পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামীকরণের বহুমূখী পরিকল্পনা ও তৎপরতা

0
1883

             বাচ্চু চাকমা              

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ৪ঠা নভেম্বর প্রথম সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭২ সালের সংবিধানে “বাংলাদেশের সকল জাতিসমূহ বাঙালি বলিয়া পরিচিত হইবে” এই মর্মে অবাঙালি জুম্ম জনগণকে বাঙালি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ১৯৭৮ সালে এই বিতর্কিত ও বর্ণবাদী ধারা পরিবর্তন করা হলেও, আওয়ামীলীগ-নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনে বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি বলিয়া পরিচিত হইবেনমর্মে উক্ত ধারা পুনপ্রবর্তন করে, যা আবারও জুম্ম জাতিগোষ্ঠীসহ অবাঙালি জাতিগোষ্ঠীগুলোর বাঙালিকরণের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছিল।

অধিকন্তু ১৯৭৯ সালে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের শুরুতে বিস্মিল্লাহির-রহমানির রহিম (দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে) অন্তর্ভুক্ত এবং ১৯৮৮ সালে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক পঞ্চম সংশোধনী আইনকে বাতিলের মাধ্যমে ধর্মীয় বৈষম্যমূলক সকল বিধানাবলীর বিলোপ পূর্বক ৭২-এর সংবিধানের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি পুনর্বহালের নির্দেশনা দেয়া হলেও আদালতের উক্ত নির্দেশনা লংঘন করে, বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের শুরুতে বিস্মিল্লাহির-রহমানির রহিমএবং রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামবিধানাবলী বজায় রাখে। ১০ই এপ্রিল ২০১৮ সালের সপ্তদশ সংশোধনীসহ বাংলাদেশের সংবিধান সর্বমোট ১৭ বার সংশোধীত হয়েছে। সংবিধানে এইসব সংশোধনী কেবল ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে পঙ্গু করেছে তা নয়, উপরন্তু রাষ্ট্রীয় নীতিতে ইসলামীকরণের প্রক্রিয়াকে আরও জোরদার করেছে বলা যায়।

ইসলামীকরণের রাষ্ট্রীয় নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের একের পর এক সরকার অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ, হিন্দু ও খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী আদিবাসী জুম্ম জাতিসমূহকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিতকরণের বহুমূখী পরিকল্পনা ও তৎপরতা হাতে নিতে থাকে। এসব পরিকল্পনা ও তৎপরতা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠাপোষকতায় দেশের ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠী, বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন, ইসলামী ঘেষা এনজিও, ভূমি বেদখলকারী, সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি প্রশাসন, উগ্র সাম্পদায়িক ও উগ্র জাতীয়তবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক অত্যন্ত সঙ্গোপনে ও সুক্ষ্ম পরিকল্পনাধীনে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামীকরণের কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

এক. পার্বত্য চট্টগ্রামে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বসতিপ্রদানের মাধ্যমে ইসলামীকরণ

১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত হওয়ার সময়, আদিবাসী জুম্ম ও বাঙালি মুসলিম জনসংখ্যা যথাক্রমে ৯৮.৫% এবং ১.৫%। তা সত্ত্বেও ভারত বিভক্তি আইনকে উলঙ্গভাবে লঙ্ঘন করে অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অন্তর্ভুক্তির পর পাকিস্তান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম মুসলিম জনসংখ্যা বসতিপ্রদানের কার্যক্রম হাতে নেয়। দেশ বিভাগের পর ভারতের বিহার থেকে আগত অর্ধ-লক্ষাধিক মুসলিম জনগোষ্ঠীকে রামগড়, নান্যাচার, লংগদু, নাইক্ষ্যংছড়ি, কাউখালী, রাঙ্গামাটি বিভিন্ন এলাকায় বসতি প্রদান করা হয়েছিল।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকারও সেই ধারা অব্যাহত রাখে। ইসলামিকরণ নীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে জেনারেল জিয়ার শাসনামলে ১৯৭৯ সাল হতে জেনারেল এরশাদের শাসনামলের ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সরকারি অর্থ সহায়তায় সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের জায়গা-জমির উপর চার লক্ষাধিক বহিরাগত মুসলমানদের বসতি প্রদান করা হয়। তার মধ্যে রাঙ্গামাটি জেলার সদর উপজেলা, নান্যাচর, লংগদু, বরকল, কাপ্তাই, রাজস্থলী, কাউখালী ও বিলাইছড়ি উপজেলা; খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়, মানিকছড়ি, গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, মহালছড়ি, দীঘিনালা, পানছড়ি ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা; বান্দরবান জেলায় আলিকদম, রুমা, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, রোয়াংছড়ি ও বান্দরবান সদর উপজেলার অনেক জায়গায় বহিরাগত মুসলমানদের বসতি প্রদান করা হয়। ইসলামীকরণের এই ধারা অব্যাহতভাবে  চলছে। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি মুসলমান জনসংখ্যা ৪৯% । মুসলমান বাঙালি জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধির পরিমান থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামীকরণ কতদ্রুতগতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে তা সহজেই বুঝা যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণকে সংখ্যালঘুকরণের লক্ষ্যেই শাসকগোষ্ঠী এভাবেই সলামীকরণ নীতি নিরবিচ্ছিন্নভাবে বাস্তবায়ন করে চলেছে।

