সজীব চাকমা
আজ স্নেহ কুমার চাকমার ১০৮তম জন্মদিন। এস কে চাকমা নামেও তিনি পরিচিত। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্মদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ইতিহাসে অন্যতম এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। আজীবন সংগ্রামী, ত্যাগী ও আপোষহীন এক নেতা। তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটে নিজের জন্মভূমি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি’র (পরে পাকিস্তান, বর্তমানে বাংলাদেশের) এক জেলা পার্বত্য চট্টগ্রামে। আদিবাসী জুম্ম অধ্যুষিত পার্বত্য অঞ্চলটি ১৮৬০ সালে ব্রিটিশ প্রশাসনের জেলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত একপ্রকার স্বাধীন রাজ্য হিসেবেই অস্তিত্ব বজায় রেখেছিল। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের প্রাক্কালে তিনিই ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের অধিকারের পক্ষে লড়ে যাওয়া সবচেয়ে সোচ্চার কন্ঠ। তিনি ভেবেছিলেন এবং চেয়েছিলেন ভারত স্বাধীনতা আইন বা দেশবিভাগের মূলনীতি অনুযায়ী অমুসলিম ও আদিবাসী জুম্ম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রাম মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তানে না হয়ে ভারতে অন্তর্ভুক্ত হবে। এজন্য তিনি তৎকালীন উপমহাদেশের জাতীয় নেতা বল্লভভাই প্যাটেল, জওহরলাল নেহেরুসহ অনেক নেতা ও ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং জুম্মদের অধিকারের স্বপক্ষে লবিং করেন। কিন্তু এক পর্যায়ে দেশবিভাগের ডামাডোলে নিজের জাতির অধিকারের কথা বলতে গিয়ে জন্মভূমি ছেড়ে পারি জমান ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। তাঁর বাকী জীবন কাটে সেখানেই এবং আজীবন তিনি চাকমা জাতিসহ জুম্মদের অধিকারের পক্ষে লড়ে যান।
তাঁর জন্ম ১৯১৪ সালের ১১ মে পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার খবংপজ্যা গ্রামে গরীব চাষী শ্যামাচন্দ্র চাকমার ঔরসে মানকুমারী চাকমার গর্ভে। একেবারে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে। বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে বিশ্বসভ্যতা টালমাটাল হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম ছিল শান্ত, প্রায় ঘুমন্ত। তখনও পার্বত্য চট্টগ্রামে বহিরাগত অনুপ্রবেশ নেই বললেই চলে। মাত্র গুটিকয়েক বাঙালি পরিবার। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আধিপত্য থাকলেও প্রায় স্বাধীন আদিবাসী রাজাদের রাজত্বে জুম্ম জনগণ স্বশাসন নিয়েই বসবাস করছিলেন। তবে যুগ যুগ ধরে সামন্তীয় শাসনব্যবস্থায় থাকা জুম্মদের অর্থনীতি ছিল পশ্চাদপদ ও কৃষিনির্ভর, জীবনধারা ছিল অনুন্নত, সহজ-সরল। স্কুল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষিত ব্যক্তির সংখ্যাও হাতে গোনা। তবে এসময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা বিকাশের আন্দোলনের অগ্রদূত কৃষ্ণ কিশোর চাকমা ও চিত্ত কিশোর চাকমাদের মত শিক্ষানুরাগী, স্বজাতি ও স্বদেশপ্রেমী এবং প্রগতিশীল চিন্তাধারার মানুষদের উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং জুম্মদের মধ্যে শিক্ষিত প্রজন্ম গড়ে তোলার অভিযান শুরু হয়। তবুও সেই পর্যায়ে সামগ্রিকভাবে জুম্ম সমাজ ছিল রাজনৈতিকভাবে অসচেতন ও অসংগঠিত। তবে যেহেতু ব্রিটিশ প্রশাসনের মূল কাজ বা উদ্দেশ্য ছিল মূলত অর্থ সংগ্রহ করা, তাই তাদের শাসন জুম্মদের জীবনধারায়, ভূমি ও ভূখন্ডে তেমন প্রভাব ফেলেনি। তাই রাজাদের শাসনাধীনে শাসিত-শোষিত হলেও জুম্ম জনগণ নিজেদেরকে অনেকটা স্বাধীন নাগরিকই মনে করত।
