পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নেই দেশে গণতন্ত্র ও সকল নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করবে: চট্টগ্রামে শ্রমিক ফোরামের অনুষ্ঠানে শরীফ চৌহান

0
187

হিল ভয়েস, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, চট্টগ্রাম: গতকাল ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ চট্টগ্রামের হোটেল সৈকত মিলনায়তনে “আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সামিল হোন” এ স্লোগান নিয়ে পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের উদ্যোগে মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র ৮৪ তম জন্মবার্ষিকী, বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনে মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র ৮৪ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সভাপতি অমর কৃষ্ণ চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জগৎজ্যোতি চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ এবং প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঐক্য ন্যাপ চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অজিত দাশ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সীতাকুণ্ড উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাঞ্চন ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার শিক্ষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সুকর্না চাকমা প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শরীফ চৌহান বলেন, “এম এন লারমা সাংবিধানিক রাজনীতির ধারায় আদিবাসী গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করেছিলেন। বাংলাদেশে সাংবিধানিক রাজনীতির এক বিশেষ সংকটকালে তিনি সশস্ত্র ধারায় অধিকার আদায়ের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছিলেন। বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে জীবন হারালেও এম এন লারমার সংগ্রামের মর্ম নিঃশেষ হয়ে যায় নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম সংকট শুধুমাত্র পাহাড়ের নয় বরং সমগ্র দেশের সংকট। এই সংকট সমাধানে সকল প্রগতিশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এম এন লারমার সংগ্রাম সফল হবে। বাংলাদেশের অখণ্ডতায় সাংবিধানিকভাবে পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নেই দেশে গণতন্ত্র ও সকল নাগরিকদের অধিকার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে।”

অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ বলেন, “এ দেশে সহজ পথে নিপীড়িত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না। শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়নে সংখ্যালঘুরা দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। আমরা যারা বঞ্চিত হচ্ছি, তাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলে দাবি আদায় করতে হবে। যেখানেই থাকেন না কেন এম এন লারমার প্রদর্শিত পথে আন্দোলন সংগ্রাম করে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে ।”

অজিত দাশ বলেন, “এম এন লারমা সমাজের অবহেলিত নিপীড়িত মানুষের পক্ষ হয়ে কথা বলে গেছেন। অধিকার কেউ কাউকে দেয় না, অধিকার আদায় করে নিতে হবে। জুম্ম সমাজের বর্তমান প্রজন্মকে অবশ্যই দায়িত্ব নিয়ে এম এন লারমা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে।”

কাঞ্চন ত্রিপুরা বলেন, “আদিবাসীদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে এম এন লারমার শিক্ষা গ্রহণ করে আন্দোলন করতে হবে।”

সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “এম এন লারমা ঘুমিয়ে থাকা জুম্ম জাতিকে জাগিয়ে তুলেছেন এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সামিল করেছেন। এম এন লারমার নীতি আদর্শকে জুম্ম ছাত্র ও যুবকদের ধারণ করতে হবে। অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁর দেখিয়ে যাওয়া পথে ছাত্র ও যুবকদের এগিয়ে চলার বিকল্প নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে জুম্ম তরুণ প্রজন্মকে অধিকতর সংগ্রামে সামিল হতে হবে।”

সুকর্না চাকমা বলেন, “অধিকার বঞ্চিত জুম্ম জনগণের চোখে স্বপ্ন দেখিয়েছেন এম এন লারমা। তাঁর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগ্রাম গড়ে উঠেছিল। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে কল্পনা চাকমার মতো নারী সমাজকে সামিল হতে হবে। নিপীড়িত মানুষের মুক্তি ছাড়া আলাদাভাবে নারীমুক্তি সম্ভব নয়।”

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অধিবেশনে পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের অধীনস্থ থানা ও ইউনিট কমিটির বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য এস জে চাকমা, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সভাপতি অমর কৃঞ্চ চাকমা, সহ-সভাপতি অনিল বিকাশ চাকমা, সহ-সভাপতি ধীষান তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপির চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক বিনিময় চাকমা, পিসিপি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক অন্তর চাকমা, আদিবাসী মহিলা ফোরামের সভাপতি সোনাবি চাকমা প্রমুখ।

সম্মেলনে বক্তারা বলেন, “বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম এক অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬ বছর অতিক্রমের পথে হলেও চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠায় পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আরো সংগ্রামী এবং ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের অস্তিত্ব রক্ষায় মহান নেতার আদর্শিক বিপ্লবী চেতনাকে ধারণ করে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।”

সম্মেলন ও কাউন্সিলে পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের ১০টি থানা ও ইউনিট কমিটি এবং আদিবাসী মহিলা ফোরামের কমিটি গঠন করা হয়। নবগঠিত কমিটি সমূহকে শপথ বাক্য পাঠ করান পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জগৎজ্যোতি চাকমা।

কাউন্সিল শেষে হেংগরং সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।