দুই. ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি লুন্ঠনের মাধ্যমে ইসলামীকরণ

পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যবসা-বাণিজ্য, হাটবাজার, পূজিবাজার সম্পূর্ণভাবে বহিরাগত মুসলিম বাঙালিদের হাতে। জুম্মরা মূলত প্রকৃতি-নির্ভর ক্ষুদে উৎপাদনশীল অর্থনীতিতে অভ্যস্ত। ফলে ব্যবসায়িক অর্থনীতির জটিল কারবারের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। দ্বিতীয়ত জুম্মদের মধ্যে অভাব রয়েছে ব্যবসায়িক অর্থনীতি মূল চালিকা শক্তি পূজির। স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি না থাকায় এবং ব্যাংকসহ ঋণদানকারী প্রশাসন জুম্মদের অনুকূলে না থাকায় ব্যাংক ঋণ নিয়ে পূজি সংগ্রহ করাও জুম্মদের পক্ষে সম্ভব নয়। তৃতীয়ত পার্বত্য চট্টগ্রামের সরকারি প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তা ও কর্মচারী বহিরাগত ব্যক্তি। তারা বাজার অর্থনীতিতে মুসলিম বাঙালি ব্যবসায়ীদের প্রতি নানাভাবে আনুকূল্য দিয়ে থাকেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মুসলিম বাঙালিদের পক্ষে অনুকূল প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা থাকায় সমতল জেলাগুলো থেকে বহিরাগতরা এসে পার্বত্য চট্টগ্রামে সহজে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করতে পারে এবং অনায়াসে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি করতে পারে। এভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের নামে লক্ষ লক্ষ বহিরাগত মুসলিম পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুপ্রবেশ করছে, যারা পরবর্তীতে প্রশাসনের আনুকূল্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধভাবে জায়গা-জমি কিনে, ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে এবং নানাবিধ সুবিধাদি গ্রহণ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছে। এভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্য দিয়েই পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুপ্রবেশ তথা ইসলামীকরণের প্রক্রিয়া অব্যাহতভাবে বাস্তবায়িত হয়ে আসছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক উদাহরণ আছে বহিরাগত একজন মুসলিম সমতল জেলা থেকে পার্বত্য জেলায় দিনমজুরী করতে এসে কোন এক বাজারে ছোটখাটো চায়ের দোকান বা মুরগী বিক্রির দোকান দিয়ে বসলো, তারপর দেখতে দেখতে কয়েক মাসের মধ্যে বা দুই/এক বছরের মধ্যে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে বিরাট দোকানে পরিণত হয়েছে। তারপর সেই বহিরাগত ব্যক্তি তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন নিয়ে আসলো এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেলো। কেবল বড় ব্যবসায়ী হয়ে গেলো তা নয়, সেই ব্যক্তি বাজার কমিটির বড় পদবী দখল করলো, এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার পরিষদের জনপ্রতিনিধিও নির্বাচিত হয়ে গেলো। এভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য বহিরাগত মুসলিমরা একচেটিয়ে নিয়ন্ত্রণ করছে। এর ফলে একদিকে জুম্ম জনগোষ্ঠীকে নানাভাবে অর্থনৈতিকভাবে শোষণ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনীতি লুণ্ঠন করতে থাকে, অপরদিকে ইসলামীকরণের অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে মুসলিম জনসংখ্যা জাতিমিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

পাহাড়ের ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যে বিশেষ করে সেগুন আর বাঁশ ব্যবসা অন্যতম একটি বড় ব্যবসায়িক খাত। এই ব্যবসা-বাণিজ্য জুম্মরা সুবিধা করতে পারেনা। সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার জন্য মূল খুঁটির জোরে যে ব্যবসা চলে সেই মূল খুঁটি বিজাতীয়দের হাতে রয়েছে। এই সেগুন ব্যবসা থেকে কোটি কোটি টাকা মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা লুন্ঠন করে পাহাড়ের বুকে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক চাকা ঘুরায় বিজাতীয়রা, সেজন্যে সমতলের হাজার হাজার ছোটখাটো মুদির দোকান, রেস্টুরেন্ট, মাছ ব্যবসা, কলা ব্যবসা থেকে শুরু করে মাঝারি ও বড় বড় মুসলিম বাঙালি ব্যবসায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুপ্রবেশ করে বসতি স্থাপন করছে।

এভাবে হাজার হাজার বহিরাগত মুসলিম বাঙালি পার্বত্য চট্টগ্রামে একদিকে অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্তভাবে গেড়েছে অপরদিকে সেইহাজার হাজার বহিরাগত মুসলিম বাঙালি ব্যবসায়ীদের দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামীকরণের নীল-নকশা শাসকগোষ্ঠী বাস্তবায়ন করে চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে রাস্তাঘাট নির্মাণ, পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন (নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র, নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র, চিম্বুক পর্যটন কেন্দ্র, বগালেক, রুইলুই সাজেক পর্যটন কেন্দ্র ইত্যাদি), পার্বত্য চট্টগ্রামে সেগুন ব্যবসা থেকে সামরিক আমলা সেনা কর্মকর্তারা কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। গুটিকয়েক সুবিধাবাদী বাংলাদেশের সেনা কর্মকর্তাদের কারণে আজ পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ পাহাড়ের বুকে অধিকারহীন সংখ্যালঘুতে পরিণত হতে চলেছে। এমনি করে পার্বত্য চট্টগ্রামে অর্থনীতি লুন্ঠনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামীকরণ দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিন. জুম্মদের ভূমি বেদখল ও উচ্ছেদের মাধ্যমে ইসলামীকর

পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের কাছ কেড়ে নেওয়া হচ্ছে পূর্ব-পুরুষদের আবাদ করা সমস্ত জায়গা জমি ও বসতভিটা। রাবার প্লান্টেশন, বনবাগান, ফলবাগান ইত্যাদি হর্টিকালচার প্লট-এর নামে পার্বত্য চট্টগ্রামের হাজার হাজার একর পাহাড়ভূমি বহিরাগতদের নিকট ইজারা দেয়া হচ্ছে। কেবলমাত্র বান্দরবান জেলায় প্রতি প্লটে ২৫ একর করে অন্তত ১৬০০ প্লটের বিপরীতে প্রায় ৫০ হাজার একর পাহাড়ভূমি বহিরাগতদের নিকট লীজ দেয়া হয়েছে। আরো ভয়ংকর যে, প্রতি প্লটে ২৫ একর করে লীজ দেয়া হলেও প্রভাবশালী ইজারাদাররা ২৫ একের বিপরীতে জুম্মদের ভোগদখলীয় ও রেকর্ডীয় শত শত একর জায়গা-জমি জোরজবরদস্তিভাবে দখল করে নিয়েছে বা নিচ্ছে।

এই লীজ গ্রহণকারীর মধ্যে সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, নানা প্রভাবশালী গোষ্ঠী ও দল জড়িত রয়েছে। সামরিকও সিভিল প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় বহিরাগত মুসলিম ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী ব্যক্তি, ভূমিদস্যুদের উদ্যেগে ভূমি বেদখল চলছে।কেবলমাত্র লামায় লাদেন গ্রুপ নামে খ্যাত মুহাম্মদিয়া জামিয়া শরিফা ৭ হাজার একর জমি এবং কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ২০০০ একর জমি জবরদখল করেছে। ইজারার নামে বহিরাগতদের দ্বারা জায়গা-জমিতে রাবার প্লান্টেশন বহিরাগত মুসলিম ও রোহিঙ্গারা শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে থাকে। তারা ধীরে ধীরে এসব জায়গায় স্থায়ী বসতি গড়ে তুলছে। এভাবে ব্যাপক হারে মুসলমান অনুপ্রবেশ ঘটানো হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর কেবলমাত্র বান্দরবান জেলায় জুম্মদের ৩০টি গ্রাম থেকে উচ্ছেদ হয়ে পড়েছে।

সেনাক্যাম্প ও সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন ও সম্প্রসারণের নামে ভূমি অধিগ্রহণ ও জবরদখল চলছে। সুয়ালকে গোলন্দাজ ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য অধিগ্রহণ ১১,৪৪৫ একর এবং ১৯,০০০ একর প্রক্রিয়াধীন, রুমা সেনানিবাস সম্প্রসারণ নামে ৯,৫৯০ একর, বান্দরবান ব্রিগেড সম্প্রসারণ, লামা বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নামে ২৬,০০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অপরদিকে এসব জায়গা-জমি থেকে জুম্মদেরেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এভাবে হাজার হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণ ও জবরদখল চলছে পার্বত্য চট্টগ্রামে, যা ইসলামীকরণের ভিত্তিকে আরও অধিকতর শক্তিশালী করা হচ্ছে।

জুম্মদের ভূমি বেদখল ও উচ্ছেদ, অনুপ্রবেশ ও ইসলামিকরণে আরেক হাতিয়ার হচ্ছে পর্যটন শিল্প। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিলাসবহুল পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের নামে জুম্মদের জায়গা-জমি জবরদখল ও উচ্ছেদের ক্ষেত্রে অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোক্তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জোরে কোন রকম আইনের তোয়াক্কা না করে জুম্মদের শত শত একর জায়গা-জমি জবরদখল করেছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো বান্দরবান সদর উপজেলার কাপ্রু পাড়ায় নীলগিরিপর্যটনের জন্য প্রায় ১০০ একর, সেপ্রু পাড়ায় জীবননগরপর্যটনের জন্য ৬০০ একর, ‘চন্দ্র পাহাড়পর্যটনের জন্য ৫০০ একর, আলিকদম-থানচি সড়কে ক্রাউডং (ডিম পাহাড়) এলাকায় ৫০০ একর, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে প্রায় ৫০০ একর জায়গা জবরদখল করা হয়েছে। এসব পর্যটনের ফলে কেবল জুম্মদের জায়গা-জমি বেদখল ও উচ্ছেদ করা হয়েছে তা নয়, অধিকন্তু জুম্মদের উপর অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নানা ধরনের বিরূপ প্রভাবসহ ইসলামী সংস্কৃতির প্রভাব জোরদার হয়েছে।

