রাঙ্গামাটিতে সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উপর্যুপরি হয়রানিমূলক টহল অভিযান

0
552
ছবি : প্রতীকী

হিল ভয়েস, ৭ আগস্ট ২০২১, রাঙ্গামাটি: সম্প্রতি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার জীবতলী ইউনিয়ন ও মগবান ইউনিয়ন এলাকার জুম্মদের গ্রামে গ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সেনামদদপুষ্ট ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক উপর্যুপরি হয়রানিমূলক টহল অভিযান চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক এই অভিযান চালানো হচ্ছে কখনো যৌথভাবে, কখনো আলাদাভাবে।

এসব টহল অভিযানে সেনাবাহিনী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীরা সাধারণ জুম্ম জনগণকে নানা উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত প্রশ্ন, যেমন জেএসএস এর সন্ত্রাসীরা কোনদিকে আসে, খাবার কোথায় খায়, তাদেরকে চাঁদা কত করে দিতে হয়, উত্তোলিত চাঁদার টাকা কার কাছে জমা দেওয়া হয় ইত্যাদি নানা প্রশ্ন করে নিয়মিত হয়রানি করছে। এতে গ্রামবাসীদের চলাচলে ও স্বাভাবিক জীবনে প্রতিবন্ধকতা এবং এলাকার মানুষের মধ্যে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।

জানা গেছে, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এসব টহল অভিযান পরিচালনা করছে জীবতলী সেনানিবাস (৭ আ ই) নিয়ন্ত্রিত গবঘোনা সেনা ক্যাম্প, এস ব্যান্ড ক্যাম্প ও বড়াদম সেনা ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা। অপরদিকে, সেনাবাহিনীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা জীবতলী চেয়ারম্যান পাড়ায় অবস্থানকারী ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীরাও একই কায়দায় টহল অভিযান চালাচ্ছে।

জানা গেছে, ইতোমধ্যে জীবতলী ইউনিয়নের পানছড়ি পাড়া, রেংক্ষ্যং বাজার, কৌশল্যাঘোনা, বাকছড়ি পাড়া, ধুল্যাছড়ি, চেয়ারম্যান পাড়া এবং মগবান ইউনিয়নের গবঘোনা চাকমা পাড়া, পৃজুছড়া, নতুন বাজার, কেরেট হাবা, তারিঙ্যা পাড়াসহ বিভিন্ন জুম্ম গ্রামে নিয়মিত টহল অভিযান জোরদার করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জুলাই ২০১২ ভোর ৪:০০ টার দিকে জীবতলী সেনানিবাসের সেনা সদস্য এবং অধীর চাকমা হেগেরা ও অচেন্তু চাকমার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীদের কয়েকজন সদস্যসহ সেনা ও সন্ত্রাসীদের ২৪ জনের একটি যৌথ দল পার্শ্ববর্তী গুইহাবা ছড়া গ্রামে যায়। সেনা সদস্যরা সেখানে শান্তি রাণী কার্বারিকে জিজ্ঞেস করে যে, এই গ্রামে সন্ত্রাসী আছে কিনা। একই গ্রামের শোভারাজা চাকমাকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, তাকে চাঁদা দিতে হয় কিনা, কত টাকা করে দিতে হয়। এভাবে আরো অনেক গ্রামবাসীকে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে হয়রানি করা হয়।

গত ২ আগস্ট ২০২১ সকাল ৯:০০ টার দিকে ১২ জনের সেনাবাহিনীর একটি পানছড়ি পাড়া গ্রামে যায়। এসময় সেনা সদস্যরা স্মৃতিজীবন চাকমা (৪৮), পীং-নিরোদ বরণ চাকমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করে যে, এখানে সন্ত্রাসী এসেছে কিনা, চাদা দিতে হয় কিনা ইত্যাদি নানা প্রশ্ন।

গত ৩ আগস্ট ২০২১ সকাল ৯:০০ টার দিকে অধীর চাকমার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীদের ৮ জনের একটি সশস্ত্র দল পানছড়ি হাসপাতাল এলাকায় টহল অভিযান চালায়। এতে গ্রামবাসীদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়।

গত ৪ আগস্ট ২০২১ বিকাল ৩:০০ টার দিকে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীরা পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের কার্বারিদের জীবতলী চেয়ারম্যান পাড়ায় অবস্থিত তাদের আস্তানায় ডেকে নিয়ে যায়। এসময় সন্ত্রাসীরা কার্বারিদের হুমকি দিয়ে বলে যে, ‘জেএসএস এর লোকেরা আমাদের আস্তানার দিকে কেন আসে? আমরা তো নিরিবিলিভাবে রয়েছি। পরবর্তীতে কোন অঘটন ঘটলে সেনাবাহিনীর আসবে এবং গ্রামের লোকজন ক্ষতি হতে পারে।’ ব্যাপারটি তাদের কম্যান্ডার প্রবেশ চাকমা বলেছে বলে সন্ত্রাসীরা জানায়। এসময় সন্ত্রাসীরা গ্রামের লোকেরা যাতে সন্ধ্যা ৭:০০ টা হতে ভোর ৬:০০ টা পর্যন্ত কোনো প্রকার ঘোরাফেরা না করে তা জানিয়ে দেয়ার জন্য কার্বারিদের নির্দেশ দেয়।

গত ৫ আগস্ট ২০২১ রাত আনুমানিক ৮:০০ টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল অগইয়াছড়ি গ্রামে টহল অভিযানে যায় এবং গ্রামবাসীদের নিকট বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর গত ৬ আগস্ট ২০২১ বিকাল ৫:০০ টার দিকে গবঘোনা সেনা ক্যাম্প হতে ১৫-২০ জনের একটি সেনাদল পানছড়ি গ্রামে টহল অভিযানে যায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেনাবাহিনী সেখানে অবস্থান করছিল বলে জানা যায়।

সেনাবাহিনীর এই টহল অভিযান ও জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, সেনাবাহিনীর নাকের ডগায়ই তো আসল সন্ত্রাসী ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এর সশস্ত্র সদস্যরা অবস্থান করছে এবং সেনাবাহিনীর পাশাপাশি এসব সন্ত্রাসীরাও গ্রামে টহল অভিযান পরিচালনা করছে, অথচ সেনাবাহিনী সাধারণ গ্রামের মানুষের কাছে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এটা জনগণকে হয়রানি ও নিপীড়ন ছাড়া আর কিছু নয়।