ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে দুষ্কৃতিকারীরা উৎসাহ পাবে- রাঙ্গামাটি মানববন্ধনে অ্যাড. সুস্মিতা চাকমা

0
344

হিল ভয়েস, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর রাঙ্গামাটি জেলা শাখার উদ্যোগে বান্দরবানের লামার ফাঁসিয়াখালীতে এক মারমা নারীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা বলেন, উক্ত ধর্ষণ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে দুষ্কৃতিকারীরা উৎসাহ পাবে। এরকম চলতে থাকলে আমরা কেউই নিরাপদে থাকতে পারবো না।

আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, সোমবার, বিকাল ৩:০০ টায় ধর্ষণের প্রতিবাদে ও ধর্ষক কায়সারকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে যথাযথ শাস্তির দাবিতে রাঙ্গামাটি ডিসি অফিসের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পিসিপির রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক টিকেল চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সংহতি বক্তব্য রাখেন রাঙ্গামাটি জেলা জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি থোয়াইক্য জাই চাক, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি ম্রানু সিং মারমা।

সংহতি বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা বলেন, লামায় এলাকাবাসীরা পিটুনি দিয়ে ধর্ষক কায়সারকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। এরপরও কিভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেদ করে হাসপাতাল থেকে অপরাধী ধর্ষক কায়সার পালিয়ে গেল তিনি প্রশাসনের কাছে এর জবাব চান।

তিনি বলেন, আমাদের চৌকস পুলিশ বাহিনী রয়েছে। এখানে সেনা-র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। তারা আন্তরিক থাকলে অপরাধীকে ধরা, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা কঠিন কিছু নয়। তিনি অবিলম্বে ধর্ষক কায়সারকে গ্রেফতার করে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে বিশেষ করে কিশোরী ও তরুণীরা একের পর এক ধর্ষণ, জুলুম ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। পাহাড়ের নারীরাও তার ব্যতিক্রম নয়। পাহাড়ের নারীরা শিক্ষাক্ষেত্রে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসহ সকল ক্ষেত্রে দূর্বল হওয়ার কারণে তারা সবসময় ধর্ষণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। এক্ষেত্রে নির্যাতনকারীরা সবসময় সবল হয়, সবসময় ক্ষমতাবান হয়ে থাকে। যারা ক্ষমতাশালী, তারা সবসময় দুষ্কৃতিকারীদের সহযোগিতা করে এবং করে থাকে। যার কারণে অপরাধীরা বারবার এগুলো করার সাহস পাচ্ছে। এযাবতকালে যতগুলো ধর্ষণের ঘটনা হয়েছে তার মধ্যে কিছু অপরাধের বিচার হলেও অধিকাংশ নারী এখনো যথাযথ বিচার পায়নি।

পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি থোয়াইক্যজাই চাক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের আয়তনের বাইরে নয়। প্রতিবারই ধর্ষণের মতো ঘটনায় আমরা রাজপথে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছি। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি হানাদারদের কর্তৃক ৩০ লক্ষ শহীদ ও অসংখ্য মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে কেন আমার বোন নিরাপদে থাকবে না? কেন তারা ঘরের ভেতর ও বাইরে অনিরাপদ থাকবে? কেন তারা ধর্ষণের শিকার হবে?

তিনি আরও বলেন, গত শুক্রবারে বান্দরবানের লামায় সংঘটিত ধর্ষণের ঘটনায় সেখানকার ওয়ার্ড মেম্বার ও ইউপি চেয়ারম্যান অপরাধীকে সহযোগিতা করেছে এবং ভুক্তভোগীকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল হাসপাতাল থেকে ধর্ষক কায়সার পালিয়ে গেছে। আজকে পাহাড়ে যত ধর্ষণের ঘটনা হয়েছে, যত অপরাধের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে এইখানে যতগুলো জাতীয় দল রয়েছে, সেই দলগুলো সেসব ঘটনার কোনো প্রতিবাদ আজ পর্যন্ত করেনি।

তিনি আরো বলেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আইনের কোনো সুশাসন এখানে প্রতিষ্ঠিত হবে না। তিনি অবিলম্বে ধর্ষক কায়সারকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা বলেন, আজ পার্বত্য চট্টগ্রামে একের পর এক পাহাড়ি নারীকে ধর্ষণ করা হচ্ছে, ধর্ষণের পর হত্যা করা হচ্ছে। কিন্ত কোনো সুবিচার পাচ্ছি না। ধর্ষণকারীকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। যেখানে জনমানুষের সমস্যা হবে সেখানে সকাল বিকাল ছুটে যাওয়া জনপ্রতিনিধির কাজ। কিন্তু লামার ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান ধর্ষককারীর পক্ষ নিয়ে ধর্ষককে সহযোগিতা করে আসছে। এটাতো মেনে নেওয়া যায় না। তিনি অবিলম্বে ধর্ষক কায়সারকে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের দাবি জানান এবং পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি ম্রানু সিং মারমা বলেন, বান্দরবান জেলাধীন লামা উপজেলায় এক মারমা নারী দিনে দুপুরে নিজ এলাকায় ঘরের পাশে তরকারি খুঁজতে গিয়ে যদি সেটেলার কায়সার কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হতে হয়, তাহলে আজকে পাহাড়ি নারীর নিরাপত্তা কোথায়? ধর্ষক কায়সারকে পালানোর সহযোগিতা যারা করেছে যে ইউপি চেয়ারম্যান তিনিও ধর্ষকের সমান অপরাধী। তাকেও ধর্ষকের সাথে শাস্তির আওতায় আনা হোক এবং ধর্ষক কায়সারকে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক।

মানববন্ধনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রনেল চাকমা।