পাহাড়ে হাম উপদ্রুত এলাকায় মানবিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে আদিবাসী ফোরাম ও কাপেং ফাউন্ডেশন

0
952

হিল ভয়েস, ২৮ মার্চ ২০২০, ঢাকা:  পার্বত্য চট্টগ্রামে হাম উপদ্রুত এলাকায় জরুরী মানবিক সহায়তার উদ্যোগ নিতে সরকারি কর্তৃপক্ষ ও বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও কাপেং ফাউন্ডেশন।

২৮ মার্চ ২০২০ তারিখে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও কাপেং ফাউন্ডেশনের পক্ষে হিরণ মিত্র চাকমা কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দুটি আদিবাসী অধিকার সংগঠন উল্লেখ করে যে, দেশে করোনা (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক সময়ে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়ন এবং বান্দরবন জেলার লামা উপজেলার লামা ইউনিয়নে হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় ‘বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম’ ও ‘কাপেং ফাউন্ডেশন’ উদ্বেগ প্রকাশ করছে। করোনা মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের তৎপরতা ও যেভাবে সকলের মনোযোগ পেয়েছে নিঃসন্দেহে তা ভালো ফলাফল এনে দেবে। কিন্তু করোনার ডামাঢোলে পার্বত্য অঞ্চলে হামের প্রাদুর্ভাব কর্তৃপক্ষের চোখের আড়ালে থাকবে কিনা তাও বিবেচনায় নিতে হবে। সেজন্য এটিকে যথেষ্ট আমলে নিয়ে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সুনজর এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিরবিচ্ছিন্ন চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের বিনীত অনুরোধ জানিয়েছে আদিবাসীদের জাতীয় পর্যায়ের সংগঠন দুটি।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, এ প্রাকৃতিক মহামারি প্রায় মাস খানেক পূর্বেই দেখা দেয় এবং কমপক্ষে ৩০০ জন শিশু আক্রান্ত হয় ও ৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। এমতাবস্থায় সেখানকার অধিবাসীরা যথেষ্ট উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিন যাপন করছে ও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এটি নিঃসন্দেহে সে অঞ্চলের নাগরিক সুবিধা ও স্বাস্থ্য সেবার করুন অবস্থাকে প্রতিফলিত করে। প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য যে, বান্দরবন জেলার রুমা উপজেলায়ও হামে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয় যে, সাজেকে মোট ৬টি গ্রামের প্রায় ২৫০ জন হামে আক্রান্ত হয় এবং তাদের অধিকাংশই শিশু। তুইছুই মৌজার অরুণপাড়া সবচাইতে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। ২০ দিনের ব্যবধানে ৬ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত অন্যান্য গ্রামগুলো হচ্ছে- লংথিয়ান পাড়া, কমলাপুর চাকমা পাড়া, নিউথাং/নতুনপাড়া, হাইচ্যাপাড়া ইত্যাদি। জানা যায়, কমপক্ষে ১০০ জন শিশু এবং ৭-৮ বছরের বয়সিরা বেশি সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তাদের গ্রামে শিশুদের এযাবত কোন টিকাই প্রদান করা হয়নি। সরকারের কোন স্বাস্থ্য সেবাও সেখানে পৌঁছায় নি। কোন স্বাস্থ্যকর্মী তাদের এলাকায় পা দেয়নি। উল্লেখ্য যে, সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা এবং সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি এ গ্রামবাসীদের বিশেষ করে শিশুদের পুষ্টিহীন ও রোগাগ্রস্ত করে রেখেছে।

অন্যদিকে বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামা উপজেলার লামা ইউনিয়নে দুর্গম এলাকায়ও প্রায় একই সময়ে হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ম্রো অধ্যুষিত লাল্যাপাড়ায় ৪ মাসের এক ম্রো শিশু মারা গেছে এবং ৪২ জন আক্রান্ত হয়েছে যাদের মধ্যে কমপক্ষে ৩৩ জন শিশু। জানা যায়, গত ১৬ মার্চ তাদের মধ্যে ৩১ জন শিশু ও ২ জন প্রাপ্ত বয়স্ক রোগীকে ট্রাকে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। প্রথম প্রথম স্বাস্থ্যকর্মীরা এটিকে অজ্ঞাত রোগ হিসেবে চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, লাল্যাপাড়াসহ বান্দরবনের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারি স্বাস্থসেবা পৌঁছায় নি।

আদিবাসী সংগঠন দুটি আরো উল্লেখ করে যে, সাজেকে উপদ্রুত এলাকায় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। হামের টিকা ও ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হচ্ছে। কিন্তু কোন কোন রোগী এমন মুমুর্ষু যে তাদেরকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগীতায় হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসতে হয়েছে। অন্যদিকে লামার উপদ্রুত এলাকায় চিকিৎসক দল গিয়েছে কিনা সে তথ্য পাওয়া যায়নি।

আদিবাসী ফোরাম ও কাপেং মনে করি, সরকারের ঘরে ঘরে টিকাদান কর্মসূচী ও স্বাস্থ্যসেবা জনগনের মাঝে পৌঁছালে এরকম প্রাদুর্ভাব সৃষ্টি হতো না। দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করলে এতগুলো প্রাণ ঝরে যেতো না। একবিংশ শতাব্দীতে হামে মৃত্যুবরণ কল্পনাই করা যায় না।

এমতাবস্থায় সংগঠন দুটি আহ্বান জানিয়েছে যে, আক্রান্ত রোগীদের বাঁচাতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আরো বেশি এগিয়ে আসা জরুরী। তাদের স্বাস্থ্য সেবা ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেও হাত বাড়ানো দরকার। করোনার সংকটে উক্ত মানবিক সংকটটি যেন হারিয়ে না যায়। করোনার পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে হামের এ প্রাদুর্ভাবটি প্রশাসনের সুদৃষ্টি পাক এবং আক্রান্ত রোগীরা সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।

আদিবাসী ফোরাম ও কাপেং-এর দাবি মধ্যে ছিল- মেডিকেল বোর্ড গঠন করে উপদ্রুত এলাকাগুলোতে সার্বক্ষণিক, নিরবিচ্ছিন্ন ও পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা; পাহাড়ে হাম উপদ্রুত এলাকায় জরুরী মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা; আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে সুচিকিৎসা ব্যবস্থা করা; এবং ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা।