হিল ভয়েস, ০১ এপ্রিল ২০২০, পার্বত্য চট্টগ্রাম: সেনাবাহিনী ও বিজিবি কর্তৃক ৫ জনকে আটক, ৪ জনকে মারধর, ৭টি গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ি তল্লাসী ও ত্রাস সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্লাঙ্ক ফায়ার, লংগদুতে প্রত্যাহৃত জায়গায় নতুন করে ক্যাম্প স্থাপনের ঘোষণা করা হয়েছে বলে জনসংহতি সমিতির মার্চ মাসের মাসিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
০১ এপ্রিল ২০২০ তারিখে জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত “মার্চ ২০২০: পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর মাসিক প্রতিবেদন” শীষক রিপোর্ট বলা হয়েছে যে, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী বিরাজমান বিশেষ বাস্তবতা ও আতঙ্কের মধ্যেও বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নস্যাৎ করা, জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনকে দুর্বল করা, সর্বোপরি চুক্তি পরিপন্থী ও জুম্ম স্বার্থ-বিরোধী নীলনক্সা নির্বিঘ্নে বাস্তবায়ন করার হীনতৎপরতা অব্যাহতভাবে চলছে। তারই অংশ হিসেবে ২০২০ সালের মার্চ মাসেও সাম্প্রদায়িক হামলা, জুম্মদের জায়গা-জমি বেদখল, ধর্মীয় পরিহানি, অবৈধ ধরপাকড় ও নির্যাতন, ঘরবাড়ি তল্লাসী, সেনাবাহিনী কর্তৃক সশন্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে মদদ, জুম্ম নারীর উপর সহিংসতা ইত্যাদি ফ্যাসীবাদী ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
জনসংহতি সমিতি আরো বলেছে যে, এসব মানবতা বিরোধী তৎপরতায় মার্চ মাসে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় সেটেলার বাঙালিদের সাম্প্রদায়িক হামলায় একজন জুম্ম আহত; মানিকছড়িতে সেটেলার বাঙালিদের অগ্নিসংযোগে একটি বৌদ্ধ মন্দির ভস্মিভূত; সেনাবাহিনী ও বিজিবি কর্তৃক ৫ জনকে আটক, ৪ জনকে মারধর, ৭টি গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ি তল্লাসী ও ত্রাস সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্লাঙ্ক ফায়ার, লংগদুতে প্রত্যাহৃত জায়গায় নতুন করে ক্যাম্প স্থাপনের ঘোষণা; সেনা-সমর্থিত সংস্কারপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক একজন ছাত্রসহ চারজনকে অপহরণ ও মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায়, ঘরবাড়ি তল্লাসী ও জিনিসপত্র ভাঙচুর এবং কয়েকজনকে মারধর; সেটেলার বাঙালি কর্তৃক দুইজন মারমা কিশোরী যৌন সহিংসতার শিকার; বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ নেতা কর্তৃক আদিবাসী জুম্মদের ভোগদখলীয় এক হাজার একরের অধিক জুম ভূমি জবরদখল ইত্যাদি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয় যে, মার্চ মাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহকে পাশ কাটিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সীমান্ত সড়ক ও স্থলবন্দর নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেছেন যা পার্বত্য চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন বলে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় সাজেক ইউনিয়নে, বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার লামা ইউনিয়নে ও রুমা উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নে এবং খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নে হামের শিকার হয়ে ৯ শিশুর মৃত্যু এবং আরো কমপক্ষে ৩৫০ জন হামে আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে। হামে ৯ জন শিশুর মৃত্যু ও ৩৫০-এর অধিক আক্রান্তের ঘটনার মধ্য দিয়ে পাহাড়ের দুর্গম এলাকার আদিবাসী জুম্মদের নাগরিক সুবিধা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে।
জনসংহতি সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয় যে, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ পার্বত্য জেলা পরিষদের হস্তান্তরিত বিষয় হলেও সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদের সাথে যথাযথ সমন্বয় ছাড়া তিন পার্বত্য জেলার ডেপুটি কমিশনারগণ একতরফাভাবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ শাসনব্যবস্থার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে করোনাভাইরাস মোকাবেলা সংক্রান্ত সরকারি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হয়নি বলে জানা যায়।
সূত্র: “মার্চ ২০২০: পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর মাসিক প্রতিবেদন” শীর্ষক জনসংহতি সমিতির রিপোর্ট
 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
             
                             
                             
                             
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        