জুম্ম স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চাকরিতে বহাল তবিয়তে

0
285

হিল ভয়েস, ২২ জুলাই ২০২৩, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন লংগদু উপজেলার আটরকছড়া ইউনিয়নের আরএস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রহিম(৪৬) একই স্কুলের এক জুম্ম ছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত আসামী হয়েও সম্প্রতি আদালত থেকে তিন মাসের জন্য জামিন পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, সরকারি আইনের বিধিমালা লংঘন করে বর্তমানে তিনি বহাল তবিয়তে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বও পালন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, লংগদু উপজেলার ১নং আটারকছড়া ইউনিয়নের করল্যাছড়ি আরএস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রহিম(৪৬) নিজ বিদ্যালয়ের এক জুম্ম স্কুল ছাত্রীকে (১৬) ধর্ষণের দায়ে আসামি হন ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে। গত বছর ২৯ নভেম্বর ২০২২ সালে উক্ত মামলায় আব্দুর রহিমকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন রাঙ্গামাটির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। আদালত একইসঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন বছরের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেয়।

মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ সকাল ১০টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বাড়ির ছাগলের খোঁজে বের হন। অনেক খোঁজাখুজির পর না পেয়ে বাড়ি ফেরার পথে করল্যাছড়ি আরএস উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রহিমের সাথে দেখা হয়। প্রধান শিক্ষক ভুক্তভোগীকে লেবু নিয়ে যেতে বলে স্কুলের দিকে ডেকে নিয়ে যায়। ভুক্তভোগী কাছে গেলে প্রধান শিক্ষক ছাত্রীর হাত ধরে জোর করে স্কুল হোস্টেলে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এসময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বাঁচাও, বাঁচাও চিৎকার করলেও হোস্টেলের দরজা জানালা বন্ধ থাকায় সে চিৎকার কারো কাছে পৌঁছায়নি। ধর্ষণের পর প্রধান শিক্ষক ঘটনাটি কাউকে না জানানোর জন্য বলেন এবং প্রকাশ করলে মেরে ফেলার হুমকি দেন। ভুক্তভোগী তার মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে বিচার আবেদন করেন। চেয়ারম্যান কার্যালয় কর্তৃক উপযুক্ত সুরাহা না পেয়ে ৫ অক্টোবর স্কুলছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে লংগদু থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয।

এ মামলায় ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রহিমকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন বছরের সশ্রম কারাদন্ডের রায় দেন রাঙ্গামাটির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ ই এম ইসমাইল হোসেন।

সম্প্রতি দন্ডপ্রাপ্ত আসামী মোঃ আব্দুর রহিম ভুক্তভোগীকে দুই মাসের মধ্যে এক একর জমি লিখে দেয়ার শর্তে হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন তিন মাসের জামিন নেন। জামিন আদেশে আদালত বলেছেন, মামলার তথ্য ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষের আইনজীবীদের দাখিল করা অঙ্গীকারনামার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আব্দুর রহিমকে তিন মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিচ্ছি। জামিনের শর্ত, আপিলকারী আব্দুর রহিম জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে উপরে বর্ণিত হিসাবে(জমি হস্তান্তর করে) একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেবেন। আপিলকারী আসামি উপরোক্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করিতে ব্যর্থ হলে জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না।

উল্লেখ্য যে, সরকারি চাকরি আইনের বিধিমালা ৪২ এর (১) ধারা অনুযায়ী, কোন সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক মৃত্যুদন্ড বা এক বছর মেয়াদের অধিক মেয়াদের কারাদন্ডে দন্ডিত হলে দন্ড আরোপের রায় বা আদেশ প্রদানের তারিখ থেকে চাকরি থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত হবেন।

কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এরকম বিধান থাকা সত্বেও দন্ডপ্রাপ্ত আসামি মোঃ আব্দুর রহিম গত ২৩ জুন ২০২৩ হতে বহাল তবিয়তে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করল্যাছড়ি আর এস উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জিয়াউর রহমান সবকিছু জানা সত্বেও এবং এলাকাবাসীর বিরোধিতা সত্বেও কোন উদ্দেশ্যে একজন দন্ডপ্রাপ্ত আসামিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলেন, সেটা তাদের বোধগম্য হচ্ছে না।

তারা আরো বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এতে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন, তিনি এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ এর দায় কোনভাবে এড়াতে পারে না। এলাকাবাসী অতিদ্রুত দন্ডপ্রাপ্ত আসামি মোঃ আব্দুর রহমানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার জোর দাবি জানান।