রাজস্থলীতে সেনাবাহিনী কর্তৃক ১৩ ত্রিপুরা গ্রামবাসীকে বেদম মারধর ও এক তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা

0
1061

হিল ভয়েস, ১৭ জানুয়ারি ২০২১, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটির জেলার রাজস্থলী উপজেলার ৩২৯ নং কাপ্তাই মৌজার ১নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বর্মা পাড়া ও বুতাম পাড়ার ১৩ জন ত্রিপুরা গ্রামবাসীকে সেনাবাহিনী কর্তৃক মারধর এবং ক্যাম্পে নিয়ে আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আটককৃত ব্যক্তিরা হলেন, বুতাম পাড়া থেকে রবিধন ত্রিপুরা (৪৮), পিতা- মিজরাম ত্রিপুরা; দুনেন্দ্র ত্রিপুরা (৪০), পিতা- পুনরাম ত্রিপুরা; বীরবাদু ত্রিপুরা (২৬), পিতা- ফুদুলা ত্রিপুরা; লক্ষণ ত্রিপুরা (২৮), পিতা -সত্যরাম ত্রিপুরা; রামবাদু ত্রিপুরা (৪৬), পিতা- বিষ্ণুজয় ত্রিপুরা; অভিরাম ত্রিপুরা (৩২), পিতা- নকুল ত্রিপুরা; রনবীর ত্রিপুরা (২৭), পিতা- থাংচুরলা ত্রিপুরা; এবং বর্মপাড়া থেকে চাইল্যাগ্য ত্রিপুরা কার্বারি (৬৩), বলিরাম ত্রিপুরা (৪৬), থার্মেন ত্রিপুরা (৩৬), চাইপ্রুহা ত্রিপুরা (৪৩) ও যোগ্যমিয়া ত্রিপুরা। আরেক জনের নাম জানা যায়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল ১৫ জানুয়ারি ২০২০ বিকাল ৩:০০ টার দিকে ফারুয়া সাবজোন থেকে একদল সেনাবাহিনীর দল রাজস্থলী ও বিলাইছড়ির সীমান্ত পাড়া বুতাম পাড়া ও তার পাশের পাড়া বর্মা পাড়াতে হানা দেয়।

এসময় সেনাসদস্যরা দুই পাড়ার প্রত্যেক জুম্ম গ্রামবাসীর বাড়িতে ব্যাপক তল্লাসী চালায় এবং গণহারে মারধর শুরু করে। মারধরের ভয়ে এলাকার বৃদ্ধ-যুব সমাজ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যে যার মতন পালিয়ে যায়। মারধর করতে করতে রাগান্বিত সেনাবাহিনীর সদস্যরা ”বন্দুক কই. বন্দুক কই?” বন্দুকগুলো তাদের কাছে জমা দিতে বলতে থাকে।

দুই পাড়া থেকে রাজস্থলী থানা ও বলি পাড়া সেনা ক্যাম্প থেকে লাইসেন্স করা ১৩ টি দেশীয় বন্ধুক জব্দ করে নিয়ে যায়। তার সাথে ১৩ জন নিরীহ জুম্মকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।

উল্লেখ্য, রামবাদু ত্রিপুরাকে মারধরের সময় তার প্রতিবন্ধী মেয়ে কিশোরী গণারং ত্রিপুরা (১৯) বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। এতে মারধর করতে থাকা ক্ষিপ্ত সেনাসদস্যাটি প্রতিবন্ধী কিশোরী গণারং ত্রিপুরাকে শ্লীলতাহানি এবং ধর্ষণের চেষ্টা করে। এসময় বাকি সেনা সদস্যরা তাকে নিবৃত্ত করে।

বুতাম পাড়া ও বর্মা পাড়ার মুরুব্বি ও সচেতন মহল হিল ভয়েসকে জানান, নিরীহ জুম্মদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া বন্দুকগুলো রাজস্থলী থানা ও বলি পাড়ার ক্যাম্প থেকে লাইসেন্স করা। গ্রামটি সীমান্তবর্তী হওয়ায় ডাকাত-সন্ত্রাসীদের থেকে আত্মরক্ষার জন্য গ্রামবাসীরা পর্যায়ক্রমে এ বন্দুকটি ব্যবহার করেন। এরজন্য গ্রামবাসীরা মাসে কিংবা দুইমাস অন্তর অন্তর বলি পাড়া সেনাক্যাম্প ও রাজস্থলী থানায় বন্দুক ব্যবহারে জবাবদিহি ও তথ্য দিতেন।

হিল ভয়েসের বিশেষ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, সেনাবাহিনী পার্বত্য এলাকা থেকে লোক দেখানো অস্ত্র উদ্ধার মূলত নিজের প্রমোশন ভাগিয়ে নেওয়ার জন্য ও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে খুশি করার জন্য করে থাকে। এ সাজানো অস্ত্র উদ্ধার দুইভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। এক. দায়িত্ব নেয়ার পর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট দায়িত্বভার পালনের সক্ষমতা দেখানোর জন্য এবং আরেকবার দায়িত্ব শেষ করার পর্যায়ে এসে প্রমোশন পাওয়ার জন্য এসব বন্দুকগুলো অস্ত্র উদ্ধারের নাটকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।