এছাড়াও জুম্ম শরণার্থীদের সাথে শেখ হাসিনা সরকারের স্বাক্ষরিত ২০-দফা প্যাকেজ চুক্তি মোতাবেক প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের জায়গা-জমি থেকে সেটেলার বাঙালিদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার পরিবর্তে শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই ২০০০ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় খাগড়াছড়ি জেলার সদর ও মহালছড়ি উপজেলার গামারীঢালা, বিজিতলা, নুনছড়ি, পাগুজ্যাছড়ি, কাটিং টিলা, লেমুছড়ি, জয়সেন কার্বারী পাড়া ইত্যাদি জায়গায় জুম্মদের রেকর্ডীয় ও ভোগদখলীয় জায়াগা-জমি জবরদখল করে সেটেলারদের গুচ্ছগ্রাম সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। এহেন কার্যক্রম থেকে প্রমাণ হয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি জবরদখল করে ইসলামীকরণ নীতি সহজে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

চার. জুম্ম সংস্কৃতির উপর আগ্রাসনের মাধ্যমে ইসলামীকর

পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম সংস্কৃতির উপর চলছে ইসলামী সংস্কৃতির আগ্রাসন। তাই পরিকল্পিতভাবে চলছে বনপ্রকৃতিপাহাড়-ভূমি নির্ভর জুম্ম সংস্কৃতি ও জীবনধারার উপর আঘাত। এলক্ষ্যে উজার করা হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃতি ও বনাঞ্চল। প্রশাসনের ছত্রছায়ায় বহিরাগতদের দ্বারা পার্বত্যাঞ্চলের বনজ সম্পদ কেবল ব্যবসায়িক স্বার্থে কিংবা মুনাফার লোভে আহরণ ও পাচার হচ্ছে তা নয়, জুম্মদের বনপ্রকৃতিপাহাড়-ভূমি নির্ভর জুম্ম সংস্কৃতি ও জীবনধারাকে ধ্বংস করা এবং জুম্ম জনগণকে জাতিগতভাবে নির্মূলীকরণের সূদুর প্রসারী লক্ষ্য নিয়েও বনাঞ্চল ও জীবৈচিত্র্য ধ্বংস করা হচ্ছে। কারণ বন-প্রকৃতি না থাকলে জুম্মদের জীবনধারা বিপন্ন হয়ে পড়ে এবং জুম্মরা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়। তাই দেখা গেছে, বন-প্রকৃতি উজার হওয়ার ফলে জুম্মদের প্রকৃতি-পাহাড় নির্ভর জুম চাষ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে জীবনজীবিকার উপায় না থাকায় বিগত বছরগুলোতে জুম্মরা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে কিংবা দেশান্তর হতে বাধ্য হয়েছে। আর এসব এলাকায় দ্রুত বহিরাগত মুসলিমদের অনুপ্রবেশ ঘটে চলেছে। এভাবে জুম্ম সংস্কৃতির মূল ভিত্তিগুলোর উপর আঘাত হেনে ইসলামীকরণের কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।

সংস্কৃতির অন্যতম বাহন ভাষা। জুম্ম শিশুরা এখনো মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা লাভ থেকে বঞ্চিত। ফলে জুম্ম শিশুরা প্রথমে স্কুলে গিয়ে বাংলা ভাষার সাথে মুখোমুখী হয়ে হোছট খেয়ে পড়ে এবং তার ফলে প্রাথমিক স্তরে অনেক জুম্ম শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। পাঠ্য-পুস্তকের মধ্যে পরিবেশ পরিচিতি বইয়ে জুম্ম জাতিসত্তা তথা আদিবাসী সম্পর্কে তুলে ধরা হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে কোন কিছুই শেখানো হয় না। পক্ষান্তর ইসলামী ইতিহাস ও সংস্কৃতি শেখানো হয়ে থাকে। অফিস-আদালত, হাটে-বাজারে বাংলা ভাষার প্রাধান্য। জুম্মদের মাতৃভাষার প্রচলন নেই। অফিস-আদালত, হাটে-বাজারে গেলে ইসলামী রীতিতে সালামালিকুমওলাইকুম সালাম বলে সম্বোধন করতে হয়। নামের পূর্বে জনাবলিখতে বাধ্য করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে জুম্ম সংস্কৃতি ও ব্যক্তিত্বদের ভাস্কর্য নির্মাণের পরিবর্তে ইসলামী সংস্কৃতি ও ব্যক্তিদের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়ে থাকে। এমনকি জুম্মদের উপর নির্যাতনকারী সেনা সদস্যদেরও ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়ে থাকে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী অনেক নাম মুছে দিয়ে সেখানে নতুন নাম বসিয়ে ইসলামীকরণ করা হয়েছে। যেমন- কাপ্রুম্রো পাড়া নামের পরিবর্তে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, বান্দরবান সদরে পাহাড়ের দু-পাশের হাতিভাঙ্গা তাং ও এম্মেন তাংএবং পাহাড়ের চূড়ার নাম “টাইগার হিল” এর নাম পরিবর্তন করে হল নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র। বান্দরবান সদরে “নাইটং বা দেবতা পাহাড়” এর নাম পরিবর্তন করে হল চন্দ্রপাহাড়। আলিকদম ও থানচি উপজেলায় অবস্থিত মারমা ভাষায় “ক্রাউডং” ও ম্রো ভাষায়“তেংতার চুট” এর নাম পরিবর্তন করে হল ডিমপাহাড়। বান্দরবান সদরে সেপ্রু পাড়ার নিকটবর্তী পাহাড়গুলোর নাম পাল্টিয়ে করা হলজীবননগর। বান্দরবানে ম্রোরা বলে “ইয়াংবং হুং” এবং পরবর্তীতে এলাকার সবাই জানে হেডম্যান “চ্যংবত ম্রো” নামে পাহাড়টার নামকরণ হয়েছে। “চ্যংবত পাহাড়” এর নাম পরিবর্তন করে হল চিম্বুক পাহাড়। রুমা উপজেলায় বম সম্প্রদায়ের লোকেরা “লুংমাইচাম” বলে জানে কিন্তু এর নাম পরিবর্তন করে হল টেবিল পাহাড়। বান্দরবানে “সীতা পাহাড়” এর নাম পরিবর্তন করে হল পিক৬৯; বান্দরবানেমারমা ভাষায় “চাইখ্যং” আর বম সম্প্রদায়ের লোকেরা বলতনে “চাইখ্যংভা” এর নাম পরিবর্তন করে হল শৈলপ্রপাত; বান্দরবান সদরে”ডুলুঝিড়ি মাথা” এর নাম পরিবর্তন করে হল মেঘলা।