জানা যায়, স্নেহ কুমার চাকমার শিক্ষাজীবন শুরু হয় খবংপজ্যা গ্রামেরই নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (Lower Primary School)। ছোটকাল থেকেই তিনি তাঁর মেধা ও অধিকারের প্রতি সংবেদনশীলতার পরিচয় দেন। এরপর তিনি উচ্চ প্রাথমিক বা আপার প্রাইমারি শেষ করেন ছোট মহাপূরম থেকে। এরপর ১৯২৭ সালের জানুয়ারিতে তিনি রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেই সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে এটাই ছিল একমাত্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। তবে নিয়ম ছিল যে, আপার প্রাইমারি স্কুল পাশ করে আসা ছাত্রদের রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণিতে ভর্তি হতে হবে। কিন্তু সেই বছর ৪র্থ শ্রেণিতে সেই বিদ্যালয়ে আর কোন সিট খালি ছিল না। তাই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাকে ৩য় শ্রেণিতে ভর্তি হতে বলেন। কিন্তু স্নেহ কুমার চাকমা ৩য় শ্রেণিতে ভর্তি হতে অস্বীকার করেন এবং ৫ম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পিড়াপীড়ি করেন। কেননা, তার ক্লাসমেট আপার প্রাইমারি থেকে আসা অধিকাংশই ৫ম শ্রেণিতে প্রমোশন পেয়ে ভর্তি হয়েছেন। ফলে যুক্তিতে না পেরে প্রধান শিক্ষক স্নেহ কুমার চাকমাকে একটি কঠিন ভর্তি পরীক্ষার সম্মুখীন করেন। কিন্তু তিনি ভর্তি পরীক্ষায় এত ভালো করেন যে, শেষ পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক তাকে ৫ম শ্রেণিতে ভর্তি করতে বাধ্য হন। তবে প্রধান শিক্ষক এই বলে হুমকি দেন যে, বছরের তিনটি পরীক্ষার কোনো একটিতে খারাপ করলেই তাকে বহিস্কার করবেন। এরপর ৫ম শ্রেণিতে বছরের তিনটি পরীক্ষাতেই রোল নাম্বার প্রথম হয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। এভাবে প্রথম হয়েই ৮ম শ্রেণি শেষ করেন।
অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়েই তিনি কিছু স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা সম্পর্কে অবহিত হন। নিজের মধ্যেও সেই রাজনৈতিক চেতনা অনুভব করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, ‘The name of Motilal Nehru, Lala Lajpat Rai, Sarat Chandra Bose etc and then Jawaharlal Nehru, Subhas Chandra Bose, Jatindra Mohan Sengupta etc. converted me into a freedom fighter without my distinct knowledge.’ ১৯৩০ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে স্কুলে ছাত্রদের এক ধর্মঘটে নেতৃস্থানীয় ভূমিকাও পালন করেন। যোগ দেন বিদেশী পণ্য বর্জন ‘বিলাতি বর্জন’ আন্দোলনে। এটি ছিল স্বদেশি আন্দোলনের একটি অংশ। ঐ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ছাত্ররা প্রায় ১৪ মাইল হেঁটে বুড়িঘাট বাজারে যান। সেখানে গিয়ে তারা ব্যবসায়ীদেরকে সকল বিদেশি পণ্য সমর্পণ করার আহ্বান জানান। ব্যবসায়ীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ তাদের বিদেশি মালামাল তাদের নিকট সমর্পণ করেন। এরপর ছাত্ররা সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন। এরপর তারা নানিয়ারচর বাজারে যান। সেটা ছিল এলাকার বড় বাজার। এসময় সেখানে এক ছাত্র-জনতার সমাবেশ সৃষ্টি হয়। এই সমাবেশে ছাত্রদের পক্ষ থেকে স্নেহ কুমার চাকমা বক্তৃতা দিতে শুরু করেন। কিন্তু সমাবেশে উপস্থিত অনেকেই বক্তাকে দেখতে না পাওয়ার অনুযোগ করেন এবং তারা বক্তাকে দেখতে চান। এসময় স্নেহ কুমার চাকমার সহপাঠী বিশালদেহী খগেন্দ্র লাল দেওয়ান স্নেহ কুমার চাকমাকে নিজের কাঁধে তুলে শক্ত করে ধরে রাখেন। এরপর স্নেহ কুমার চাকমা প্রায় আধা ঘন্টা বক্তব্য রাখেন। এসময় দোকানদাররা তাঁর বক্তব্য শুনে একে একে নিজেদের দোকানের বিদেশি পণ্য বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেন। এরপর সবাই ‘বন্দে মাতরম’ শ্লোগানে শ্লোগানে সেই পণ্যগুলো পুড়িয়ে ফেলেন। এই আন্দোলন তারা এভাবে খাগড়াছড়িতেও নিয়ে যান।
উক্ত আন্দোলনের পর স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের অভিভাবকদের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং ঐ আন্দোলনের ৬ রিংলিডারের একজন হিসেবে স্নেহ কুমার চাকমাকে স্কুল থেকে বছরের শেষ ৬ মাসের জন্য বাতিল করে দেয়। তবে ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার অনুমতি দেয়া হয়। এভাবেই স্নেহ কুমার চাকমা ‘ভালো ছেলে’ থেকে ‘দুষ্ঠু ছেলে’ হয়ে ওঠেন। এ প্রসঙ্গে তিনি লেখেন- ‘Thus I entered the Rogues’ Gallery of Sri S K Ghosh, I.C.S, Deputy Commissioner of Chittagong Hill Tracts, 1930 when I was student of class VIII in the Rangamati Govt. High School.’
এসময় তাঁর রাজনৈতিক গুরু ছিলেন সেই সময়কার আরেক নেতা ও চট্টগ্রাম শহরে কলেজে পড়ুয়া ছাত্র ঘনশ্যাম দেওয়ান। এরপর একে একে তিনি মহেন্দ্র বড়ুয়া, চারু বিকাশ দত্ত প্রমুখ নেতার সংস্পর্শে আসেন। ৩০ দশকের প্রথমদিকে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস চট্টগ্রাম সফরে আসলে চট্টগ্রামের যাত্রা মোহন সেন হলে তাঁর সাথেও তিনি সাক্ষাৎ করেন। এসময় তিনি ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য গান্ধীজীর অহিংস আন্দোলনের চেয়ে সশস্ত্র কার্যক্রমের দ্বারা অধিকতর প্রভাবিত হন।
১৯৩৩ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই বিদ্যালয়ের এক পালি শিক্ষকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত এক ফৌজদারি মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে ডেপুটি কমিশনার কর্তৃক নোটিশ পান। আদালতে এ কে ঘোষ কর্তৃক তাঁকে ‘বৈরী বা শত্রুভাবাপন্ন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং গ্রেপ্তার করা হয়। মূলত এ কে ঘোষ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেন। এরপর তাঁকে রাঙ্গামাটি কারাগারে প্রেরণ করা হয়। কারাগারে থাকা অবস্থায়ই ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত হয় এবং তিনি লেটারসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এর প্রায় ৫/৬ মাস পর তিনি জামিনে ছাড়া পান। এসময় তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা বৃত্তি লাভ করেন। এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের বিশেষ অনুমতি নিয়ে বিলম্বিত সময়ে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকেই ১৯৩৭ সালে গ্র্যাজেুয়েশন সম্পন্ন করেন তিনি।
