বরকলে সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করা হলেও ক্যাম্পের জায়গা ফেরত দেয়া হয়নি মালিককে

0
356
ছবি: প্রতীকী

হিল ভয়েস, ২৮ মার্চ ২০২৩, রাঙামাটি: রাঙামাটি জেলাধীন বরকল উপজেলার আইমাছড়ার মদনপাড়ায় স্থানীয় আদিবাসী জুম্মদের জায়গা বেদখল করে নির্মিত নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প থেকে সকল সেনা, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করা হলেও ক্যাম্পের জায়গাটি মূল মালিকদের ফেরত দেয়া হয়নি বলে খবর পাওয়া গেছে।

উপরন্তু স্থানীয় হেডম্যানকে ডেকে উক্ত পরিত্যক্ত ক্যাম্পের কোনো ঘরবাড়ি যাতে ভেঙে ফেলা না হয় তার নির্দেশ দিয়ে যায় সেনাবাহিনী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ২৭ মার্চ ২০২৩ বেলা আনুমানিক ২ টার দিকে উক্ত ক্যাম্পের সকল সেনা, বিজিবি ও পুলিশ সদস্য তাদের অস্ত্রশস্ত্র ও জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্প ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী জুরাছড়ি উপজেলার সেনা জোন হেডকোয়ার্টার্সে চলে যায়। এসময় তারা স্থানীয় ২০ গ্রামবাসীকেও শ্রমিক হিসেবে নিয়ে যায় বলে জানা যায়।

ক্যাম্প ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়, ক্যাম্প কম্যান্ডার সুবেদার মোঃ মোমিন বরকলের ১৬৪নং সাইচাল মৌজার হেডম্যান সেপম চাকমাকে ডেকে নির্দেশ দিয়ে যান যে, গ্রামের কেউ ক্যাম্পের পরিত্যক্ত বাড়িঘরগুলো ভেঙে ফেলতে পারবে না। ক্যাম্প কম্যান্ডার সুবেদার মোঃ মোমিন আরও বলেন যে, তারা (সেনাবাহিনী) প্রতি এক বা দুই মাস পরপর সেখানে আসবেন।

উল্লেখ্য, পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করার পর ক্যাম্পের জায়গা সংশ্লিষ্ট মালিককে বা পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর করার বিধান থাকলেও সেনাবাহিনী ক্যাম্পটি প্রত্যাহারের বিষয়ে জায়গার মালিকদের সাথে কোনো আলোচনা করেনি এবং ক্যাম্পের জায়গা এর মালিকদের হস্তান্তর করেনি।

জানা গেছে, ২০১৯ সালে জুরাছড়ি উপজেলার সেনাবাহিনীর একটি দল কিছু পুলিশ ও বিজিবি সদস্য সাথে নিয়ে ১৬৪নং সাইচাল মৌজার আইমাছড়া ইউনিয়নের মদনপাড়ার শিমেগাছ চুগ নামক জায়গায় মালিকদের সম্মতি ব্যতিরেকে ও জোরপূর্বক উক্ত নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করে। উক্ত জায়গার মালিক শান্তশীল চাকমা, পীং-রসিক মোহন চাকমা এবং অনিল চন্দ্র চাকমা, পীং-অজ্ঞাত বলে জানা গেছে।

অপরদিকে, রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ির শিজকমুখ সর্বজনীন বৌদ্ধ বিহারের জায়গা বেদখল করে নির্মিত সেনা ক্যাম্প থেকে সম্প্রতি সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার করা হলেও পরে বৌদ্ধ বিহারের ঐ জায়গা অবৈধভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা দিয়ে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে।

সাইনবোর্ডে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত ক্যাম্প, বিনা অনুমাতিতে প্রবেশ নিষেধ’ এবং ‘ক্যাম্পে অবস্থিত সরকারি সম্পদের কোন প্রকার ক্ষতিসাধন করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ’।

পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের অব্যবহিত পওে ৫৪৫টি অস্থায়ী ক্যাম্পের মধ্যে ১৯৯৮-২০০১ সালে দুই দফায় ৬৬টি অস্থায়ী ক্যাম্প এবং ২০০৯-২০১৩ সালের আরো ৩৫টি অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে এখনো প্রায় সাড়ে চারশত অস্থায়ী ক্যাম্প পার্বত্য চট্টগ্রামে বলবৎ রয়েছে।

এছাড়া ইতিমধ্যে প্রত্যাহৃত অনেক ক্যাম্প পুনর্বহাল করা হয়েছে। কেবল বিগত কোভিড মহামারীর সময় ২০টি ক্যাম্প পুন:স্থাপন করা হয়েছিল।

এছাড়া তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার পার্বত্য চুক্তিকে লঙ্ঘন করে ২০০১ সালে ‘অপারেশন উত্তরণ’ নামে একপ্রকার সেনাশাসন জারি করে। ফলে চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামের বেসামরিকীকরণের পরিবর্তে আরো জোরালোভাবে সেনাশাসন জেকে বসে। ‘অপারেশন উত্তরণ’ এর বদৌলতে সেনাবাহিনী সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, বিচার ব্যবস্থা, উন্নয়ন কার্যক্রমসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল বিষয় কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে।