌলিক অধিকারসমূহ হুমকির সম্মুখীন হয়। বহুজাতির বৈচিত্র্যমন্ডিত বাংলাদেশ এক উলঙ্গ জাতিরাষ্ট্রে পরিণত হয় যা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিকও বটে। উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ধর্মান্ধতা রাষ্ট্রকে গ্রাস করে মৌলবাদের কবলে পরিগণিত করে, এক সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করে।

পরবর্তীতে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৭২-এর সংবিধানের মূলনীতিগুলিকে পূনর্বহাল করে। কিন্তু তার পাশাপাশি সামরিক শাসকদের প্রবর্তিত ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ এবং সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির-রাহমানির-রাহিম’ সম্বলিত শব্দগুলোও পূনর্বহাল রাখে।

এমনকি সংবিধানে আদিবাসীদের সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্যে ‘২৩(ক) রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন’ বলে একটি অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে কেবল। অপরপক্ষে নাগরিকত্ব অনুচ্ছেদে আবারও সকলকে বাঙালি বলিয়া অভিহিত করা হয়।

এভাবেই রাষ্ট্রের কাঠামোর ভেতরে থেকেও আদিবাসীদের ভূমি, ভূ-খন্ড, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রেক্ষিত: বাংলাদেশের এক দশমাংশ অঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রাম হলেও তদুপুরি এখানে চাষাবাদযোগ্য ভূমির পরিমাণ অতি অল্প। বিশেষ করে ষাটের দশকের কাপ্তাই বাঁধ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ৫৪ হাজার চাষযোগ্য জমি তলিয়ে দেয় এবং বাস্তুচ্যুত করে প্রায় লক্ষাধিক পাহাড়িকে। ছাত্রাবস্থায় এম এন লারমা তখনই বুঝতে পেরেছিলেন পাহাড়িদের রাজনৈতিক অধিকার ছাড়া আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জন সম্ভব নয়। তাই ১৯৭২ সালে গড়ে তোলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি।

৭৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট এম এন লারমার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জুম্ম জনগণের স্বায়ত্তশাসনের জন্য ৪ দফা সম্বলিত একটি দাবিনামা পেশ করেন। কিন্তু এম এন লারমার সেই প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। এছাড়াও সংবিধানের ভেতরে বাইরে নানাভাবে এম এন লারমা জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের বিষয়টি তুলে ধরে জোর দাবি জানিয়েছিলেন।

জিয়া সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৭৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে একটি অর্থনৈতিক সমস্যা উল্লেখ করে উন্নয়ন বোর্ড নামে একটি স্বতন্ত্র সংস্থা গঠন করে দেন। বস্তুতঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা কোন অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, এটি একটি রাজনৈতিক সমস্যা। কিন্তু রাষ্ট্র সেটি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয় এবং উপর্যুপরি পার্বত্য চট্টগ্রামকে ইসলামিকরণের লক্ষ্যে ৮০’র দশকে সমতলের চরভাঙা এলাকা হতে চার লক্ষাধিক বাস্তুচ্যুত বাঙালিকে পুনর্বাসন করে ডেমোগ্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ সম্পন্ন করা হয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধ যে চেতনা ও ঐক্য নিয়ে সংগঠিত হয়েছিল, রাষ্ট্র সেখান থেকে সরে গিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের উপনিবেশিক রাষ্ট্রের চরিত্র গ্রহণ করে। পশ্চিম পাকিস্তান যেভাবে পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করত, ঠিক সেই প্রকারে বাংলাদেশ তার অভ্যন্তরে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে শোষণ করতে থাকে। সেনাবাহিনী ও সেটেলার বাঙালিদের দ্বারা হত্যা, ধর্ষণ ও লুন্ঠনের মত জঘন্য ঘটনা ঘটিয়ে রাষ্ট্র আবারও তার উন্মত্ত চরিত্রটিকে উন্মোচন করল।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাটিকে গণতান্ত্রিকভাবে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান না করে বরাবরই শক্তি প্রয়োগের নীতিতে, উগ্র সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে সামরিক উপায়ে সমাধানের পথ বেছে নেয় রাষ্ট্র। সেই লক্ষ্যে ৭৩ সালে রুমা, আলীকদম ও দীঘিনালায় তিনটি সেনাক্যাম্প স্থাপন করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করার মহাপ্রয়াস নিয়ে ১৯০০ সালের শাসনবিধিকে লঙ্ঘন করে চার লক্ষের অধিক বহিরাগতকে অনুপ্রবেশ করিয়ে তাদের ব্যবহার করে একের পর এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘঠিত করা হয়।

১৯৯৭ সালে চুক্তির আওতাবদ্ধ হয়েও রাষ্ট্র তার স্বরূপ বদলাতে পারে নি। দীর্ঘ দুই যুগের অধিক স্বশস্ত্র সংগ্রামের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষকে এড়িয়ে শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও রাষ্ট্র তার অবস্থান থেকে দিন দিন সরে যাচ্ছে। অপারেশন দাবানলের পরিবর্তে অপারেশন উত্তরণ জারি রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন জারি রাখা হয়েছে। থেমে থাকেনি পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার মত জঘন্য ঘটনা, বন্ধ হয় নি বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ। সেনাবাহিনী, আনসার ও ভিডিপির সকল অস্থায়ী ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়ার কথা থাকলেও সেগুলো সরিয়ে না নিয়ে বরং আরো নতুন করে অস্থায়ী ক্যাম্প বসানে হচ্ছে। নিরাপত্তার নামে যত্রতত্র সেনাচৌকি বসিয়ে জনগণকে হয়রানি করা হচ্ছে। যা একজন ব্যক্তির ব্যক্তিস্বাধীনতাকে সম্পূর্ণভাবে ক্ষুণ্ন করে এবং পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামকে এক অনিরাপদ ভূমিতে পরিণত করে।