রাঙ্গামাটি  জেলায় বিলাইছড়িতে “হুরুকগ্যায়” নাম পরিবর্তন করে হল কুতুবদিয়া;বটতলী” নামের জায়গায় হল বড়থলিহাঙারাছড়ি” নামের পরিবর্তে হল কেংড়াছড়ি;গাজহাবাছড়া” নামের পরিবর্তে বসলো গাছকাটাছড়া; “তাগলকবাক” নাম পরিবর্তন করে হল তবলাবাক ইত্যাদি। এভাবে জুম্মদের জায়গার নাম পরিবর্তন করে শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামীকরণ নীতি প্রয়োগ করছে। আমরা জানি, এক সময় রাশিয়ায় জার শাসনামলে অরুশীয় জাতিসমূহকে বলপূর্বক রুশীকরণের নীতি তারা অনুসরণ করেছিল। ঠিক একইভাবে শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাধ অনুপ্রবেশ, বিভিন্ন স্থানের জুম্ম নাম মুছে দিয়ে ইসলামী নামকরণ, মসজিদ-মাদ্রাসা ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তুলে ইসলামী সম্প্রসারণবাদ কায়েম করে জুম্ম জাতির নাম নিশানা মুছে দেওয়ার সুগভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।

জার নিকোলাস ব্যাপক রুশিকরণ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন। রাশিয়াতে ১৪৫টি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বাস থাকলেও একমাত্র রুশ জাতিগোষ্ঠীর লোকেরাই সকল সুযোগসুবিধা ভোগ করত। তাদের ভাষা, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক জীবনধারা সবই ছিল আলাদা। আর বাকি জাতিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক হিংসা বিদ্বেষ গড়ে তুলেছিল জার শাসকরা। রুশ জাতিরা অন্যান্য অরুশ জাতিকে ঘৃণা করতে শেখাত। শিক্ষার ক্ষেত্রে তারা বৈষম্য সৃষ্টি করেছিল। ধর্ম যাজকগন ধর্ম প্রচারের মাধ্যমে জারের ক্ষমতা বৃদ্ধি করত। ধর্মীয় যাজকরা বলতেন, “জার ঈশ্বরের প্রতিনিধি, তিনি কখনো অন্যায় করতে পারেন না। তারা বুঝাত ইহকালে যদি তোমরা বিনা প্রতিবাদে সব রকম অত্যাচার জোর, জুলুম সহ্য করে চলতে পারো, তবে পরকালে তোমরা স্বর্গসুখে জীবনযাপন করতে পারবে। এভাবে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ধর্মীয় যাজকগণ ক্ষুধিত নিপীড়িত মানুষকে আন্দোলন করতে নিষেধ করত। পার্বত্য চট্টগ্রামে বেলায় একই অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তথাকথিত ধর্মীয় প্রচারক ড. এফ দীপংকর ভান্তেকে দিয়ে শাসকগোষ্ঠী তাও করার ব্যর্থ অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পাঁচ. ধর্মীয় মৌলবাদের ভিত্তিতে ইসলামীকরণ

২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি বিডিনিউজ২৪.কমপার্বত্য চট্টগ্রামে বহুমাত্রিক সমস্যার ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক পটভূমি” শাহরিয়ার কবীর লেখা শিরোনামে প্রকাশিত প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, “১৯৬১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে মসজিদের সংখ্যা ছিল ৪০টি এবং মাদ্রাসা ছিল ২টি। জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৮১ সালে মসজিদের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বেড়ে হয়েছে ৫৯২টি এবং মাদ্রাসা ৩৫টি। ২০১০ সালে এসে পার্বত্য চট্টগ্রামে মসজিদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,০০০টি এবং সরকারি-বেসরকারি মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ৮০০টি”। গত ৪ জুন২০২০, পাহাড়বার্তা.কম অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ বলছে, বান্দরবানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ৫৬৬টি মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বান্দরবান সদর উপজেলা ও পৌরসভার ৯০টি মসজিদের অনুকুলে ৫ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করা হয়। আয়োজকেরা জানান, বান্দরবানে ৭টি উপজেলার ৫৬৬টি মসজিদে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এই অনুদান প্রদান করা হবে এবং সর্বমোট ২৮ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা বিতরণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটাওএকটা ইসলামীকরণের অন্যতম কার্যক্রম বলা যায়।

