হিল ভয়েস, ২০ জানুয়ারি ২০২১, বান্দরবান: বান্দরবান জেলাধীন বান্দরবান সদর উপজেলার রাজভিলা ইউনিয়নে ধর্ষণের চেষ্টাকারী সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সেনাবাহিনী উল্টো ভুক্তভোগী আদিবাসী মারমা নারীটির স্বামী, দেবর ও স্থানীয় এক ওয়ার্ড মেম্বারের ছেলেকে মারধর করে জখম করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ১৯ জানুয়ারি ২০২১ সকালের দিকে জনৈক সেনা মেজরের নেতৃত্বে, স্থানীয় থানার ওসি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গ্রামবাসীরাসহ ভুক্তভোগীকে নিয়ে তাইনখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণি কক্ষে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনার জন্য এক সালিশ বসে। সালিশে মেজর ভুক্তভোগী নারীকে জিজ্ঞেস করে, তোমাকে যে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে তার কোনো প্রমাণ আছে? মেয়েটি ভাঙা বাংলায় বলেন, বাড়িতে কেবল আমি একা ছিলাম আর যখন লোকজন আসে তখন সে দ্রুত পালিয়ে যান। এরপর জনৈক মেজর নারীটির কথায় বিশ্বাস না করে কোন ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা ঘটেনি এবং বিচার এখানেই শেষ বলে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
এরপর একই দিন সন্ধ্যা ৬:০০ টার দিকে ধর্ষণের চেষ্টার শিকার মারমা নারীটির স্বামী চাইথোয়াই প্রু মারমা (২৫), দেবর রেছে অং মারমা (১৯) ও স্থানীয় ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার মহিন্যু মারমার ছেলে পুহ্লছে মারমা (১৫) বাড়িতে আগুন পোহাচ্ছিলেন। এমন সময় তাইনখালি বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পের ৫-৬ জনের একদল সেনা সদস্য সেখানে আসে এবং জোরপুর্বক উক্ত তিনজনকে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়।
এসময় সেনা সদস্যরা উক্ত তিনজনকে রাস্তার ধারে লাইটপোস্টের নীচে দাঁড় করিয়ে মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তোলে এবং ইচ্ছেমত মারধর করে। এতে সেনা সদস্যদের থাপ্পরের আঘাতে ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর ছোট ভাই রেছে অং মারমার নাক থেকে রক্তও বের হয়।
পরে এলাকাবাসী খবর পেলে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় এবং নির্দোষ ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। সেনা সদস্যরা গ্রামবাসীর দাবি প্রত্যাখান করে উল্টো গ্রামবাসীদের উপরে লাঠিচার্জ করে। লাঠিচার্জের ঘটনায় প্রায় ১০-১৫ জন গ্রামবাসী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে গ্রামবাসীরা উক্ত তিন ব্যক্তিকে সেনা সদস্যদের হাত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
অপরদিকে, আজ ২০ জানুয়ারি ২০২১ সকালে সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসীরা উক্ত ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার চাইতে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কার্যালয়ে পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে গেলে সেখানে ৪০ জন গ্রামবাসীকে অবরোধ করে রাখা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এমনকি, এমন গ্রামবাসীদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয় বলেও জানা গেছে। পরে আরও একদল গ্রামবাসী সেখানে যায় বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জানুয়ারি ২০২১ দুপুর আনুমানিক ১:০০ টার দিকে বান্দরবান সদর উপজেলার রাজভিলা ইউনিয়নে সেনাবাহিনীর এক সদস্য কর্তৃক নিজ বাড়িতে এক আদিবাসী মারমা নারী (২৩) ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়। ঘটনার সময় জুম্ম নারীটির সাথে বাড়িতে তার দুই বছরের এক সন্তান ছিল। এসময় তার স্বামী বাড়িতে ছিলেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত প্রায় দেড় মাস ধরে তাইনখালি বাজার পাড়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী তাইনখালি বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অস্থায়ী ক্যাম্প করে প্রায় ৩০ জনের সেনাবাহিনীর একটি দল অবস্থান করছে। ঐ সেনাদলের এক সদস্য ১৮ জানুয়ারি দুপুর ১:০০ টার দিকে সাদা পোশাকে ওই জুম্ম নারীর বাড়িতে আসে। এসময় সেনা সদস্যটি বাড়িতে একা পেয়ে জুম্ম নারীটিকে ঝাপটে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সাথে সাথে নারীটি চিৎকার করলে আশেপাশের গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে এগিয়ে আসে। এরপর অবস্থা বেগতিক দেখে সেনা সদস্যটি দ্রুত অস্থায়ী ক্যাম্পে পালিয়ে যায়।
পরদিন ১৯ জানুয়ারি ২০২১ সকালের দিকে তাইনখালি বাজার পাড়াসহ আশেপাশের পাঁচটি গ্রামের মানুষ ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে সেনা সদস্য কর্তৃক এই ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং দোষী সেনা সদস্যের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
এতে সেনা কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদকারী জুম্ম গ্রামবাসীদের উপর ক্ষুব্ধ হয়। ফলে সেনাবাহিনী দোষী সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো জুম্ম গ্রামবাসীদের প্রতিবাদে বাধা দেয় এবং লাঠিপেটা করে।
বর্তমানে ঐ এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
             
             
                             
                             
                             
                                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        