সেনা-সমর্থিত সশস্ত্র সংস্কারপন্থী কর্তৃক ৪ জনকে অপহরণ, কয়েকজনকে মারধর

0
1204

হিল ভয়েস, ০১ এপ্রিল ২০২০, পার্বত্য চট্টগ্রাম:  পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী সংস্কারপন্থী খ্যাত সেনা-সমর্থিত সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন এবং দলচ্যুত আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি) নামক বিদেশী সশস্ত্র গোষ্ঠীকে আশ্রয়ও মদদ দিয়ে জনসংহতি সমিতি ও পার্বত্য চুক্তির বিরুদ্ধে ব্যবহার করা এবং এদের দ্বারা পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অপহরণের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তারই অংশ হিসেবে মার্চ মাসে সেনা-সমর্থিত সংস্কারপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা একজন ছাত্রসহ চারজনকে অপহরণ ও মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায়, কয়েকটি বাড়ি তল্লাসী ও জিনিসপত্র ভাঙচুর এবং কয়েকজনকে মারধর করে।

গত ০১ মার্চ রাত আনুমানিক ১১.৩০ ঘটিকায় পরানধন চাকমার নেতৃত্বে একদল সংস্কারপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের গদাপাড়া গ্রামের দয়ালাল চাকমার পুত্র প্রিয় চাকমার (৬০) বাড়ি ঘেরাও করে। বাড়িতে কাউকে না পেয়ে বাড়ির আসবাবপত্রসহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী ভাংচুর করে দিয়ে চলে যায়।

গত ২ মার্চ ২০২০ অমরধন চাকমা ওরফে রনেল ও পলাশ চাকমার নেতৃত্বে সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের এক সশস্ত্র দল রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বরকল উপজেলাধীন আইমাছড়া ইউনিয়নের দীঘলছড়ি গ্রামের বাসিন্দা রাজীব কান্তি চাকমা (৩১) নামে এক কৃষককে সুবলং বাজারের নিকটবর্তী হারিক্ষ্যং মুখ এলাকা থেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। ঐদিন তিনি কাঁচা হলুদ বিক্রি করার জন্য ট্রলার বোট যোগে রাঙ্গামাটি শহরে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে হারিক্ষ্যং এলাকায় পৌঁছলে সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীরা বোট থামিয়ে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে মুক্তিপণের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেয় সংস্কারপন্থীরা।

গত ১০ মার্চ খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার জামতলী ব্রীজ এলাকা থেকে অর্পন চাকমা নামে একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে সশস্ত্র সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে। পরে এলাকাবাসী ও অপহৃতের আত্মীয়-স্বজনের দেনদরবারের মাধ্যমে ৬ লক্ষ টাকার মুক্তিপণের বিনিময়ে ১৪ মার্চ ছেড়ে দেয় সংস্কারপন্থীরা। সেই সাথে অর্পণ চাকমার হাতে থাকা ৬৫ হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেয় সেনা-সমর্থিত সন্ত্রাসীরা।

গত ১২ মার্চ ২০২০ সন্ধ্যার দিকে সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসী কর্তৃক খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাধীন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের মুনিগ্রাম এলাকা থেকে মঙ্গল কুমার চাকমা (৫০) পীং নলিনী রঞ্জন চাকমা নামের এক নিরীহ গ্রামবাসী অপহরণ করা হয়। জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী দেওয়ান পাড়া থেকে দীপন আলো চাকমার নেতৃত্বে সংস্কারপন্থী একদল সন্ত্রাসী এসে মঙ্গল কুমার চাকমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এলাকাবাসী জানায় যে, দীর্ঘদিন ধরে দেওয়ান পাড়ায় সংস্কারপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অবস্থান করে এলাকার লোকজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, প্রকাশ্যে চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা কওে থাকে। ফলে এলাকার জনগণ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

গত ১৪ মার্চ সকালে রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার বাঙালহালিয়া থেকে মোটরসাইকেল যোগে একদল সশস্ত্র সংষ্কারপন্থী সন্ত্রাসী কাঙারাছড়ি পাড়ায় হামলা করে এবং কয়েকজনকে বেধড়ক মারপিট করে। সংস্কারপন্থীরা এ সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ৪/৫টি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে জানা যায়।

গত ১৯ মার্চ দীঘিনালা উপেেজলার বাবুছড়া নতুন বাজার একদল সংস্কারপন্থী সশস্ত্র দল দিন দুপুরে অস্ত্রসহ ঘেরাও করে মহড়া দেয়। তার কিছুক্ষণ আগে একদল সেনা সদস্য গাড়ীযোগে বাজারের উত্তর দিকে টহল দেয়। এই সময় সংস্কারপন্থীরা কয়েকটি জুম্ম পরিবারকে বাবুছড়া এলাকা ছেড়ে প্রতিবেশি দেশে চলে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। তারপর দিন থেকে গ্রামে গ্রামে মানুষদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতে থাকে।

গত ২০ মার্চ রাত আনুমানিক ১০টায় রাঙ্গামাটি জেলার সদর উপজেলার বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের বোয়ালছড়ি গ্রাম থেকে কালাইয়া চাকমা (২৯) পিতা কামদেব চাকমা নামে একজন নিরীহ ব্যক্তিকে অপহরণ করা হয়েছে।

গত ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় সংস্কারপন্থীরা এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টির হীনলক্ষ্যে দীঘিনালার বাবুছড়া পুরাতন বাজারের মাইনীর পশ্চিম কূলে মন্দির মুড়া নামক এলাকায় ব্লাঙ্ক ফায়ার করে। সংস্কারপন্থী সশস্ত্র সদস্যরা বাবুছড়া বাজারের সংলগ্ন সেটেলার শিবিরে মো: মালেক নামে এক সেটেলারের বাড়িতে অবস্থান করে থাকে বলে জানা গেছে।

সূত্র: “মার্চ ২০২০: পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর মাসিক প্রতিবেদন” শীর্ষক জনসংহতি সমিতির রিপোর্ট