এখানে আরও উল্লেখ যে, ২০১৯ সাল নাগাদ রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় ১৪২টি মসজিদ, কাউখালী উপজেলায় ১৩৫টি মসজিদ, কাপ্তাই উপজেলায় ১২৫টি মসজিদ, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলায় ১৩২টি ও খাগড়াছড়ি জেলার মধ্যে রামগড় উপজেলায় ৬৭টি মসজিদ, মাটিরাঙ্গা উপজেলায় ৭২টি মসজিদ, মানিকছড়ি উপজেলায় ৭৬টি মসজিদ এবং বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় ৮১টি, বান্দরবান সদরে ৯৫টি, লামা উপজেলায় ১৫২টি, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১২২টি মসজিদের খবর পাওয়া গেছে। এভাবে ব্যাঙের ছাতার মতোই গড়ে উঠেছে মসজিদ ও মাদ্রাসাগুলো, যা পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামীকরণ নীতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের এক দশমাংশ জায়গা পার্বত্য চট্টগ্রামে মসজিদ ও মাদ্রাসার সংখ্যা এতো দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। বানের পানির মতোই ধেয়ে আসছে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামীকরণ। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভয়ংকর মহাসংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ছয়.ভাগ কর, শাসন করনীতির ভিত্তিতে ইসলামীকরণ

পার্বত্য চট্টগ্রামে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভূঁইফোড় নানা সংগঠন সৃষ্টি করে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামীকরণের বিরুদ্ধে জুম্ম জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের শক্তিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যাতে বাস্তবায়ন হতে না পারে তারজন্য শাসকগোষ্ঠী কিছু বিপদগামী, উচ্চাভিলাষী জুম্ম তরণদের দিয়ে ১৯৯৮ সালে ২৬ ডিসেম্বর ইউপিডিএফ সৃষ্টি করে দেয়। জুম্ম জাতির জাতীয় ঐক্য ও সংহতি এবং মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার জুম্ম জাতীয়তাবাদের আদর্শিক প্লাটফর্মকে ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যে জুম্ম জাতির মধ্যে অনৈক্যের বীজ বপন করে দিয়েছিল।

তারপরও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন যখন তীব্র বেগে এগিয়ে যেতে থাকে ঠিক সেই সময়ে সারা বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারী হয়। সেই জরুরি অবস্থার সুযোগে সংস্কারের তকমা লাগিয়ে কিছু ক্ষমতালোভী ও বিভেদপন্থী উপদলীয় চক্রান্তকারী পার্টি বিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত হয় এবং ২০১০ সালে ১০ এপ্রিল সংস্কারপন্থী সংগঠনটি জন্ম হয়। সেই সুযোগে ইউপিডিএফ সেনা ডিজিএফআইয়ের আর্শিবাদ নিয়ে পাহাড়ের বুকে চুক্তি বিরোধী ও জুম্মস্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। দলচ্যুত সংস্কারপন্থী সৃষ্টির ৫/৬ বছরের পর ২০১৭ সালে ইউপিডিএফ থেকে ইউপিডিএফ গনতান্ত্রিক জন্ম হয়।

জঘন্য এই বর্ণবাদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, ক্ষমতাসীন দল, সেটেলার বাঙালি সংগঠন, উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তিকে ব্যবহার করা থেকে শুরু করে পার্বত্য চট্টগ্রামে সক্রিয় সংস্কারপন্থী সশন্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ ও আরাকান লিবারেশন পার্টি (মগ পার্টি) নামক বিদেশী সশন্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনকে পার্বত্য চট্টগ্রামে হত্যা, অপহরণ ও চাঁদাবাজি তৎপরতায় আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে। এভাবে একদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন বাধাপ্রাপ্ত হতে থাকে অপরদিকে সাম্প্রদায়িক সংগঠন সৃষ্টি করে দিয়ে ইসলামীকরণের নীতি প্রশস্ত করে।

সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বত্র মুসলিম সেটেলারদের সংগঠিত করে, পার্বত্য গণপরিষদ, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন, বাঙালি ছাত্র ঐক্য পরিষদ ইত্যাদি নামে উগ্রসাম্প্রদায়িক ও উগ্রজাতীয়তাবাদী সংগঠনের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। সরকারের পৃষ্টপোষকতায় মুসলিম সেটেলারদের সহযোগিতায় মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিসমূহ উগ্রসাম্প্রদায়িক ও উগ্রজাতীয়তাবাদী শ্লোগান তুলে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট, যুবসেনাও ছাত্রসেনা নামে ইসলামী মৌলবাদী জঙ্গী ও সাম্প্রদায়িক দলসমূহকে তিন পার্বত্য জেলায় বেশ সক্রিয় থাকতে দেখা যায়।

