লালরিজাপ বমের রক্তের সাথেও বেঈমানি করল কেএনএফ

0
767

ক্যবা মারমা

কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) যে একটা পুরোপুরি পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনাবাহিনীর মদতে পরিচালিত সংগঠন এবং সেনাবাহিনীর লক্ষ্য পরিপূর্ণের হাতিয়ার তা তাদের ফেসবুক পেইজে ৩০ এপ্রিল ২০২২ প্রচারিত তথ্য (জেএসএসের বিরুদ্ধে “সন্ত্রাসী ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের” অভিযোগ) থেকে পুরোপুরি পরিষ্কার হয়েছে। উক্ত অভিযোগের ৩নং তথ্যে বান্দরবান সদরের বালাঘাটা-উজিপাড়ার রাস্তায় হেবরন বম পাড়ার লালরিজাপ বম-এর মৃত্যু ঘটনা নিয়ে যে তথ্য দিল, তা দেখে ভীষণ অবাক হলাম। কুকি-চিন সংগঠনটি নিজের জাতির সন্তানের রক্ত নিয়েও বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারলো? সেনাবাহিনী কর্তৃক কৃত অপরাধকে কল্পকাহিনী বানিয়ে বৈধতা দেয়ার জন্য তারা এতো নিচে নেমে যেতে পারলো?

ঘটনাটি নিয়ে আমার এখনো মনে আছে, সেদিন লালরিজাপ বম তাঁর পরিবারে সন্তান প্রসব (সম্ভবত তাঁর বউয়ের) সংক্রান্ত কারণে কয়েকজন সঙ্গে নিয়ে রাতের বেলায় শ্বশুরবাড়ির দিকে রওনা দিয়েছিলেন এবং যাওয়ার পথে (নোয়াপতং বাঘমারা ঝিড়ির মাথায়) সেনা সদস্যদের ইচ্ছাকৃত গুলিবর্ষণে নিহত হন। ইচ্ছাকৃত বলছি এই কারণে যে, রাতে যাওয়ার সময় আলো নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাঁর সাথে আরও লোক ছিল। সেখানে শান্তিবাহিনীর সাথে কোনো প্রকার গোলাগুলি হয়নি। তাঁর সঙ্গী সকালে ফিরে এসে ঘটনাটি জানানোর পর পাড়াবাসীরা জানতে পারে এবং আমাদের কানেও পৌঁছে।

আমরা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেছিলাম। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তখনও বলা হয়েছিল শান্তিবাহিনীর সাথে সেনাবাহিনীর গোলাগুলিতে লালরিজাপ বম মারা গেছেন। আজকে কুকি-চিনের ফেইসবুক পেইজে একই বক্তব্য দেখতে পেলাম। আমরা প্রতিবছর তাঁর কবরস্থানে ফুল দিতে যেতাম। কিন্তু পরবর্তীতে ইউপিডিএফ সংগঠন বালাঘাটায় ঘাঁটি স্থাপন করায় লালরিজাপ বম-এর কবরে আর ফুল দিতে যাওয়া হয় না।

হেবরন পাড়ার প্রায় সকল লোক আমাদের চেনাজানা ছিল এবং এখনো অনেকজনকে চিনি। তিন-চার বছর আগেও লালরিজাপ বম এর ছোট ভাই রোয়াংছড়িতে আমার সাথে দেখা করে গিয়েছিল। লালরিজাপ বম পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির শহীদ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত এবং তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়ে থাকে।

অথচ বম ও ছোট ছোট পাহাড়ি জাতির বঞ্চনা ও অধিকারের দাবি তোলা সংগঠন কেএনএফ লালরিজাপ বমকে নিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা কাহিনী তৈরি করে হত্যাকারী সেনাবাহিনীর মতো এমন বানোয়াট তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করতে পারলো, তা সত্যিই হতবাক হয়েছি।

বি:দ্র: ক্যবা মারমার ১ মে ২০২২ তারিখের ফেসবুক স্টাটাস থেকে নেয়া।