বিলাইছড়ি সেনা জোন কর্তৃক জায়গা ছেড়ে দেয়া ও বিক্রয়ের জন্য জুম্মদের উপর চাপ প্রয়োগ

0
2003

হিল ভয়েস, ২৫ জুলাই ২০২০, রাঙ্গামাটি: সম্প্রতি রাঙ্গামাটি জেলাধীন বিলাইছড়ি উপজেলা সদরস্থ বিলাইছড়ি সেনা জোন কর্তৃক ক্যাম্প সম্প্রসারণ ও রাস্তা নির্মাণের লক্ষে জায়গা ছেড়ে দিতে ও বিক্রয় করতে পার্শ্ববর্তী জুম্ম অধিবাসীদের উপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সেনাবাহিনীর এরূপ জায়গা ছেড়ে দেয়া ও বিক্রয় করার জন্য চাপ প্রয়োগে সংশ্লিষ্ট জুম্মদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। এমনকি জুম্মরা সেনাবাহিনীর এই তৎপরতাকে তাদের ভূমি বেদখল ও তাদেরকে স্বভূমি থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বলেও অভিযোগ করছেন।

উল্লেখ্য, সেনাবাহিনী যেসমস্ত জায়গা ছেড়ে দিতে ও বিক্রয় করতে স্থানীয় জুম্মদের চাপ প্রয়োগ করছে, তাতে জুম্মদের বসতবাড়ি যেমনি রয়েছে, তেমনি রয়েছে শুকর পালনের স্থান ও জলেভাসা জমি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ জুলাই ২০২০ বিলাইছড়ি সেনা জোনের একদল সদস্য ১নং বিলাইছড়ি সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে বসবাসকারী মি: আলোক জ্যোতি চাকমার (৪০) বাড়িতে গিয়ে আলোক জ্যোতি চাকমাকে অবিলম্বে তার বসতভিটা সংলগ্ন শুকর পালনের জায়গাটি পরিষ্কার করতে বলে। সেনাসদস্যরা এও বলেন যে, তাদের সেনা জোনে যাতায়াতের জন্য পাকা সেতু নির্মাণকল্পে জায়গাটি তাদের প্রয়োজন হবে এবং ছেড়ে দিতে হবে।

উল্লেখ্য, উক্ত জায়গাটির মূল মালিক ভারতী রাণী দেওয়ান। তবে বর্তমানে ঐ জায়গায় বসবাস ও দেখাশোনা করছেন ভারতী রাণী দেওয়ানের বোন মিনারাণী চাকমার জ্যেষ্ঠ পুত্র আলোক জ্যোতি চাকমা।

এরপর গত ১৬ জুলাই ২০২০ সেনাবাহিনী আলোক জ্যোতি চাকমা ও তার চাচাতো ভাই উত্তম চাকমাকে (৪৬) বিলাইছড়ি সেনা জোনে ডেকে পাঠায়। আলোক জ্যোতি চাকমা ও উত্তম চাকমা বিলাইছড়ি সেনা জোনে গেলে, সেনা সদস্যরা এবার তাদের রাস্তা নির্মাণের লক্ষে আলোক জ্যোতি চাকমা ও উত্তম চাকমাকে তাদের জায়গা বিক্রয় করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আলোক জ্যোতি চাকমা ও উত্তম চাকমা এই প্রস্তাবে রাজী হয়নি বলে জানা যায়।

এছাড়া, সেনাবাহিনী তাদের ক্যাম্প সম্প্রসারণের জন্য বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান মি: অমৃতসেন তঞ্চঙ্গ্যা ও তার আত্মীয়দেরকেও বিলাইছড়ি সেনা জোনে ডেকে তাদের জায়গা বিক্রয়ের জন্য প্রস্তাব দেয় বলে জানা গেছে।

সেনাবাহিনী কর্তৃক আরও যাদের জায়গা বিক্রি করতে চাপ দেয়া হয়েছে, তারা হলেন- ১নং বিলাইছড়ি ইউনিয়নের সচিব মি: অনীল কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা (৫২), পীং-মৃত হীরোত মনি তঞ্চঙ্গ্যা; মি: শান্তিময় চাকমা ওরফে ডুঙচাই (৪৮), পীং-মৃত গৌকুল চন্দ্র চাকমা; মি: বিরিক কুমার তঞ্চঙ্গ্যা (৪২), পীং-রাঙাবিচা তঞ্চঙ্গ্যা; মিসেস বসুন্ধরা চাকমা (৪৫), স্বামী-রবীন্দ্রনাথ তঞ্চঙ্গ্যা; মিসেস রাঙাবি চাকমা (৩০); জ্যোতিপাল ভিক্ষু (২৭), পীং-বরুন চাকমা (কার্বারী); মি: শান্ত তঞ্চঙ্গ্যা (৩৫)। উক্ত জায়গায় মালিকদের বসতবাড়ি ও শুকর পালনের খামার রয়েছে।

জানা গেছে, সেনাবাহিনী কর্তৃক এভাবে জায়গা ছেড়ে দেয়া ও বিক্রয় করার প্রস্তাবে স্থানীয় সংশ্লিষ্ট জুম্মদের মধ্যে গভীর অনিশ্চয়তা, উৎকন্ঠা ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা না পারছেন গ্রহণ করতে, না পারছেন কাউকে জানাতে। তাছাড়া সাম্প্রতিককালে পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস দমনের নামে এবং কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস মোকাবেলার অজুহাতে পাহাড়ে সেনা কর্তৃত্ব ও তৎপরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ মুখ খুলে সত্য কথা বলতেও ভয় পাচ্ছে। তাই গ্রামবাসীরা এ নিয়ে গভীর উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।