এরপর তিনি মনোযোগ দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসমিতিকে সক্রিয় করে তোলার কাজে। সেই সময় শাসন-বহির্ভূত এলাকা হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম ছিল নিষিদ্ধ। তিনি চাইছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসমিতি কাজ করবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণও যাতে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে পারে সেজন্য সাধারণ জনগণকে মানসিকভাবে প্রশিক্ষিত করে তোলা। এক পর্যায়ে তাঁকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসমিতি’র সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন কামিনী মোহন দেওয়ান। ভারত বিভক্তির পর ত্রিপুরায় যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত স্নেহ কুমার চাকমা জনসমিতি’র সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সম্ভবত তার অনুপস্থিতির সাথে সাথে এই সংগঠনটিও ধীরে ধীরে তার সক্রিয়তা হারায়।
‘ব্রিফ একাউন্ট অব মাই পার্ট ইন দি ইন্ডিয়ান ফ্রিডম স্ট্রাগল’ শিরোনামে লিখিত তাঁর বয়ানে জানা যায়, ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন উপস্থিত হল তখন পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্রিটিশ সরকারের শাসনক্ষমতা অধিকতর দৃঢ় করা হল। অপরদিকে নিখিল ভারতের জাতীয় নেতারা এই জনগণ ও অঞ্চলের ব্যাপারে খুব সামান্য আগ্রহই দেখালেন। কেবল সুভাষ চন্দ্র বসুর তুলনামূলকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা ছিল এবং স্নেহ কুমার চাকমারাও সুভাষের উপর বেশি আস্থাশীল ছিলেন। এমনকি ১৯৪২ সালের ভারত ছাড় আন্দোলনেও পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে তেমন কিছু হয়নি। তাই সুভাষ বসুর বিদেশ গমন জুম্মদের জন্য যেমন আশার, তেমনি হতাশারও ছিল। স্নেহ কুমার চাকমার ভাষায়, ‘অতএব পার্বত্য চট্টগ্রামের নেতৃত্ব সম্পূর্ণভাবে আমাদের স্থানীয় নেতৃত্বের হাতে স্থাপিত হয়।’
জানা যায়, ১৯২০ দশকের শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সমিতির প্রথম চেয়ারম্যান কামিনী মোহন দেওয়ান পার্বত্য চট্টগ্রামের ভবিষ্যত নিয়ে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাথে কথা বলতে বোম্বে যান। তখন বেঙ্গল কংগ্রেসের নেতা চিত্তরঞ্জন দাসের মুখে একটাই জবাব পান। সেটা হলো-“স্বাধীন ভারতে জনগণ যে যার মতো করেই রাজনৈতিক ব্যবস্থা পাবে।”
১৯৪০ সাল হতে স্নেহ কুমার চাকমা প্রায়ই পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে থাকতেন। ১৯৪৪ সালে তিনি কলকাতা গমন করেন এবং এই বছর খুব কমই তিনি নিজের জেলায় থেকেছেন। এই সময় বিশ্বযুদ্ধ ও ভারতের পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকল। বিশেষ করে রাশিয়ার কাছে জার্মানির পরাজয় এবং ১৯৪৫ সালের আগস্টে জার্মানির মিত্র জাপানে পারমানবিক বোমা নিক্ষেপের পর বিশ্বযুদ্ধের পরিণতি নির্ধারিত হয়। সাথে সাথে ভারতের স্বাধীনতা ও ভারত বিভাগ পরিষ্কার হয়ে উঠল। স্নেহ কুমার চাকমা দ্রুত পার্বত্য চট্টগ্রামে ফিরে আসেন, সভা ডাকলেন এবং সাধারণ ঐকমত্য নিশ্চিত করলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতে রাখার উদ্দেশ্যে ওয়াবেল সম্মেলন (ডধাবষষ পড়হভবৎবহপব) উপলক্ষে নিখিল ভারতের নেতাদের সাথে দেখা করার জন্য সিমলার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলেন। তিনি সেখানে অন্যান্যদের মধ্যে পন্ডিত নেহেরু ও মাওলানা আজাদের সাথে আলোচনা করেন এবং তারা নিশ্চয়তা দেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানে ছুঁড়ে দেওয়া হবে না। তিনি ভারতের সংসদে প্রতিনিধিত্বের দাবি জানান। ১৯৪৬ সালে এ ভি টক্করের নেতৃত্বে নির্বাচনী সভার নিখিল ভারত শাসন-বহির্ভূত এলাকা সাবকমিটিতে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৯৪৭ সালের জানুয়ারি মাসে কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল (জয়প্রকাশ নারায়নের নেতৃত্বে এবি টক্করও ছিলেন) রাঙ্গামাটিতে সফরে এলে তাদের নিকট পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সমিতি ও হিলম্যান এসোসিয়েশন পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতে অন্তর্ভুক্তির ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। তখনও এই কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ তাদের আশ^াস দেন যে, তারা সেভাবেই বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশনকে সুপারিশ করবেন।
১৯৪৭ সালের ৩০ জুন গভর্ণর জেনারেল কর্তৃক বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশন ঘোষণা করা হয়। ১৪ জুলাই ১৯৪৭ স্নেহ কুমার চাকমা বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশনের নিকট একটি জোরালো স্মারকলিপি উপস্থাপন করেন এবং লর্ড মাউন্টব্যাটেন ও কমিশনের চেয়ারম্যান স্যার সিরিল রেডক্লিফ এর সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়টি মোকাবেল করার জন্য সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলকে নিয়োজিত করেন। জানা যায়, সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের দাবির স্বপক্ষে যথেষ্ট জোরালো ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেন। ১৯৪৭ সালের ১৬ জুলাই বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রামের স্মারকলিপি বিষয়ে শুনানির আয়োজন করে। কিন্তু সেখানে কমিশনের চেয়ারম্যান রেডক্লিফ উপস্থিত ছিলেন না। তবে শুনানিতে কমিশনের চেয়ারম্যান রেডক্লিফ এর অনুপস্থিতি, কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভার স্মারকলিপিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে কোনো কথা না থাকা এবং কমিশনের অমুসলিম সদস্য ও স্নেহ কুমার চাকমার উকিলদের সাথে কমিশনের দুই মুসলিম সদস্য ও মুসলিমলীগের উকিলদের দাঁতে দাঁত চেপে তর্কযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভবিষ্যত নিয়ে স্নেহ কুমার চাকমার মনে উদ্বেগ ও আশংকা সৃষ্টি হয়।
স্নেহ কুমার চাকমার লিখিত ‘দি পার্টিশন এন্ড দি চাকমা’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্টের মধ্যরাতে এ্যাকশন কমিটি হাজার খানেক সমর্থক নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ডেপুটি কমিশনার বাঙলোয় হাজির হন। ডি. সি. কর্ণেল জি এল হাইড বেড়িয়ে এসে তাদের স্বাগত জানান । স্নেহ কুমার চাকমা ডেপুটি কমিশনারকে জিজ্ঞাসা করেন, “স্যার, ইজ নট ইন্ডিয়া ইনডেপেনডেন্স নাও?” প্রতি উত্তরে ডি. সি বলেন, হ্যাঁ তোমরা এখন থেকে স্বাধীন।” স্নেহ কুমার চাকমা আরো বলেন, “ভারত স্বাধীন আইনে কি পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারতের অংশ নয় স্যার?” কমিশনার কর্ণেল জি এল হাইড উত্তর দেন, “ভারত স্বাধীন আইন ১৯৪৭ অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারত শাসনের অধীন।” স্নেহ কুমার চাকমা প্রশ্ন করেন, “স্যার, আমাদের কি জাতীয় পতাকা উড়ানো উচিত নয়?”
ডেপুটি কমিশনার, “হ্যাঁ, কিন্তু আমরা বৃটিশ নাগরিকরা জাতীয় পতাকা ওড়াই সূর্য উঠার সময়। অনুগ্রহ করে ভোরে আসুন। ফুটবল খেলার মাঠে জন সমক্ষে ভারতীয় জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দিন আর তখন আমি নিজেই স্যালুট করবো। এরপর আমি আমার অফিস ও বাংলোয় ভারতীয় জাতীয় পতাকা উড়াবো যেখানে আপনাদের সবাইকে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ করি। কাজেই অনুগ্রহ করে আপনারা আমার এই পতাকা উত্তলনের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।”
১৫ আগস্ট ১৯৪৭ সকালবেলা ফুটবল মাঠে স্নেহ কুমার চাকমা জনসমক্ষে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং ডেপুটি কমিশনার কর্ণেল হাইড সালাম জানাতে সেখানে আসেন। এরপর ডেপুটি কমিশনার স্নেহ কুমার চাকমা ও অন্যান্যদের তাঁর কার্যালয় ও বাংলোয় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান, যেখানে তিনি আনুষ্ঠানিক ও সরকারিভাবে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
১৭ আগস্ট ১৯৪৭ রেডিওতে রেডক্লিফ কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দেয়া হয়। এই ঘোষণা স্নেহ কুমার চাকমাসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসমিতির নেতাকর্মীদের গভীরভাবে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করে। ১৯ আগস্ট ১৯৪৭ স্নেহ কুমার চাকমার আহ্বানে ডেপুটি কমিশনারের বাংলোয় এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে চাকমা রাজাসহ সকল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হন। সেখানে ডেপুটি কমিশনার কর্ণেল হাইড এর উপস্থিতিতে সম্মেলন রেডক্লিফের রায় মেনে না নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৫ আগস্ট স্নেহ কুমার চাকমার নেতৃত্বে উত্তোলিত ভারতীয় জাতীয় পতাকা ২০ আগস্ট ৬ দিন পর্যন্ত উড্ডীন থাকে। এর পরদিন ২১ আগস্ট পাকিস্তানের বেলুট রেজিমেন্টের সেনারা ভারতের পতাকা নামিয়ে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করেন।
এভাবেই ভারত স্বাধীন আইনের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে স্থানীয় জনগণের স্বার্থকে তোয়াক্কা না করে প্রায় ৯৮% ভাগ অমুসলিম ও জুম্ম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতে সৃষ্টি হওয়া পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
এদিকে ১৯ আগস্ট ১৯৪৭ ডেপুটি কমিশনারের বাংলোয় সম্মেলন শেষ হওয়ার পরপরই একই দিন ৮ জন সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবী সাথে নিয়ে স্নেহ কুমার চাকমা ভারতের উদ্দেশ্যে রাঙ্গামাটি ত্যাগ করেন। ২১ আগস্ট ১৯৪৭ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম এলাকা পৌঁছেন। এরপর আর তিনি দেশে ফেরেননি। তবে দেশে ফিরে না গেলেও তিনি বসে থাকেননি। তাঁর জন্মভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের অধিকারের স্বপক্ষে কাজ করে গেছেন। বহু লেখালেখি চালিয়ে গেছেন। ১৯৮৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই কাজ চালিয়ে গেছেন।
জানা যায়, দেশভাগের পর স্নেহ কুমার চাকমা দিল্লীতে সর্দার প্যাটেলের সাথে সাক্ষাত করেন। বেঙ্গল কংগ্রেস কমিটির সাথে কথা বলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করে বাউন্ডারী কমিশন যে বড় অন্যায় করেছে সে বিষয়ে বেঙ্গল কংগ্রেস কমিটি ও সর্দার প্যাটেল উভয়ই একমত ছিলেন। প্যাটেল তাই স্নেহ কুমার চাকমাকে সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার পরামর্শ দেন যাতে ভারতের হস্তক্ষেপ করার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রয়োজনে সশস্ত্র বিদ্রোহ করতেও বলেছিলেন প্যাটেল। পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে প্যাটেল আশাবাদীও ছিলেন। কারণ তখন সামরিক হস্তক্ষেপ ছাড়া অন্যকোন পথ খোলা ছিল না পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের পাকিস্তান থেকে মুক্ত করার। কিন্তু জওহর লাল নেহেরু ছিলেন একেবারেই অনাগ্রহী। তার সংশয় ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়াস চালালে না জানি পাকিস্তানকে সমগ্র কাশ্মীর অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ দেয়া হয়।
উপসংহার
আজকের দিনেও বাংলাদেশে অনেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতে অন্তর্ভুক্তি চেয়েছেন বলে স্নেহ কুমার চাকমাকে বিরোধীতা করতে পারেন বা তাঁর সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। তাঁরা মনে করতে পারেন, তিনি বাংলাদেশ চাননি বা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী। যদিও তখনও বাংলাদেশ সৃষ্টির স্বপ্ন খোদ বাঙালিরাও দেখেননি। এটা বলছি এই কারণে যে, পরবর্তীতে পাকিস্তানের মুসলিম শাসকগোষ্ঠী আদিবাসী জুম্মদের যে পাকিস্তানবিরোধী হিসেবে দেখে এসেছে এবং এজন্য বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে তা বিভিন্ন সময়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও বাঙালি শাসকগোষ্ঠী ঐ মনোভাব উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে এবং গোড়া থেকেই জুম্মদের সেইভাবে দেখার একটা প্রবণতার অভিযোগ এখনও মেলে। তবে স্নেহ কুমার চাকমার আন্দোলন বা দাবি-দাওয়ার বিষয়টিকে ভাসাভাসাভাবে এবং একটা পূর্বসংস্কার নিয়ে দেখলে তেমনই মনে হতে পারে। মনে হতে পারে, তিনি বোধ হয় সারাজীবন পাকিস্তান আর পরবর্তীতে বাংলাদেশেরই বিরোধীতা করে গেছেন বা কেবল পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতেই অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করে গেছেন। বস্তুত সেসময় অধিকাংশ ভারতীয় নেতৃবৃন্দ, বাউন্ডারি কমিশন, এমনকি পাকিস্তানের শাসকরা কেউই পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্মদের বর্তমান, ভবিষ্যত নিয়ে এবং স্নেহ কুমার চাকমার আকুতিকে মন দিয়ে ও বোধ-বুদ্ধি দিয়ে বিচার করার চেষ্টা করেননি। কেউ তারা জুম্মদের অধিকার বিষয়ে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেননি।
আসলে স্নেহ কুমার চাকমা তাঁর সময়ে দেশবিভাগের ডামাডোলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পশ্চাদপদ আদিবাসী জুম্মদের রাজনৈতিক পরিণতি ও জাতীয় অস্তিত্ব নিয়ে শংকিত হন। দেশ বিভাগ নীতি বা ভারত স্বাধীনতার আইন অনুযায়ী তিনি বিশ্বাস করেছিলেন এবং বিশ্বাস করার যৌক্তিক ভিত্তি ছিল যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উপমহাদেশের অন্য সকল সংখালঘু আদিবাসী জাতিসমূহের ন্যায় তারাও ভারতেই অন্তর্ভুক্ত হবে। অপরদিকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হলেও তাদের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে কী কংগ্রেস বা ভারত, কী মুসলিমলীগ বা পাকিস্তান এর নীতি নির্ধারকদের কেউই এগিয়ে আসেন নি। প্রকৃতপক্ষে, পাকিস্তান আমলে শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক জুম্মদের উপর যে বিপর্যয়, শোষণ, নিপীড়ন, বঞ্চনা এবং স্বাধীন বাংলাদেশ আমলেও জুম্মদের যেভাবে আগ্রাসন, বঞ্চনা ও উপেক্ষার নীতি তাতে স্নেহ কুমার চাকমার আশংকা ও উদ্বেগকেই প্রমাণিত করেছে।
