হিল ভয়েস, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, বিশেষ প্রতিবেদক: আগামীকাল ৮ মার্চ ঐতিহাসিক কাল ধরে শোষণ, বঞ্চনা, অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও অর্থনীতির উপর সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় নারী সমাজের সংগ্রামের ইতিহাসে তাৎপর্যময় আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ)-এর ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ উপলক্ষে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির উদ্যোগে রাঙ্গামাটিতে র্যালী ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। র্যালীটি জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে শুরু হয়ে ডিসি অফিস প্রাঙ্গণ ঘুরে এসে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। র্যালী পরবর্তী জেলা শিল্পকলা একাডেমির অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য গৌতম কুমার চাকমা।
এছাড়াও বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মংসানু চৌধুরৗ, টিআইবি’র ট্রাষ্টি এডভোকেট সুষ্মিতা চাকমা, সাংবাদিক সুমি খান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্ত, এম এন লারমা মেমোরিয়েল ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ইন্টুমনি তালুকদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর ত্রিপুরা (নান্টু), পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মনি চাকমা। এছাড়াও সমাজের প্রগতিশীল আদর্শে বিশ্বাসী ব্যক্তি, সংগঠন ও ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানটি Voice Of PCP (https://www.facebook.com/keokradongpcp) ফেসবুক পেইজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
জাতিসংঘ এবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে- “Gender equality today for a sustainable tomorrow”। বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে সকলের জন্য স্থিতিশীল একটি ভবিষ্যৎ অর্জনে বিশ্বব্যাপী নারী অধিকার নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করেছে। জাতিসংঘ মনে করে, জেন্ডার সমতা ছাড়া একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যত অর্জন সম্ভব নয়। জাতিসংঘের এই প্রতিপাদ্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম নারী সমাজের বিদ্যমান বাস্তবতার আলোকে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি এ বছর তার প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করেছে- “সমাজে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠাকল্পে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে নারী সমাজ অধিকতর সামিল হউন”।
উল্লেখ্য, ১৯১০ সালে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে বিশ্বের সংগ্রামী ও সমাজতান্ত্রিক নারীদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে আন্তর্জাতিক নারী মুক্তি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সমাজতান্ত্রিক নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিনের প্রস্তাব অনুসারেই ৮ মার্চ তারিখে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ উদযাপনের সূত্রপাত ঘটে। মূলত ১৯০৮ সালে নিউইয়র্ক শহরে কাজের অমানবিক অবস্থা ও বৈষম্যমূলক মজুরীর প্রতিবাদে পোশাক কারখানার নারী শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের স্মরণে এই দিবসটিকে বেছে নেয়া হয়। পরবর্তীতে বিশ্বের দেশে দেশে অব্যাহতভাবে নারী সমাজের জাগরণ ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ১৯৭৬ হতে ১৯৮৫ সময়কালকে নারী দশক হিসেবে ঘোষণা করে। ফলে এই আন্তর্জাতিক নারী দিবস আরও ব্যাপকতা লাভ করে এবং বিশ্বব্যাপী নারী সমাজের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ ও গভীর অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করতে থাকে।
অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র আন্দোলন চলাকালে শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক জুম্ম নারীর উপর ধর্ষণ, হত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে অধিকতর সংগঠিত হয়ে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে ১৯৮৮ সালের ৮ মার্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন শামসুন নাহার হলের ১৩ নং কক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের মার্স্টাসের ছাত্রী গৌরিকা চাকমা ও ইতিহাস বিভাগের মার্স্টাসের ছাত্রী শিলা চাকমার নেতৃত্বে জুম্ম ছাত্রীদের উদ্যোগে হিল উইমেন্স ফেডারেশন গঠিত হয়।