হিল ভয়েস, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বিশেষ প্রতিবেদক: বাংলাদেশের খ্যাতিমান কলামিস্ট, গবেষক, সাংবাদিক ও আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের বন্ধু সৈয়দ আবুল মকসুদ আর নেই। গতকাল ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭:৩০ টায় তিনি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ‘বিকালে সৈয়দ আবুল মকসুদ হঠাৎ করে শ্বাসকষ্টে ভুগলে তৎক্ষণাৎ পরিবারের লোকজন তাঁকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করে। তারপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ৭:৩০ টার দিকে মারা যান।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, সৈয়দ আবুল মকসুদ ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা সৈয়দ আবুল মাহমুদ ও মা সালেহা বেগম।
সৈয়দ আবুল মকসুদের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬৪ সালে এম আনিসুজ্জামান সম্পাদিত সাপ্তাহিক নবযুগ পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে। পরে সাপ্তাহিক ‘জনতা’য় কাজ করেন কিছুদিন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বার্তা সংস্থায় যোগ দেন। ২০০৮ সালের ২ মার্চ বার্তা সংস্থার চাকরি ছেড়ে দেন। তিনি দৈনিক প্রথম আলোতে ‘সহজিয়া কড়চা’ এবং ‘বাঘা তেঁতুল’ শিরোনামে আদিবাসীদের অধিকার, সমাজ, রাজনীতি ও সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে নিয়মিত কলাম লেখেন।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বাংলাাদেশের আদিবাসীদের করুণ দশা, রাজনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে নানা বই ও প্রবন্ধ লিখেছেন। এছাড়া তিনি উপমহাদেশের বহু প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবন ও কর্ম নিয়েও গবেষণা করেছেন। বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।
বামধারার প্রগতিশীল এ লেখক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আদিবাসীদের ন্যায়সঙ্গত বিভিন্ন আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। মিটিং-মিছিল, সভা-সমাবেশে সর্বাগ্রে তাঁর অংশগ্রহণ দেখা যেত। তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য সমান অধিকারের জন্য রাজপথ ও লেখালেখিতে সোচ্চার ছিলেন। আদিবাসীদের কাছে তিনি ছিলেন অন্যতম এক ভরসার জায়গা। আদিবাসীরা যখনি কোন সংকটের সম্মুখীন হয়েছেন তখনই তিনি তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আদিবাসীদের অধিকারের জন্য তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উত্তর বঙ্গ ও দক্ষিণ বঙ্গ সহ সমগ্র বাংলাদেশ ঘুরেছেন। আদিবাসীদের পরম বন্ধু, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক লেখক, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানাই।