আদিবাসী কোটা নিশ্চিতকরণ ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে বাঘাইছড়িতে পিসিপির সমাবেশ

0
262

হিল ভয়েস, ২৫ আগস্ট ২০২৩, রাঙ্গামাটি: আজ সকাল ১০ ঘটিকায় রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার উগলছড়ি মুখ (বটতলা) মাঠে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) বাঘাইছড়ি থানা শাখার উদ্যোগে এক বিশাল ছাত্র ও জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি চাকুরিতে ৫% ভাগ আদিবাসী কোটা নিশ্চিতকরণ, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকট নিরসনসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়নের দাবি নিয়ে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বাঘাইছড়ি থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক চিবরন চাকমার সঞ্চালনায় এবং পিসিপি বাঘাইছড়ি থানা শাখার সভাপতি পিয়েল চাকমার সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ডা: সুমতি রঞ্জন চাকমা, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিপন ত্রিপুরা, পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমা, কাচালং বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভদ্রসেন চাকমা, তুলাবান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জ্ঞান রঞ্জন চাকমা, ৩১ নং খেদারমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিল্টু চাকমা, শিক্ষার্থীদের অবিভাবকের পক্ষে মধুসূদন চাকমা, সুশীল সমাজের পক্ষে বক্তব্য রাখেন শান্তনা চাকমা প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি বাঘাইছড়ি থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক উদ্দীপন চাকমা।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ডা: সুমতি রঞ্জন চাকমা বলেন, অনেক আশা-আকাঙ্খা নিয়ে আমরা ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সাক্ষর করেছিলাম। কিন্তু আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সেই আশা আকাঙ্খা হতাশায় পরিণত হয়েছে। ফলে আমাদের আবার নতুন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিকল্প ভাবনা ভাবতে হচ্ছে এবং সেই বিকল্প ভাবনা সর্বশেষ কোন রূপ ধারণ করবে সেটা সময়ই বলে দেবে। তিনি অবিলম্বে রোডম্যাপ ঘোষণাপূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিপন ত্রিপুরা উপস্থিত শিক্ষার্থী সমাজের উদ্দেশ্যে বলেন, একটি জাতির সবচেয়ে অগ্রগামী, প্রগতিশীল অংশ হচ্ছে ছাত্র ও যুব সমাজ। পৃথিবীতে ছাত্র ও যুব সমাজ দ্বারা অসম্ভব নয় এমন কিছু নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম ছাত্র ও যুব সমাজকেও যুগোপযোগী চিন্তা-চেতনায় নিজেদের শাণিত ও সুসজ্জিত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ঘোষিত বৃহত্তর আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমা বলেন, জুম্ম জনগণের অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিল। আজ চুক্তির ২৫ বছর পরেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার এখনো নিশ্চিত হয়নি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাকে জেলা পরিষদে হস্তান্তর করা হলেও স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে জেলা পরিষদের নির্বাচন না হওয়ায় জেলা পরিষদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয়নি। তদুপরি পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেহাল অবস্থায় রেখে আঞ্চলিক পরিষদের সাথে কোনো আলাপ আলোচনা না করে সরকার রাঙ্গামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে। ফলে প্রকৃত শিক্ষা থেকে জুম্ম জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে।

কাচালং বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভদ্রসেন চাকমা বলেন, অনুন্নত পিছিয়ে পড়া কোনো অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর অগ্রগতির লক্ষ্যে দেশের সংবিধানে বিশেষ ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে। কাজেই দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি চাকরিতে ৫% আদিবাসী কোটা চালুর দাবিতে পিসিপির এই সমাবেশ অবশ্যই যৌক্তিকতার দাবী রাখে।