দীঘিনালায় আরও অসুস্থ ১৮ জন হাসপাতালে, ‘হামের লক্ষণ’ হলেও বলা হচ্ছে ‘অজ্ঞাত রোগ’

0
615

হিল ভয়েস, ৯ এপ্রিল ২০২০, খাগড়াছড়ি:  খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাধীন দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের আদিবাসী ত্রিপুরা অধ্যুষিত গ্রাম রথিচন্দ্র কার্বারি পাড়া থেকে আরও ১৫ শিশুসহ ১৮ জন আদিবাসী জুম্ম অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ৮ এপ্রিল ২০২০ তারিখ গুরুতর অবস্থায় তাদেরকে দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

কাপেং ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, এ নিয়ে হামে আক্রান্ত হয়ে গত ফেব্রুয়ারির শেষান্ত থেকে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ির সাজেক, বান্দরবান জেলার লামা, রুমা, থানচি ও বান্দরবান সদর উপজেলা এবং খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা ও পানছড়ি উপজেলায় প্রায় ৯০ জন শিশু হাসপাতালে ভর্তি হলো। আর হাম আক্রান্ত লোকের সংখ্যা দাঁড়ালো ৭ উপজেলার ৩৭টি গ্রামের প্রায় ৬৫৯ জন, যাদের মধ্যে ৪৫৬ জন হলো শিশু। আর নিহত হয়েছে ১০ জন শিশু।

স্থানীয় সূত্র জানায় যে, গত কয়েকদিন ধরে মেরুং ইউনিয়নের রথিচন্দ্র কার্বারি পাড়ার উল্লেখিত ১৮ জন অসুস্থতায় ভুগছিলেন। জানা গেছে, শিশুদের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত দূর্বল। তারা চরম পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।
এদিকে ডাক্তাররা শিশুদের এই রোগের লক্ষণকে ‘হামের লক্ষণ’ হিসেবে স্বীকার করলেও তারা নিশ্চিতভাবে তা বলতে পারছেন না। বরং কখনো ‘অজ্ঞাত রোগ’ বলেই উল্লেখ করছেন। ফলে এনিয়ে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্কও বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তনয় তালুকদার বলেন, ‘অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হওয়া ১৫ শিশুকে বুধবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে শারীরিক অবস্থা দেখে মনে হয়েছে তারা হামে আক্রান্ত। তবে নমুনা পরীক্ষা করার আগে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। আগের শিশুদের মধ্যে ৫ জনের নমুনা ৩১ মার্চ সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে চলমান লকডাউনের কারণে তা ঢাকায় পাঠানো সম্ভব হয়নি।’
তবে রোগের লক্ষণ দেখে অভিজ্ঞ স্থানীয়রা এই রোগকে হাম বলেই মনে করছেন।

উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ ২০২০ রথিচন্দ্র কার্বারি পাড়ার ধ্বনিকা ত্রিপুরা (৯) নামে এক শিশু একই রোগের লক্ষণ নিয়ে মারা যায় এবং প্রায় অর্ধশতাধিক শিশু অসুস্থ হয়। এরপর ২৯ মার্চ ও ৩১ মার্চ আরও ২৫ শিশুকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব রোগকে কখনো ‘অজ্ঞাত রোগ’, আবার কখনো ‘আক্রান্ত পাহাড়িদের মধ্যে কুসংস্কার বিদ্যমান ও চিকিৎসা নিতে অনীহাবোধ’ ইত্যাদি বলে জুম্ম অধ্যুষিত প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা না পৌঁছার প্রকৃত চিত্রকে আড়াল করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উল্লেখ করেছেন।