হিল ভয়েস, ৩ মে ২০২১, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার জীবতলী ইউনিয়ন ও কাপ্তাই উপজেলার কাপ্তাই ইউনিয়নের স্থানীয় জুম্ম গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আয়োজিত এক সভায় সেনাবাহিনী জেএসএস সদস্যদের ব্যাপারে খবর না দিলে স্থানীয় জুম্মদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে হুমকি প্রদান করেছে। এ নিয়ে এলাকার জনগণের মধ্যে গভীর আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ২ মে ২০২১ সকাল আনুমানিক ১০:০০ টার দিকে জীবতলী ইউনিয়নের সেনাবাহিনীর ৭ বেঙ্গলের সেভেন আর ই সেনা ক্যাম্পের কম্যান্ডার লে: কর্ণেল মো: ফেরদৌস জীবতলীর ১১৭নং কৌশল্যাঘোনা মৌজা ও কাপ্তাইয়ের ১১৯নং ভাজ্যাতলী মৌজার গণ্যমান্য জুম্মদের নিয়ে এক সভার আয়োজন করেন। সভায় লে: কর্ণেল মো: ফেরদৌস জুম্মদের উদ্দেশ্য করে বলেন, হরিণছড়া এলাকা, ভাঙামুড়া ও বারুদগলা মৌন- এই তিনটি গ্রামে প্রতিনিয়ত জেএসএস সন্ত্রাসীরা অবস্থান করে, কিন্তু আপনারা কোনোদিন আমাদের ক্যাম্পে খবর দেননি। তাই আপনারা আজ থেকে জেএসএস এর কোনো সভায় অংশ নিতে পারবেন না, তাদের চাঁদা দিতে পারবেন না। সন্ত্রাসী আসলে ক্যাম্পে অবশ্যই খবর দিতে হবে।
লে: কর্ণেল মো: ফেরদৌস আরও বলেন, এরপর যদি কোনো সন্ত্রাসী গ্রামে আসে, এরপর যদি ক্যাম্পে খবর দেওয়া না হয়, সেক্ষেত্রে আমরা সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আপনাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এদিকে সেনাবাহিনীর এই হুমকিমূলক বক্তব্যের পর এলাকার জুম্ম জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয় বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক মুরুব্বি বলেন, যে সেনাবাহিনী আজ জেএসএস কর্মীদের সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলছে, সেই সেনাবাহিনীই তো বছরখানেক আগে সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীদের একটি সশস্ত্র দল রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার জীবতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়ায় এনে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের পার্শ্ববর্তী জীবতলীর চেয়ারম্যান পাড়ায় বর্তমানে সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীদের উক্ত দলটি ঘাঁটি গেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাত হলেই সেই সন্ত্রাসীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেনা ক্যাম্পের নাকের ডগায় জুম্মদের আশেপাশের গ্রামে ঘোরাফেরা করে। সেই সন্ত্রাসীরা আসার পর থেকেই জুম্মদের এলাকায় চাঁদাবাজি, মারধর ও হত্যাকান্ড চালিয়ে আসছে। কিন্তু সেনাবাহিনী এসব দেখেও দেখে না এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ দূরের কথা কোনো কথাও বলে না।
জানা গেছে, সেনাবাহিনী আহুত এই সভায় উপস্থিত ছিলেন ১নং জীবতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুদত্ত চাকমা, ৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ লতিফ, ১১৯নং বাজ্যাতলী মৌজার হেডম্যান থোয়াই অং মারমা, ১১৭ নং কৌশল্যাঘোনা মৌজার হেডম্যান যতীন তঞ্চঙ্গ্যা, জীবতলী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য দীপংকর চাকমা, জীবতলী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ভাগ্যধন চাকমা, আলোরাণী কার্ব্বারী, কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বাদল চাকমা প্রমুখ।