হিল ভয়েস, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বুধবার, বান্দরবান: লামা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় হাতি দিয়ে গাছ উজাড়ের খবর পাওয়া গেছে। সম্প্রতি উপজেলার সদর ইউনিয়নের এক বাসিন্দা ঈশ্বর চন্দ্র নামের এক ত্রিপুরা যুবকের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, লামা ইউনিয়নের দুর্গম পোপা এলাকায় ১২টি পোষা হাতি রয়েছে। এইসব হাতির মালিক সিলেট মৌলভী বাজার নিবাসী জনৈক মালয় কোম্পানী। জানা গেছে, ২০০০ সাল থেকে লামা-থানছি, তৎসংলগ্ন আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় সরকারি খাস অশ্রেণিভুক্ত বনাঞ্চলের বড় বড় বৃক্ষ আহরণে নিয়োজিত রয়েছে এসব হাতি। হাতির মালিকদের সঙ্গে প্রভাবশালী একটি কাঠ ব্যবসায়ী চক্র চুক্তিবদ্ধ হয়ে এসব করে আসছে। এ চক্রটি পাহাড়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মোটা অঙ্কের চাঁদা দিয়ে তাদের অবৈধ ব্যবসার কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। লামা সদর ইউনিয়নের দুর্গম পানসি পাড়ার এক মুরুং যুবকের সঙ্গে কথা হলে জানা যায়, সদর ইউনিয়নের দুর্গমের ঘিলা পাড়া, পানসি পাড়া, লেংটা ঝিরি, শিল পাজা ও লাইল্যা পাড়া এলাকায় হাতি দিয়ে বড় বড় গাছ টানা হয়। এইসব গাছের একাংশ লামার পোপা খাল দিয়ে নদী পথে উপজেলা সদরে এনে গাড়িতে করে পাচার হয়। আর বেশির ভাগ গাছ সরই ইউনিয়নের লুলাইং এলাকা দিয়ে কেয়াজুপাড়া হয়ে লোহাগাড়া দিয়ে পাচার হয়। দুর্গম এলাকা হওয়ায় সেখানে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা। উল্লেখ্য, এসব কর্তনকৃত কাঠসমূহ লামা ও বান্দরবান বন বিভাগের প্রদত্ত নানা জোত পারমিটের অনুবলে পাচার হয়। সরকারি সংরক্ষিত কিংবা অ-রক্ষিত বনাঞ্চলে বিদ্যমান কোনো মাদার ট্রি কর্তন, আহরণ বন আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধি। কিন্তু লামা-আলীকদম ও থানছি উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ের (সরকারি খাস-অরক্ষিত) প্রাকৃতিক সৃজিত শতবর্ষী- গর্জন, চাম্পাফুলসহ মা গাছ কর্তন ও আহরণ হরদম চলছে। দুর্গম ওইসব এলাকার পাহাড়ে কর্তনকৃত গাছের গোড়ালি গুলোই প্রমাণ করবে কীভাবে উজাড় হয়েছে শতবর্ষী বৃক্ষরাজি। এ ব্যাপারে হাতির মালিক মালয় কোম্পানীকে ফোন করা হলে, তিনি সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে চাননি।
লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, যেহেতু সংরক্ষিত বনাঞ্চল নয়, সেহেতু বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারে পড়ে না। যদি লামা নদী পথে এসব গাছ আনা হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের লোকজন তা জব্দ করবে। পোপা ও লুলাইং মৌজায় যেখানে হাতি রয়েছে, দুর্গম এলাকা হওয়ায় বন বিভাগের পক্ষে কোনো ব্যবস্থা নেয়া কষ্টসাধ্য। অশ্রেণিভুক্ত বন উজাড় বন্ধে জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাস কিংবা অশ্রেণিভুক্ত বন রক্ষায় জেলা প্রশাসনের আইন প্রয়োগের ক্ষমতা রয়েছে। লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর এ জান্নাত রুমি বলেন, বিনা অনুমতিতে হাতি দ্বারা গাছ আহরণ কিংবা হাতি রাখা আইনত দণ্ডনীয়। তিনি বলেন, হাতি সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র: মানবজমিন,২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