বাঘাইছড়িতে প্রত্যাগত জেএসএস সদস্যদের আলোচনা সভা: পুনর্বাসন, মামলা প্রত্যাহার ও নিরাপত্তার দাবিতে স্মারকলিপি

0
311

হিল ভয়েস, ১ জুলাই ২০২৩, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) প্রত্যাগত সদসদের যথাযথ পুনর্বাসন, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিরাপত্তার দাবিতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সভায় উক্ত দাবিতে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের নিকট স্মারকলিপি প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

আজ (১ জুলাই ২০২৩) সকাল ৮:৩০ টায় বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইছড়ি গ্রামে উক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাবেক প্রত্যাগত সদস্য সুমতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় জনসংহতি সমিতির বাঘাইছড়ি উপজেলার ২৮৮ জন প্রত্যাগত সদস্য অংশগ্রহণ করেন বলে সংশিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তির পরপরই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী অস্ত্র জমাদানের পর স্ব স্ব এলাকায় স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তন করলেও এখনো সেই কাঙ্খিত শান্তি আমাদের মেলেনি। ন্যূনতম যে আশা-ভরসা নিয়ে আমরা একসময় সরকারের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছিলাম সেই আশা শুধুমাত্র আশা হয়েই থেকে গেলো।

বক্তারা আরও বলেন, আজকে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে সেই দীর্ঘ ২৫ বছর আগে। কিন্তু সেই দীর্ঘ ২৫ বছরেও চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহসহ এখনো দুই-তৃতীয়াংশ ধারা হয় আংশিক বাস্তবায়িত নয়তো সম্পূর্ণ অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে। আজকে আমরা যারা অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছি তাদের মধ্যে জরিপ চালালে দেখা যাবে জনসংহতি সমিতির বিভিন্ন স্তরের অসংখ্য নেতাকর্মীদের সুপরিকল্পিতভাবে অবৈধ গ্রেফতার, বিচার-বহির্ভুত হত্যা, অস্ত্র গুঁজে দিয়ে আটক, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে প্রেরণ করা হয়েছে নতুবা অনেক নেতাকর্মী মিথ্যা মামলা-হামলার ভয়ে ফেরারি জীবন কাটাচ্ছে।

বক্তারা গভীর হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, আমরা তো এমন জীবন চাইনি! আমরা চেয়েছিলাম একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, নিরাপদ জীবন। যেখানে আমরা সমাজের স্বাভাবিক স্রোতে মিশে গিয়ে চলতে পারবো, ফিরতে পারবো, সর্বোপরি অন্য দশজন মানুষের মত পরিবার-পরিজন নিয়ে বাকী জীবনটা সুখে শান্তিতে কাটিয়ে দিতে পারবো। তাইতো আমরা সেদিন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বসবাস করার সকল শর্ত মেনে নিয়েই চুক্তিটি করেছিলাম। কিন্তু আজকে চুক্তির ২৫ বছরে এসে কেন আমাদের এভাবে ঘর-বাড়ি ছেড়ে মানবেতর পরিবেশে জীবন কাটাতে হবে!

বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যাগত জনসংহতি সমিতির সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গের যথাযথ ও সম্মানজনক পুর্নবাসন, মিথ্যা ও সাজানো মামলা প্রত্যাহার এবং জনসংহতি সমিতির প্রত্যাগত সকল সদস্যদের নিরাপত্তা বিধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

আলোচনা সভা থেকে একইদিন একই দাবিতে প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর বরাবরে স্মারকলিপি এবং আহ্বায়ক, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি; মন্ত্রী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়; চেয়ারম্যান, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ; চেয়ারম্যান, ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পূর্ণবাসন বিষয়ক টাস্কফোর্স এবং সভাপতি/সম্পাদক, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এর বরাবরে স্মারকলিপির অনুলিপি প্রেরণ করা হবে জানানো হয়।