সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের দাবিতে ঐক্য পরিষদের ৬-৭ জানুয়ারি ঢাকামুখী রোডমার্চ

0
491

হিল ভয়েস, ৪ জানুয়ারি ২০২৩, ঢাকা: বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায় যেসব প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিল তার বাস্তবায়নের আন্দোলনের চতুর্থ পর্যায়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বাধীন সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা আগামী ৬ জানুয়ারি শুক্রবার সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ‘চল চল ঢাকায় চল নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন কর’-এ শ্লোগানে ঢাকামুখী অভিযান আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিপুল সংখ্যক সংখ্যালঘু আদিবাসী জনগণ এতে অংশ নিয়ে আগামী ৭ জানুয়ারি শনিবার দুপুরবেলা ঢাকার শাহবাগ চত্বরে জমায়েত হয়ে পদযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে এগিয়ে যাবে এবং প্রধানমন্ত্রী সকাশে স্মারকলিপি পেশ করবে। এর আগে ৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামে এ রোড মার্চের উদ্বোধন করবেন আদিবাসী নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)।

আজ বুধবার (৪ জানুয়ারি) সকালে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার সমন্বয়ক এ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এমনতরো পরিস্থিতিতে ২০২৪ সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলসমূহ ও তাদের জোট পৃথক পৃথকভাবে দৃশ্যমান তৎপরতা শুরু করেছে। মূলত রাষ্ট্রক্ষমতাকে সামনে রেখে এহেন তৎপরতা অব্যাহত থাকাটা স্বাভাবিক এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে এটি অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি।

এ পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন থেকে এ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত বলেন, সকল রাজনৈতিক দলের কাছে সবিনয়ে বলতে চাই, আমরা এ দেশের নাগরিক। ‘আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব’-৯০-র এ গণতান্ত্রিক শ্লোগানকে সামনে রেখে নাগরিক হিসেবে সংখ্যালঘুরা তাদের ভোট প্রদান করতে চায়। আমরা এ বিষয়টিকে এখন থেকে সহৃদয়তার সাথে বিবেচনা করে সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্য পোষণে এগিয়ে আসবেন বলে তিনি আশা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, রাজনীতির বিদ্যমান বাস্তবতায় বাংলাদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী আশাহীনতা ও আস্থাহীনতার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও ৭২-র সংবিধান সাম্প্রদায়িকতামুক্ত হতে পারেনি। ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা’ ইতোমধ্যে রাষ্টীয় মৌলনীতি হিসেবে ইতোমধ্যে ফিরে এলেও রাষ্ট্র ও রাজনীতির চর্চায় তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন আজও মেলেনি।

রাষ্ট্রধর্ম জনগণনার দিক থেকে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনাগোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত করেছে। অথচ এহেন রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত হবার জন্যে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত করার পর যখন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেন, দেশে কোন সংখ্যালঘু নেই তখন তা রীতিমতো হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়।

ঐক্য পরিষদের নেতারা আরো বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পাদন ও পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন প্রায় দু’দশকের ঊর্ধ্বকাল আগে প্রণীত হলেও তা আজ থমকে যাওয়ায় পার্বত্য ভূমিতে পূর্বেকার মত অস্থিরতা বিরাজ করছে, ক্রমশঃই শান্তি তিরোহিত হয়ে যাচ্ছে। ২০০১ সালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন সংসদে গৃহীত হলেও আজও তা কার্যকর করা হচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি নতুন করে বলার আর অপেক্ষা রাখেনা। বাড়িঘর-উপাসনালয়-দোকানপাটে হামলা, ভূমি জবর দখল, অপ্রাপ্তবয়স্কা কন্যাদের অপহরণ ও ধর্ষণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ, কথায় কথায় দেশত্যাগের হুমকি ইত্যাদি অনেকটা নিত্যদিনকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্যে যত কথাই বলা হোক না কেন তা অনেকটা কথার কথায় পরিণত হয়েছে, শুধুমাত্র গত ২০২২ সালের অক্টোবরের সারা দেশে অনুষ্ঠিত পাঁচ দিনের দুর্গোপূজোর দিনগুলো ছাড়া। এমনতরো পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায় এবং অস্তিত্বের সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষে ঐক্যমোর্চা গঠন করে মানবাধিকারের আন্দোলন পরিচালনা করা ছাড়া আজ সংখ্যালঘুদের সামনে আর কোন বিকল্প নেই।

এরই আলোকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ইতোমধ্যে জাতীয় পর্যায়ে ৩৩টি সংগঠন নিয়ে ‘সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা’ জাতীয়ভাবে গঠন করেছে এবং এ ঐক্যমোর্চার পক্ষ থেকে চলতি বছরের শুরু থেকে সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারি দল আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচন ইশতেহারে যেসব অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিল তার মধ্যে রয়েছে-

১. সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন;
২. জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন;
৩. বৈষম্যবিলোপ আইন প্রণয়ন;
৪. অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের দ্রুত বাস্তবায়ন;
৫. দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন;
৬. পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের দ্রুত বাস্তবায়ন ও
৭. সমতলের আদিবাসীদের জন্য স্বতন্ত্র ভূমি কমিশন গঠন।

এছাড়াও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি আমাদের রয়েছে। এ্যাডভোকেট দাশগুপ্ত সংবাদ সম্মেলন থেকে দেশের সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দকেও এসব দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করে নাগরিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, কাজল দেবনাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, জয়ন্ত কুমার দেব, রবীন্দ্রনাথ বসু, সাংগঠনিক সম্পাদক পদ্মাবতী দেবী, উত্তম চক্রবর্তী, সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য প্রমুখ।