হিল ভয়েস, ১৮ মে ২০২৩, বান্দরবান: বান্দরবান জেলার রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়িতে কেএনএফ বিরোধী অভিযানে সেনাবাহিনী নিরস্ত্র নিরীহ জুম্ম পোর্টারদেরকে জোরপূর্বক মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জুম্ম পোর্টারদের এভাবে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের ফলে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে পোর্টার হিসেবে কর্মরত এক ত্রিপুরা নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, গত মঙ্গলবার (১৬ মে) কেএনএফের এ্যাম্বুশে পড়ে সেনাবাহিনীর দুইজন জওয়ান নিহত ও তিনজন আহত হওয়ার পর রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে সেনাবাহিনী গণহারে সাধারণ জুম্ম গ্রামবাসীকে পোর্টার হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে এবং যুদ্ধে তাদেরকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনের অধিক জুম্মকে সেনাবাহিনী পোর্টার হিসেবে নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
আরো জানা যায় যে, গতকাল ১৭ মে ২০২৩ সেনাবাহিনীর একটি দল রুমা উপজেলার রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নে একটি সেনা অভিযান পরিচালনা করে। এসময় সেনাদলটি রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন জুম্ম গ্রামবাসীকে মালামাল বহন ও বিভিন্ন কাজের জন্য জোরপূর্বক পোর্টার হিসেবে তাদের সাথে যেতে বাধ্য করে এবং তাদেরকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য অভিযানের অগ্রভাগে থাকতে বাধ্য করে থাকে।
সেনা অভিযানের এক পর্যায়ে বিকাল আনুমানিক ৩টার দিকে সেনাদলটি রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের সলৌপি পাড়া সংলগ্ন এক পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছলে হঠাৎ মাইন বিস্ফোরণ ঘটে। এসময় দুই জুম্ম পোর্টার এবং একজন সেনা সদস্য গুরুতর আহত হয়।
নিহত পোর্টারের নাম জুয়েল ত্রিপুরা (২৬), পীং-গুলিহা ত্রিপুরা, গ্রাম-বাসিরাম পাড়া, ৯নং ওয়ার্ড, ৩নং রেমাক্রি-প্রাংসা ইউনিয়ন, রুমা উপজেলা।
অপর আহত জুম্ম পোর্টার হলো আব্রাহাম ত্রিপুরা (২৯), পীং-শচীন্দ্র ত্রিপুরা, গ্রাম-বাসিরাম পাড়া, ৯নং ওয়ার্ড, ৩নং রেমাক্রি-প্রাংসা ইউনিয়ন, রুমা উপজেলা এবং আহত সেনা সদস্য হলো লেন্স কর্পোরাল মোঃ আমিনুল ইসলাম, ৫ ইবিআর, বান্দরবান সদর সেনা জোন।
এরপর আহত ৩ জনকে প্রথমে থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত এক ডাক্তার গুরুতর আহত জুয়েল ত্রিপুরাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অপরদিকে গুরুতর আহত আব্রাহাম ত্রিপুরাকেও ডাক্তারের পরামর্শে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
আহত সেনা সদস্য লেন্স কর্পোরাল মোঃ আমিনুল ইসলামকে বান্দরবান সেনানিবাস সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী বলেন, জুয়েল ত্রিপুরা নিহত ও আব্রাহাম ত্রিপুরা আহত হওয়ার জন্য সেনাবাহিনীই দায়ী। সেনাবাহিনী তাদেরকে জোর করে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সেনা অভিযানে নিয়ে যায়। যাদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই এবং উপযুক্ত পারিশ্রমিকও দেওয়া হয় না।
বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী প্রীতিবিন্দু চাকমা বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে নিরস্ত্র ও নিরীহ ব্যক্তিদেরকে সেনা অভিযানে কিংবা যুদ্ধে জোরপূর্বক মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য। অন্যদিকে জেনেভা ঘোষণা অনুসারে যে কোন যুদ্ধে মাইন পুঁতে রাখা নিষিদ্ধ। কেননা এতে নিরস্ত্র নিরীহ জনগণ ক্ষতির শিকার হয়েছে। তাই সেনাবাহিনীর সৃষ্ট ও ইসলামী জঙ্গী মদদপুষ্ট কেএনএফ কর্তৃক নির্বিচারে মাইন পুঁতে রাখাও জেনেভা ঘোষণা অনুসারে চরম অপরাধ।
আরো পড়ুন
https://hillvoice.net/bn/%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%8f%e0%a6%a8%e0%a6%8f%e0%a6%ab-%e0%a6%93-%e0%a6%b8%e0%a7%87%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%bf/