উপসংহার: বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত বিভিন্ন মানবাধিকার সনদে অনুস্বাক্ষর করেছে এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত সকল সনদ মেনে চলার কথা ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশ আইএলও কনভেনশন নং ১০৭-এ অনুস্বাক্ষর করলেও এর বর্ধিত সংস্করণ কনভেনশন নং ১৬৯ এ আজও অনুস্বাক্ষর করেনি। যেখানে আদিবাসীদের স্বতন্ত্রতাকে স্বীকার করে তাদের প্রথাগত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ২০০৭ সালে ঘোষিত আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্রের উপর বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত থাকে। অনুমোদনের পর জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের প্রতিনিধি ইশরাত জাহান আহমেদ বলেন যে, তার মিশন যেকোনো অনগ্রসর জাতিগোষ্টীর অধিকারের প্রতি সমর্থন করে।

উপরন্তু ২০০৯ সালে আদিবাসী দিবস উপলক্ষেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের আদিবাসীসহ বিশ্বের সকল আদিবাসীদের শুভেচ্ছা নিবেদন করেন। কিন্তু হঠাৎ করেই ২০১১ সালে এসে দেশের ৫০টির অধিক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। রাষ্ট্র ঘোষণা করে দিল, ‘বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই’, যারা আছে তারা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং বাঙালিরাই নাকি এদেশের আদিবাসী।
সংবিধানে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে এবং সংবিধানের ২৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী, পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি বৈষম্য প্রদান করিবে না।’ এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, আদিবাসী জাতিসমূহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক দিক দিয়ে দেশের মূল স্রোতধারার জনগোষ্ঠীর চাইতে সম্পূর্ণ পৃথক এবং পশ্চাৎপদ। তাই মূল স্রোতধারার জনগোষ্ঠীর সাথে সমানতালে এগিয়ে যেতে তাদের অনেক বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয় এবং তা অনেক কঠিনও বটে।

যেহেতু আদিবাসীদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক জীবনধারা দেশের মূল স্রোতধারার জনগোষ্ঠীর চেয়ে পৃথক এবং স্বতন্ত্র, তাই তাদের জীবনধারার বিকাশ সাধনে অবশ্যই বিশেষ শাসনব্যবস্থা প্রণয়ন করা জরুরী। ব্রিটিশ সরকার সেটা উপলব্ধি করেই ১৯০০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন প্রণয়ন করে, যার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে বহিরাগতদের প্রবেশের ক্ষেত্রে কতগুলো সীমাবদ্ধতা তৈরি করে দেয়। তাদের সামাজিক আইন, রীতি-নীতি ও প্রথা পদ্ধতিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তাছাড়া ১৯১৯ সনের ভারত শাসন আইন, ১৯৩৫ সনের ইন্ডিয়ান এ্যাক্ট প্রভৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল শাসন বহির্ভূত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত ছিল। এখনও পর্যন্ত ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে আমরা ‘ইনার লাইন পারমিট’ ব্যবস্থাটি দেখতে পাই। সেখানে বহিরাগত কেউ এসে জায়গা জমি ক্রয় করতে পারে না। যা তাদের স্বাতন্ত্র্যতাকে ধরে রাখতে অন্যতম উপাদান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার ৫০টি বছর পরেও এদেশের আদিবাসীদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় নি। প্রতিনিয়ত আদিবাসীদের উচ্ছেদের জন্য রাষ্ট্র একের পর এক নীল নকশা বাস্তবায়ন করে চলেছে। রামুর বৌদ্ধপল্লীতে হামলা, শাল্লায় সাম্প্রদায়িক হামলা ও বাড়িঘর ভাঙচুর এবং লুঠপাঠ, মাগুড়ায় ইসলাম গ্রহণের জন্য হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বেনামী চিঠি, চিম্বুকে ভূমি দখলের প্রচেষ্টা, মধূপুরে আদিবাসী উচ্ছেদ, সিলেটের খাসিয়া পুঞ্জিকে ধ্বংস করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক শাসন সমস্ত কিছুই এখন রাষ্ট্রীয় যোগসাজশেই চলমান রয়েছে। মোটকথায় এখনও আত্মপরিচয়ের সংকট নিয়ে চলতে হয় তাদের। স্বাধীন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রকাঠামোর ভেতরে সেই বাঙালি ভিন্ন মানুষগুলোর ঠাঁই হয় নি, হয়েছে কেবল তাদের সংস্কৃতিগুলি সংরক্ষণের। কিন্তু যার সংস্কৃতি সংরক্ষণের কথা আইনে লেখা হয়েছে, তার অস্তিত্বই যদি না থাকে, তাহলে ইতিহাস কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা বলার ভাষা আমার নেই। সভ্য জগতের সভ্য লোকেরা প্রতিনিয়ত আদিবাসীদেরকে নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার ক্রীড়ায় মত্ত, মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক যে মানবাধিকারের প্রয়োজন, আদিবাসীরা সেখান হতে বঞ্চিত। এম এন লারমা তাইতো সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা বঞ্চিত মানব’। আবার হয়তো কোনো একসময় কোনো এক আদিবাসী আমেরিকার সেই রেড ইন্ডিয়ানদের মতোই বলবে ‘আমাকে কবর দিও কর্ণফুলির বাঁকে’।