বলাবাহুল্য, পাকিস্তানী শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও এমনকি স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী নীতি-নির্ধারকরাও জুম্মদের অধিকার নিশ্চিতকরণে খুব বেশি এগিয়ে আসেননি। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আজও সরকারি ও বেসরকারিভাবে জুম্মদের ভূমি বেদখল হয়, জুম্মদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়, জুম্মদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা হয়, দশকের পর দশক ধরে বহিরাগত সেটেলারদের বেদখলকৃত জুম্মদের ভূমি-জমি ফেরত দেওয়া হয় না, নারী ধর্ষণ হয়, রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক এখনও দমন-পীড়ন, আটক, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা হয় এবং জুম্মদের জাতিগতভাবে নির্মূলের ষড়যন্ত্র চালানো হয়। দেশ বিভাগের সময় জুম্মরা যেখানে প্রায় ৯৮% ভাগ, সেখানে জুম্মরা আজ রাষ্ট্রের পৃষ্টপোষকতায় সংখ্যালঘু হওয়ার পথে। স্বাধীনতার পরেও জুম্মদের উপর ১৫টির মত কেবল গণহত্যা চালানো হয়। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি করে দীর্ঘ ২৫ বছরেও সেই চুক্তি অবাস্তবায়িত থাকে এবং খোদ সরকার ও প্রশাসন সেই চুক্তি লংঘন করে। চুক্তির পরেও জুম্মদের উপর ২০টির অধিক বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা হয়।
অপরদিকে, ভারতে তুলনামুলকভাবে আদিবাসী মানুষরা, জনজাতিসমূহ অনেক এগিয়ে চলেছে। তাদের অনেকেই রাজ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে, কেউ কেউ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পেয়েছে। যদিও এখনও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে সেখানে। কিন্তু সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামের মত রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় লক্ষ লক্ষ বহিরাগতের অনুপ্রবেশ ঘটেনি, ভূমি বেদখলের ঘটনা ঘটেনি, পার্বত্য চট্টগ্রামের গণহত্যার মত নৃশংস গণহত্যা হয়নি।
কাজেই স্নেহ কুমার চাকমার প্রচেষ্টা সফল না হলেও তাঁর যে চিন্তা, তাঁর যে উদ্বেগ, তাঁর যে অনুভূতি এবং জুম্মদের অস্তিত্ব নিয়ে আশংকার যে যৌক্তিকতা আজও একবিন্দুও হ্রাস পায়নি। বরং তা আরও তীব্র ও গভীর হয়ে উঠছে। বস্তুত ১৯৪৭ সালে স্নেহ কুমার চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রাম ছেড়ে আসলেও পরবর্তীতে সেখানে শত, হাজার স্নেহ কুমার চাকমা সৃষ্টি হয়েছেন এবং জুম্মদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন, এখনও করছেন। আগামীতে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা বিশ্বে যেখানে জুম্মরা রয়েছেন সেখানেই স্নেহ কুমার চাকমার চেতনার বীজ গজিয়ে উঠবে বলেই ধারণা করা যায়। তাঁর প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সহায়ক তথ্য:
১। The Partition & The Chakmas and other writings of Sneha Kumar Chakma, Edited by D K Chakma;
২। প্রধীর তালুকদার, দেশভাগের নানা দিক;
৩। Mr. Sneha Kumar Chakma’s memorandum to CHADIGAN CONFERENCE – Amsterdam Oct 10 – 11 1986.