এছাড়াও আন্তর্জাতিক ইসলামিক জঙ্গী গ্রুপের সাহায্য ও সহযোগিতায়, বাংলাদেশী ইসলামিক জঙ্গী গ্রুপগুলো জনগণের মধ্যে সদস্য সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ প্রদান ও ইসলামি মৌলবাদী আদর্শ প্রচারের ক্ষেত্রে সুকৌশলে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে। এটা প্রতীয়মান হয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি বিরাজ থাকায় এইসব জঙ্গী গ্রুপগুলো কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই রাষ্ট্রযন্ত্রে ছত্রছায়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে নামে-বেনামে সাম্প্রদায়িক সংগঠন, চুক্তি বিরোধী ও জুম্মস্বার্থ পরিপন্থী সংগঠন সৃষ্টি করে অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠী ইসলামীকরণের চূড়ান্ত লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এগিয়ে চলেছে।

সাত. পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসনের মাধ্যমে ইসলামীকর

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত আদিবাসী জুম্ম জাতিগোষ্ঠীর আবাসভূমি ও অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল হচ্ছে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে সামরিকায়িত অঞ্চল। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সংখ্যা প্রচন্ডভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে ১৯৭৭ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সামরিকীকরণের অধীনে নিয়ন্ত্রণ করে। আশি দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে ১,১৫,০০০ সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। যা পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতি ৬ জন জুম্ম জনগণের পেছনে ১ জন সেনা দায়িত্বরত থাকতেন।

এভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারী হয়ে উঠল স্বল্প সময়ের মধ্যে সামরিকীকরণ। পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে স্থাপন করা হয় ৫০০ এর বেশি সেনাক্যাম্প। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী পাহাড় থেকে সকল অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করার কথা থাকলেও সরকারের মতে, ৫০০ শতাধিক অস্থায়ী ক্যাম্প হতে ২৪০টি ইতিমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু জনসংহতি সমিতির মতে, তিন দফায় মাত্র ১০০টি অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছিল। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো ৪০০-এর অধিক অস্থায়ী সেনাক্যাম্প রয়েছে। অধিকন্তু পার্বত্য চুক্তিতে লঙ্ঘন করে ২০০১ সালে অপারেশন উত্তরণজারি করে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন অব্যাহত রাখা হয়েছে এবং পক্ষান্তরে ক্যাম্প প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া ২০০৯ সাল থেকে বন্ধ করা হয়েছে।

ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো ইত্যাদি দৈনিক সংবাদপত্রগুলোতে এবং জনসংহতি সমিতি, সিএইচটি কমিশনে প্রতিবেদনে ২০০৪ হতে ২০১১ সালের মধ্যে সংগঠিত সামরিক বাহিনীর দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছিল প্রায় ১,৪৮৭ টি। তার মধ্যে ছিল বিনা অপরাধে মৃত্যু, আঘাত, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা, লুটপাট, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, মন্দির ধ্বংস, গ্রেপ্তার, প্রহার, হয়রানি ও উচ্ছেদ ইত্যাদি। সন্ত্রাসী’, ‘চাঁদাবাজ’, ‘অস্ত্রধারীসাজিয়ে অবৈধ গ্রেফতার ও জেলে প্রেরণ, জোরপূর্বক গুম, তথাকথিত ক্রসফায়ার’-এর নামে বিচার-বহির্ভূত হত্যা, ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন, সন্ত্রাসী খোঁজার নামে রাত-বিরাতে ঘরবাড়ি তল্লাসী ইত্যাদি মানবতা বিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনীরা। বস্তুতঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন জারী রেখে অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার শাসকগোষ্ঠীরই এটি চূড়ান্ত পরিকল্পনা।

আট. ইসলামীকরণে জুম্ম নারী ও শিশুর উপর সহিংসতা

জুম্ম নারী ও শিশুদের ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, অপহরণ, অপহরণের পর জোরপূর্বক বিয়ে ও ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরকরণ ইত্যাদি নারীর উপর সহিংসতাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামীকরণে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। নারীর উপর সহিংসতার মাধ্যমে জুম্মদের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করে জুম্মদেরকে এলাকাছাড়া হতে বাধ্য করা হচ্ছে, যার আল্টিমেট রেজাল্ট হচ্ছে জুম্মদের জায়গা-জমি বেদখল ও জুম্মদেরকে তাদের চিরায়ত গ্রাম ও বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করা।

জুম্ম নারীদের ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা করার ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে ভরিভরি। বাঘাইছড়ি উপজেলার নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামের জুম্ম নারী অন্যায়ের প্রতিবাদী কল্পনা চাকমা অপহরণ, কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের থুমাচিং মারমা, রাঙ্গামাটি সদরে উলুছড়াতে বলিমিলি চাকমা, কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরমে ছবি মারমা, লংগদু উপজেলায় সুজাতা চাকমাসহ আরও নাম না জানা শত-শত জুম্ম নারী ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হতে হয়েছে। হিসেব করে দেখা গেছে যে, ১৯৭১ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার জুম্ম মহিলা ধর্ষণের শিকারে পরিণত হয়েছেন।

