লংগদুতে এমএন লারমার ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জুম্ম জাতীয় শোক দিবস উদযাপন

0
177

হিল ভয়েস, ১১ নভেম্বর ২০২৩, রাঙ্গামাটি : পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, লংগদু থানা শাখার উদ্দ্যোগে “জুম্ম জাতীয় অস্থিত্ব সংরক্ষনে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হোন” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে রনজিত পাড়া, নোয়াপাড়া, রাঙ্গীপাড়া, চিবেরেগা, চাল্যাতুলি, শান্তিনগর, ভূইয়াছড়া, জারুলছড়া, ছোট মাহিল্যা, খাগড়াছড়ি, শীলকাটাছড়া, কেরেঙাছড়ি, কাট্টলীসহ লংগদু উপজেলার বিভিন্ন স্থানে যথাযোগ্য মর্যাদায় মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪০তম মৃত্যু বার্ষিকী ও জুম্ম জাতীয় শোক দিবস উদযাপন করা হয়েছে।

এই উপলক্ষে বগাচতর এলাকার রনজিত পাড়া ও নোয়া পাড়ার গ্রামবাসীদের যৌথ উদ্দ্যেগে “রনজিত পাড়া জয়পুর বনবিহার বেইন ঘর” প্রাঙ্গনে সকাল ১০টায় রনজিত পাড়া গ্রাম কমিটির সভাপতি প্রিয় রতন চাকমার সভাপতিত্বে এবং সম্পাদক রাসেল চাকমার সঞ্চালনায় এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত স্মরণসভায় অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনসংহতি সমিতি, লংগদু আঞ্চলিক পরিচালক মনিব চাকমা, জনসংহতি সমিতি, লংগদু থানা কমিটির সদস্য রুপেন চাকমা ও যুব আঞ্চলিক পরিচালক ডেভিদ চাকমা। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এডিশন চাকমা, সদস্য, যুব সমিতি, রনজিত পাড়া গ্রাম কমিটি।

সভায় অতিথি মনিব চাকমা প্রথমে প্রয়াত মহান নেতা এমএন লারমার পরিচিতি তুলে ধরেন এবং পর্যায়ক্রমে তার শিক্ষা জীবন, কর্ম জীবন, ব্যাক্তিগত জীবন, রাজনৈতিক জীবন ও শান্তিবাহিনী জীবন সম্পর্কে  আলোচনা করেন। তিনি প্রয়াত নেতা এমএন লারমার আদর্শকে বুকে ধারণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের চলমান বৃহত্তর আন্দোলন ও সংগ্রামে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হলে উপযুক্ত শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলে হবে না, আমাদের প্রজন্মকে সুশিক্ষা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। এই বিষয়ে তিনি স্থানীয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করার জন্য গ্রামবাসিদের আরো সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানান।

বিশেষ অতিথি রুপেন চাকমা বলেন, ১০ নভেম্বর সম্পর্কে আমাদের ধারণা না থাকার কারণে গ্রামবাসীদের যেভাবে স্মরণ সভায অংশগ্রহন করার কথা সেভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মহান নেতার সম্মানে আমাদের প্রতিটি ঘরে ঘরে মোমবাতি জ্বালিয়ে সম্মান জানানো উচিত। উদীয়মান প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এম এন লারমার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সামিল হতে হবে অন্যথায় জুম্মজাতির অস্থিত্ব হারিয়ে যাবে।

বিশেষ অতিথি ডেভিদ চাকমা তরুনদের উদ্দেশে বলেন, বর্তমানে আমরা সবাই মোবাইলের আসক্ত হয়ে বই পড়া ছেড়ে দিয়েছি, পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে। ফলে মহান নেতা এমএন লারমার মতো ব্যাক্তিদের জীবন ও আদর্শ সম্পর্কে আমাদের ধারণা অত্যন্ত সীমিত। অথচ তিনি জন্ম না হলে আমাদের জুম্মজাতি এতদিন বিলীন হয়ে যেত। জুম্মজাতির এই মহান নেতার জীবন সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেকের জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধারণা দিতে হবে।

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জ্যোতি বিকাশ চাকমা, সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, নোয়াপাড়া গ্রাম শাখা ও বর্তমান মেম্বার, ৬নং ওয়ার্ড, ৪নং বগাচতর ইউনিয়ন, রিটন চাকমা, সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, রনজিত পাড়া গ্রাম শাখা ও দেবেন্দ্র চাকমা, সভাপতি, জনসংহতি সমিতি, নোয়াপাড়া গ্রাম কমিটি।

এছাড়াও, জনসংহতি সমিতি রাঙ্গীপাড়া গ্রাম কমিটির উদ্দ্যোগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাঙ্গীপাড়া গ্রামে বিকাল ২টায় এমএন লারমা’র ছবি অংকন এবং বিকাল ৪টায় রাঙ্গীপাড়া গ্রামের যুবকদের বলিভল প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়।

সন্ধ্যায় সকল শহীদদের স্মরণে হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ফানুস বাতি উড়ানো হয়।