লামায় ম্রোদের গ্রামে আগুন ও লুটপাটের ঘটনায় উদ্বেগ ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের

0
222

হিল ভয়েস, ৫ জানুয়ারি ২০২৩, ঢাকা: বান্দরবনের লামার এক পাড়ায় আদিবাসীদের উপর হামলা, বসত বাড়িতে আগুন ও লুটপাটের ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের ৪২ জন বিশিষ্ট ব্যাক্তি। বিবৃতিতে আদিবাসীদের উপর আক্রমণ ও বাড়ীঘরে আগুন দেয়ার জন্য দায়ী রাবার কোম্পানীর লোক ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের শাস্তি ও আইন অনুযায়ী জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবী জানান বিশিষ্টজনেরা।

গতকাল বুধবার (জানুয়ারি ৪) প্রদত্ত বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে প্রকাশ, গত ১লা জানুয়ারি, ২০২৩, আনুমানিক রাত ১২-০০ টার দিকে লামা রাবার কোম্পানীর প্রায় ২০০/২৫০ জন লোক ৬ ট্রাক ভর্তি করে রেংয়েন কার্বারী পাড়ায় আক্রমন করে। তারা পাড়ার প্রায় ৭ টি বাড়ীতে আক্রমন করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা পাড়ার কার্বারী রেংয়েন এর বাড়ীতেও হামলা চালায়, তারা ভয়ে- আতংকে পাশের ঝোপে পালিয়ে নিজেদের রক্ষা করেছেন। তবে তার বাড়ী-ঘর তছনছ করে টাকা, ছাগল, মুরগি, ধান সৌর বিদ্যুৎ, মোবাইল, চালের বস্তা, কম্বল ইত্যাদি হামলাকারী দল লুট করে নিয়ে যায়।

বিবৃতি বলা হয় যে, হামলার আগে সন্ধ্যায় লামা থানার এস আই শামীম এসে পাড়াবাসীদের শাসিয়ে যায়, এই এলাকায় বাড়ি ঘর করা যাবে না। সব ভেঙ্গে ফেলা হবে। যদিও এ এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জারি করা নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। পুলিশের এই বক্তব্যর পরই রাতে রাবার কোম্পানীর লোকজন হামলা চালায়। তাই আদিবাসীরা এতো অসহায়ত্বের মধ্যে থেকেও পুলিশের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে। প্রায় একবছর ধরে লামা রাবার কোম্পানীর যোগসাজশে পুলিশ প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে লামার এই আদিবাসীদের উপর যে নির্যাতন চালানো হচ্ছে তা অমানবিক ও বর্বরোচিত। রাবার কোম্পানীর লোকদের হামলা-লুটপাট এবং স্থানীয় পুলিশের আদিবাসী ও মানবাধিকার বিরোধী কর্মকান্ডের আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

বিশিষ্টজনেরা তাদের বিবৃতিতে আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করা, অবিলম্বে হামলাকারী ও তাদের মদদদানকারী পুলিশ ও অন্যান্যদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি, দায়ী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা, প্রান্তিক অবস্থানে থাকা ম্রো জনগোষ্ঠীর নাগরিকদের উপর হামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে যুক্ত রাবার কোম্পানীর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের দুষ্কর্মে সহায়তাকরী আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সদস্যদের তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে শাস্তি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ও রাবার কোম্পানীর অবৈধ লীজ অবিলম্বে বাতিল করার দাবী জানান।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, গত ২৭ এপ্রিল ২০২২-এ বান্দরবানের লামা উপজেলার রেংয়েন পাড়া, জয় চন্দ্র কারবারী পাড়া ও রেংয়েন কারবারী পাড়ার আদিবাসীদের সৃজিত জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই আগুনে প্রায় একশ একর জুমের ধান, বাঁশ, আম, কলা, আনারসসহ বিভিন্ন ফলদ ও বনজ গাছ পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত পাড়াগুলোর আদিবাসীদের অভিযোগ, জমি দখলের জন্য লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি কোম্পানীর লোকজন তাদের ফসলে পরিকল্পিতভাবে এই আগুন লাগিয়েছে। এ বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করতে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালকে প্রধান করে গঠিত ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটি লীজ বাতিলসহ ৬ দফা সুপারিশ দিলেও তা কার্যকর করা হয়নি। বরং গত ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২-এ আদিবাসীদের পানির একমাত্র উৎস পাহাড়ী ঝিঁড়ির পানিতে বিষ মেশানো হয়। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসন অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। কোম্পানীর লোকেরা ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২২-এ লাংকম ম্রোসহ চার জন ম্রো আদিবাসীর চাষকৃত ক্ষেত থেকে ২৫ মণের অধিক মিষ্টি কুমড়া লুট করে নিয়ে যায় এবং ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২-এ রেং ইয়ুং ম্রোর বাগানে রোপণ করা ৩০০ টি কলাগাছ ধ্বংস করে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন, সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও চেয়ারপার্সন, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি ও চেয়ারপার্সন, এএলআরডি, অ্যাড. জেড আই খান পান্না, মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, ড. আবুল বারকাত, সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ও উপদেষ্টা, এইচডিআরসি, রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ড. হামিদা হোসেন, মানবাধিকার কর্মী, ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি, ড. স্বপন আদনান, সাবেক শিক্ষক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রফেশনাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, সোয়াস, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন, শিরিন হক, সদস্য, নারীপক্ষ, সেলিম সামাদ, সাংবাদিক ও সাধারণ সম্পাদাক, ফোরাম ফর ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন, ড. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, নির্বাহী পরিচালক, রিসার্স ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশ (রিব), এড. রাণা দাশগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, পারভীন হাসান, ভাইস চ্যন্সেলর, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, কাজল দেবনাথ, প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, অ্যাডভোকেট তবারক হোসাইন, সহ-সভাপতি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, রেহনুমা আহমেদ, কবি ও লেখক, শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এসোসিয়েশ ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি), ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অনারারি নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), সঞ্জীব দ্রং, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী, জাকির হোসেন, নির্বাহী পরিচালক, নাগরিক উদ্যোগ, শাহীন আনাম, নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান নির্বাহী, বেলা, বীনা ডি’ কস্টা, অধ্যাপক, অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ড. সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তাসনিম সিরাজ মাহবুব, সহযোগি অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড. আকমল হুসেন, সাবেক অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সাদাব নুর, অনারারি রিসার্স ফেলো, নৃ-বিজ্ঞান বিভাগ, ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়, ড. মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জোবাইদা নাসরীন কণা, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মো. নুর খান লিটন, মানবাধিকার কর্মী, নাসের বখতিয়ার, হানা শামস আহমেদ মানবাধিকার ও আদিবাসী অধিকার কর্মী, রেজাউল করিম চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ট্রাস্ট, দীপায়ন খীসা, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, মুক্তাশ্রী চাকমা, কোর মেম্বার, সাংগত, রোজিনা বেগম, গবেষক ও অধিকারকর্মী, লেলং খুমী, আদিবাসী অধিকার কর্মী।