কেবল ২০১৮ সালে ৫৩ জন আদিবাসী নারী ও শিশু যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে। তার মধ্যে ১৮ জন নারীকে ধর্ষণ, ১২ জন নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা এবং ১১ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ওরাছড়ি গ্রামে সেনাসদস্য কর্তৃক যৌন সহিংসতার শিকার দুই মারমা কিশোরী বোনকে পুলিশী প্রহরায় অন্তরীণ রেখে ঘটনাটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জোরে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। ২২ আগস্ট ২০১৮ তারিখে বান্দরবানের লামা উপজেলার রামগতি গ্রামে বিজিবি তিন সদস্য কর্তৃক দুই ত্রিপুরা কিশোরীকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণের ঘটনাও একই কায়দায় ভিকটিমদের গ্রামে বন্দী করে রেখে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় খোদ রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম নারীদের চরম অমর্যাদা ও নিরাপত্তাহীনতার বাস্তবতা সৃষ্টি করার চিত্র ফুটে উঠেছে। বস্তুত কল্পনা চাকমার চলমান তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া এ দেশের অন্যায়-অবিচার ও অপরাধের বিচারহীনতার অপসংস্কৃতিকেই অত্যন্ত প্রকটভাবে ফুটিয়ে তুলেছে এবং জাতিগত সংখ্যালঘু আদিবাসীদের প্রতি চরম নির্যাতন ও বৈষম্যকে উন্মোচিত করেছে। এভাবে জুম্ম নারীর উপর সহিংসতা চালিয়ে দেশের শাসকগোষ্ঠী ইসলামীকরণের নীতি বাস্তবায়ন করে চলেছে।

নয়. জুম্মদেরকে ধর্মান্তরকরণের মাধ্যমে ইসলামীকরণ

পার্বত্য চট্টগ্রামে মৌলবাদী ও জুম্ম বিদ্বেষী কিছু ইসলামী গোষ্ঠী কর্তৃক সুপরিকল্পিতভাবে আদিবাসীদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হচ্ছে। এধরনের পরিকল্পনা বা কার্যক্রম অনেক আগে থেকে শুরু হলেও সাম্প্রতিককালে এর তৎপরতা অনেক জোরদার হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ধর্মান্তরিতকরণের এই প্রক্রিয়া স্থানীয়ভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় যেমন চলছে, তেমনি ভালো শিক্ষার প্রলোভন দেখিয়ে আদিবাসী জুম্ম শিশুদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে নিয়ে গিয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করা হচ্ছে। বৌদ্ধ, হিন্দু ও খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী আদিবাসী জুম্মদেরকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিতকরণের কার্যক্রম জোরদার হয়েছে। বিশেষ করে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, গৃহ নির্মাণ, গরু-ছাগল পালন, সুদ-মুক্ত ঋণ ইত্যাদি প্রলোভন দেখিয়ে বান্দরবান জেলায় ধর্মান্তরকরণ চলছে।

বান্দরবান পৌর এলাকার বাস ষ্টেশনে ১৯৯৯ সালের দিকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত ত্রিপুরা ও খিয়াং রয়েছে ৩০-এর অধিক পরিবার এবং টাংকি পাড়ায় ২০০১ সাল থেকে বসবাস রয়েছে নুও ত্রিপুরা মুসলিমদের ১৫-এর অধিক পরিবার। লামা উপজেলার লাইনঝিড়িতে ১৯৯৫ সাল থেকে ত্রিপুরা মুসলিমদের ১৭-এর অধিক পরিবার ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে। আলিকদম-থানচি সড়কের ক্রাউডং (ডিম পাহাড়) এলাকায় (রূপসী ইউনিয়ন) ২০০০ সাল থেকে ত্রিপুরা মুসলিমদের রয়েছে ১৬ পরিবারের মতো।

এমনকি লেখাপড়া শেখানোর লোভ দেখিয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরকে তাদের মাতা-পিতা থেকে নিয়ে ঢাকা, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পিতা-মাতার অজান্তে মাদ্রাসায় ভর্তি করানো এবং ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার সংবাদ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। অন্যদিকে জুম্ম নারীদেরকে ফুসলিয়ে কিংবা ভালবাসার প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে করা এবং ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে বিয়ের কিছুদিন পর বিবাহিত জুম্ম নারীকে শারীরিক নির্যাতন করা এবং নানা অজুহাতে তাড়িয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি বিবাহিত জুম্ম নারীর সাথে যৌন জীবনের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতেও দেখা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে ছবিসহ ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে বান্দরবান জেলার থানচি ও আলিকদমে ১১ কিলো এলাকায় জামে মসজিদে ছোট্ট জুম্ম শিশুদের যেভাবে মাথায় সাদা টুপি আর পাসওয়াকত নামাজ পড়ার প্রশিক্ষণ পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামীকরণের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে।

এভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামীকরণের বহুমুখী পরিকল্পনা ও তৎপরতাকে অব্যাহত রেখে অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিনত করে জুম্ম জনগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে নির্মূলীকরণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে অবতীর্ণ হয়েছে।