বিলাইছড়ির ফারুয়ায় সেনাবাহিনী কর্তৃক জুম্মদের গ্রামে গ্রামে হয়রানিমূলক তথ্য সংগ্রহ

0
1017

হিল ভয়েস, ৩০ নভেম্বর ২০২০, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়ন এলাকায় গ্রামে গ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক জুম্মদের পরিবার থেকে হয়রানিমূলক তথ্য সংগ্রহ অভিযান চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে জনগণের মধ্যে নানা উদ্বেগ ও আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

গত প্রায় এক মাস ধরে স্থানীয় বিভিন্ন সেনা ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবারের লোকজন সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে চেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানা গেছে। তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সেনা সদস্যরা বিভিন্ন প্রশ্ন সম্বলিত একটি ফরমও প্রতিটি পরিবারের কাছে সরবরাহ করেছে। এসব প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে- পরিবারে কতজন লোক রয়েছে, কে কোন পেশায় জড়িত আছে, গ্রাম বা ইউনিয়নের বাইরে অন্যত্র কেউ বসবাস থাকেন কিনা, পরিবারের সদস্যদের নাম, বয়স, ঠিকানা, তাদের তালিকা, জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার ইত্যাদি।

তথ্য সংগ্রহের কাজে জড়িত ক্যাম্পসমূহ হল- বিলাইছড়ি সেনা জোনের অধীন তক্তানালা সেনা ক্যাম্প, আলিখ্যং সেনা ক্যাম্প, ফারুয়া বাজার সাবজোন ও শুক্কোরছড়ি সেনা ক্যাম্প।

এদিকে স্থানীয় জুম্ম জনগণ সেনাবাহিনীর এই তথ্য সংগ্রহকে হয়রানিমূলক ও ষড়যন্ত্রমূলক এক কাজ হিসেবে দেখছেন। কারণ অনেক পরিবারের ছেলেমেয়ে ফারুয়ার বাইরে গিয়ে লেখাপড়া ও চাকরি করছেন। এতে পরিবারের সদস্যদের অনেক সময় সেনাবাহিনীর নানা জিজ্ঞাসাবাদ ও হয়রানির শিকার হতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী জানান, পরিবারের এতসব তথ্য সংগ্রহ করা তো সেনাবাহিনীর কাজ নয়। তবু তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জুম্মদেরকে এসব তথ্য দিতে বাধ্য করছে। এটা হয়রানিমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

আরও এক গ্রামবাসী জানান, রাঙ্গামাটি জেলার অন্য জায়গায় এবং দেশের কোথাও সেনাবাহিনী কর্তৃক এমন তথ্য সংগ্রহ করার কথা জানা যায়নি। কিন্তু এখানে কেন তা করা হচ্ছে? এখানে সেনাবাহিনী যখন যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। তিনি বলেন, জনগণের ও পরিবারের যাবতীয় তথ্য তো সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর সংগ্রহ করে থাকে এবং এসব তথ্যাবলী সরকারের কাছেই রয়েছে। প্রয়োজনে সেই দপ্তর আরও তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু শুধুমাত্র জুম্মদের কাছ থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, যা স্পষ্টতই বৈষম্যমূলক এবং বিদ্বেষমূলক।

জানা গেছে, ১নং ছছড়ি, আলিখ্যং নুও পাড়া, ফোর ছড়া, রোয়াপাদা ছড়া, উলুছড়ি, আমকাবা ছড়া, আলিখং ত্রিপুরা পাড়া ইত্যাদি গ্রামের তথ্য সংগ্রহ কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে।

অপরদিকে, চাইন্দার চিচায় পাড়া, তক্তানালা উত্তর, ওড়াছড়ির জামুরোছড়া, লতাপাহাড় মার্মা পাড়া, লতাপাহাড় পাংখোয়া পাড়া, গোয়াইনছড়ির পানছড়ি, সার্বোতলি, ফারুয়া বাজার, গবছড়ি, চংড়াছড়ি, দুলু বাগান, চংড়াছড়ি ত্রিপুরা আদাম, থুম পাড়া, এগুজ্যাছড়ির আমকাবাছড়া, আলিখ্যং ত্রিপুরাপাড়া, তারাছড়ির পানছড়ি, টাংকুইথাঙ, যগনাচড়ি বম পাড়া, শুক্কোরছড়ি, মন্দিরছড়া ইত্যাদি গ্রামে এই তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

এই তথ্য সংগ্রহের কাজ করতে গিয়ে সেনা সদস্যরা জুম্মদের হয়রানির পাশাপাশি নানাভাবে উত্যক্ত করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তক্তানালা দক্ষিণ পাড়া সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ রমজান আলী প্রায়ই মদ্যপান করে জনগণকে হুমকি দিয়ে থাকেন বলেও জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, গত ১১ নভেম্বর ২০২০ ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ রমজান আলী সন্ধ্যার দিকে তক্তানালা দক্ষিণ পাড়া বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দান উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গিয়ে ১৭ বছরের এক তঞ্চঙ্গ্যা কিশোরীকে ১০ হাজার টাকায় ক্রয়ের প্রস্তাব দেন। এক পর্যায়ে মধ্যপ অবস্থায় উক্ত ওয়ারেন্ট অফিসার জোর করে ওই কিশোরীকে ক্যাম্পে নিয়ে যেতে চাইলে জনগণ বাধা দেয় এবং জনগণের সাথে ধস্তাধস্তিতে জড়িত হন। পরে মেয়েটি অনুষ্ঠান থেকে পালিয়ে গিয়ে এক আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করে।