ব্যবসায়িক কোম্পানিগুলো দক্ষিণ এশিয়ার আদিবাসীদের মানবাধিকারকে প্রভাবিত করছে

0
255

হিল ভয়েস, ২১ মার্চ ২০২৩, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ব্যবসায়িক কোম্পানিগুলো দক্ষিণ এশিয়ার আদিবাসীদের মানবাধিকারকে প্রভাবিত করছে বলে সাউথ এশিয়ান ফোরামের আলোচনায় অভিমত ব্যক্ত করেছেন আদিবাসী অধিকার কর্মীরা।

গতকাল সোমবার (২০ মার্চ) থেকে নেপালের কাঠমন্ডুতে শুরু হয়েছে ‘ব্যবসা ও মানবাধিকার’ সম্পর্কিত জাতিসংঘের চতুর্থ দক্ষিণ এশিয়া ফোরামের আয়োজন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, ভুটান, আফগানিস্তান থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ উক্ত ফোরামে বিভিন্ন সেশনে মিলিত হয়েছেন।

গতবছর এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। এবারের আয়োজনে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচী ইউএনডিপি, আইএলও সহ এশিয়া অঞ্চলে কাজ করা বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, সরকারী প্রতিনিধি, মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, আদিবাসী প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সেশনে অংশ নিচ্ছেন।

গতকাল কাঠমান্ডুর হায়াত রিজেন্সি হোটেলে অনুষ্ঠিত হওয়া এই ফোরামের উক্ত দিনের শেষ সেশনটি ছিল দক্ষিণ এশিয়ার আদিবাসীদের উপর। মূলত ব্যবসায়িক কোম্পানিগুলো কীভাবে এই অঞ্চলের আদিবাসীদের মানবাধিকারকে প্রভাবিত করছে তা নিয়ে আদিবাসীদের অভিজ্ঞতাগুলো উঠে এসেছে উক্ত সেশনে।

উক্তসেশনে এশিয়া ইন্ডিজিনাস পিপলস্ প্যাক্ট (এআইপিপি)-এর সাবেক কার্যকরী সদস্য জগৎ বারামের পরিচালনায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এআইপিপির প্রোগ্রাম অফিসার ফ্রেডরিক উইলসন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য ও বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরা, নেপালের আদিবাসী আইনজীবি দুর্গামনি রায়, জাতিসংঘের ব্যবসা ও মানবাধিকার বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের চেয়ারম্যান পিছামন ইপাংটন, ভারতের ঝাড়খন্ডের আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সভাপতি এলিনা হোরো প্রমুখ।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আদিবাসীরা ব্যবসায়িক নানা কোম্পানি দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন। অবাধে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। অতি সম্প্রতি আমরা দেখেছি পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম প্রান্তিক জেলা বান্দরবানের লামা উপজেলায় ম্রো এবং ত্রিপুরা আদিবাসীদের জুম ভূমিতে আগুন দিয়েছে লামা রাবার কোম্পানি। কোম্পানির লোকজন কর্তৃক বারংবার সেখানকার আদিবাসীদের বাড়িঘরে আগুন দেয়া হচ্ছে এবং তাদের কলা গাছ কর্তন করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করবো কোম্পানিগুলো আদিবাসী অঞ্চলগুলোতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে যেয়ে যেন ‘স্বাধীন ও পূর্ব সম্মতি’র বিষযটি মেনে চলে। কোম্পানিগুলোকে ‘মুনাফার চাইতে মানুষ’ এর উপর জোর দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া মানবাধিকার সুরক্ষিত না হওয়ায় সমতল অঞ্চল থেকে সান্তাল, খাসি ও মুন্ডা আদিবাসীরা নীরবে দেশান্তরী হচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এআইপিপি’র প্রোগ্রাম অফিসার ফ্রেডরিক উইলসন বলেন, এআইপিপি বিগত ২০১৯-২০২২ সালের মধ্যে এশিয়া অঞ্চলের আদিবাসীদের ৫৫০ টি মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা রেকর্ড করেছে। আমরা দেখেছি এসব ঘটনাগুলো করোনাকালীন সময়েও ঘটেই চলছিল। বিভিন্ন আদিবাসী অঞ্চলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম যেগুলো আদিবাসীদের মানবাধিকারকে আক্রান্ত করছে সেগুলোর বিরুদ্ধে আদিবাসী মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মীরা কাজ করার সময় নানা ধরণের মানবাধিকার লংঘনের শিকার হচ্ছেন। অবাধে তারা গ্রেফতার হচ্ছেন, নারীদেরকে ধর্ষণ, নিপীড়ন, জোরপূর্বক গুম, অপহরণসহ নানা ধরণের মানবাধিকার লংঘনের শিকার হচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, আদিবাসী অঞ্চলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কোম্পানি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপ্রত্রের ‘স্বাধীন ও পূর্ব সম্মতি’র বিষয়টি মেনে চলার আহ্বানও জানান তিনি। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলোকে আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের দাবি করেন তিনি।

উক্ত সেশনের আলোচনার সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি ও কমিশনের সদস্য কংজরী চৌধুরী, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, এ্যাকশন এইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর, জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচী বাংলাদেশ এর বিজনেস ও হিউম্যান রাইটস বিশেষজ্ঞ মেহেরুনা ইসলাম চৌধুরী, জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচী বাংলাদেশ এর গণতন্ত্র ও সরকার বিষয়ক কার্যক্রমের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক, নেপালের নেওয়া আদিবাসী নারী নেত্রী বিদিয়া শ্রেষ্ঠা, আইপিনিউজ বাংলাদেশ-এর উপ-সম্পাদক সতেজ চাকমা, ভারতের অরুণাচল প্রদেশের আদিবাসী প্রতিনিধি ভানু তাতাক, ভারতের মিজোরামের আদিবাসী প্রতিনিধি দিলীপ চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া উক্ত সেশনে নেপাল, ভারত, শ্রীলংকা, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক আদিবাসী প্রতিনিধি অংশগ্রহন করেন।