হিল ভয়েস, ৯ আগস্ট ২০২৩, চট্টগ্রাম: আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, চট্টগ্রাম অঞ্চল কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের জীবন আজ সংকটে। তিনি বলেন, আদিবাসী শব্দ বাতিল করলে আদিবাসীরা বিলুপ্ত হয়ে যায় না। আদিবাসীরা যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন আদিবাসী হিসেবেই থাকবেন।
আজ ৯ আগস্ট ২০২৩ বিকাল ৩ টায় দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের ২য় পর্ব হিসেবে চট্টগ্রামের থিয়েটার ইস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত আলোচনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রানা দাশগুপ্ত এবং প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মুহাম্মদ আলা উদ্দিন।
এছাড়াও আলোচনা সভায় সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, উদীচী’র চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সভাপতি জসীম চৌধুরী সবুজ, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী সুমী খান, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি তাপস হোড়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক বসুমিত্র চাকমা প্রমুখ। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সদস্য মতি বিকাশ ত্রিপুরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে যতবার জাতিসংঘ আদিবাসী দিবস পালন করা হয়েছিল আমরা লক্ষ্য করেছিলাম, আজকের সরকার দল আওয়ামী লীগ আদিবাসী দিবসকে মর্যাদাপূর্ণভাবে পালন করেছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আদিবাসীদের আদিবাসী বলা যাবে না- এই প্রজ্ঞাপনটি এমন একটি সরকারের সৃষ্ট যারা অতীতে আদিবাসী দিবসে সংহতি জানিয়েছিল। আজকের সেই ক্ষমতাসীন দল আদিবাসী শব্দটিকে মানতে পারছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আদিবাসী শব্দকে ভুললেই কিন্তু আদিবাসীরা বিলুপ্ত হয়ে যায় না। আমরা বলতে চাই, আদিবাসীরা আদিবাসী হিসেবেই জন্মগ্রহণ করেছেন এবং যতদিন তারা বেঁচে থাকবেন ততদিন আদিবাসী হিসেবেই থাকবেন। আদিবাসী হিসেবে তাদের যে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই, এই লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
শ্রী দাশগুপ্ত বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতি নির্বাচনে প্রতিশ্রুত দেয়, যদি তারা নির্বাচনে জিতে যায় তাহলে অমুক অমুক অধিকার বাস্তবায়ন করবে। সকলের মনে রাখতে হবে, আন্দোলন চলছে, আন্দোলন চলবে। এখন আমাদের দেখতে হবে সরকার আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তার কী হয়। বাংলাদেশে এই যে আজকের জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জাগ্রত আন্দোলন, এই আন্দোলন বাংলাদেশের সকল নিপীড়িত, মেহনতি মানুষের আন্দোলন, এই আন্দোলনকে সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এগিয়ে নিতে হবে।’
কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের নিজের স্বকীয়তা বা জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় নিজেদের দায়িত্ব বেশি। দেশের যে ম্যাকানিজম সেখানে আদিবাসীদের নিজের ভাষাকে শক্তিশালী করতে হবে, না হলে সেখানে বাংলা ভাষা প্রবেশ করবে। এজন্য একাডেমিকের বাইরে নিজস্ব সাহিত্য চর্চা করতে হবে, কারণ সাহিত্যের বিকাশ না ঘটালে সেই ভাষা রক্ষা করা কঠিন, তাই সাহিত্য চর্চা করা দরকার।’ এছাড়াও তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের যে বনভূমি রয়েছে তাকে রক্ষা করা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির কথা বলেন।
ড. আলা উদ্দিন বলেন, ‘আদিবাসী তরুণদেরকে তাদের অবস্থানকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে, যেন সরকার অগ্রাহ্য করতে না পারে। তরুণদের নিজেদের ইতিহাস ভালোভাবে জানতে হবে, অভ্যন্তরীণ সংঘাত যত বেড়ে যাবে ততই শাসকগোষ্ঠী ও বিশেষ মহল সোচ্চার হবে।’
জসীম চৌধুরী সবুজ বলেন, ‘সরকার আদিবাসী দিবস পালনে সহায়তা না করার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ জারি করেছে। এছাড়াও সরকার তিন পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোতে তার অনুসারী লোকজনকে বসিয়ে রেখেছে এবং তাদের মাধ্যমে এজেন্ডাগুলি বাস্তবায়ন করছে।’
সুমী খান বলেন, ‘গতবছর আদিবাসী শব্দটি উচ্চারণ না করার জন্য সরকার একটি ঘোষণা দিয়েছিল যে, কোনো টেলিভিশন, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী যাতে আদিবাসী শব্দটি উচ্চারণ না করে। এবছরও সরকার একইভাবে সার্কুলার দিয়েছে। কিন্তু মহামান্য আদালত নির্দেশ জারি করেছে যে, আদিবাসী শব্দটি উচ্চারণ করতে কোনো বাধা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আত্মনিয়ন্ত্রণের যে অধিকার সেটি আদায় করেই নিতে হবে। সরকারি স্থাপনা ও পর্যটনের নামে হাজার হাজার একর ভূমি দখল করা হচ্ছে এবং রাষ্ট্র এখানে ভুমিদস্যুর ভূমিকা পালন করছে। ধর্মান্তরকরণ রাজনীতির শিকার পাহাড়ের সাধারণ আদিবাসীরা।’
অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশে জাতীয়ভাবে আদিবাসী দিবস পালিত হলেও বাংলাদেশে তার উদাহরণ নেই। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি ছাড়াও আদিবাসী, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষ অবদান রেখেছেন। কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তীতে বাংলাদেশের আদিবাসীরা অবহেলাতেই থেকে গেছে।’
কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল বলেন, ‘নায্যতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র চলেনি বলে ভারত ও পাকিস্তান একই সময়ে স্বাধীন হলেও দুইটি রাষ্ট্রের ভিন্ন বাস্তবতা দেখতে পাওয়া যায়। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশেও ন্যায়ের অভাব রয়েছে। বাঙালি যেখানে রক্ত দিয়ে নিজের ভাষাকে রক্ষা করেছে তারা কিভাবে অন্য জাতির সাথে এমন আচরণ করতে পারে। আদিবাসীদের নিজের ভাষা, সংস্কৃতি, ভূমিকে আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে।’
পাহাড়ী ভট্টাচার্য বলেন, ‘দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় চল্লিশ লক্ষ আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে। যে সকল প্রত্যাগত আদিবাসী শরণার্থী ভারতে অবস্থান করছে চুক্তি অনুযায়ী পুনর্বাসনের করার কথা থাকলেও তা এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। এছাড়াও ভূমি কমিশন, সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি। ভুমি কমিশনে হাজার হাজার আবেদন জমা পড়লেও তার কার্যক্রম আগায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের মাঝে পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস, হত্যা-গুমের মত পরিস্থিতি বিরাজমান রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সরকার আদিবাসীদের উপর যে আচরণ করছে তা অন্য দেশে খুব কমই দেখা যায়।’
বসুমিত্র চাকমা বলেন, ‘তরুণরাই হচ্ছে অধিকার আদায়ের মূলশক্তি, অধিকার আদায়ে তরুণদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের আদিবাসী তরুণ সমাজকে তারুণ্যের শক্তি সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। আমাদের যে অভ্যন্তরীণ শক্তি রয়েছে তা নিয়ে আমরা আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি। সমাজ পরিবর্তনে তারুণ্যই অবদান রেখে গেছে যা আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই।’
স্বাগত বক্তব্যে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক হ্লামিউ মারমা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আদিবাসীদের অবদান থাকলেও স্বাধীনতার পরবর্তীতে বাংলাদেশের আদিবাসীদের উপেক্ষা করে সংবিধান রচনা করা হয়েছে। পরবর্তীতে ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধনের মধ্যে দিয়ে বাঙালি বলে আদিবাসীদের উপেক্ষা করা হয়েছে।’
সভা শেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দের পরিবেশনে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, দুপুর ২ টায় চট্টগ্রামের চেরাগি পাহাড় মোড়ে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের ১ম পর্ব উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় এবং এরপর একটি বর্ণাঢ্য র্যালিও বের করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আবৃত্তি শিল্পী ও প্রমা’র সভাপতি রাশেদ হাসান। এছাড়াও এতে সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নিতাই প্রসাদ ঘোষ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহিউদ্দীন মাহিম প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যার সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পিসিপি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক অন্তর চাকমা।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে এই উদ্বোধনী পর্বের সূচনা হয়। এরপরে উদ্বোধক বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং এতে ডিসপ্লে প্রদর্শন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে উদ্বোধক রাশেদ হাসান বলেন, ‘আমরা একটি মানবিক সমাজ-রাষ্ট্র বিনির্মাণের সংগ্রামে আছি। সেই সংগ্রাম তখনই পূর্ণ হবে যখন এই দেশের সকল নাগরিক নিজেদেরকে মর্যাদাবান মনে করবে। আমরা বাংলাদেশকে আধুনিক বাংলাদেশে পরিণত করতে ব্যস্ত আছি, এদিকে আদিবাসী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীরা মূলধারা থেকে ব্যাপকভাবে পিছিয়ে পড়ে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রায় সময়ই আদিবাসীদের উপর অত্যাচার-নিপীড়নের খবর দেখি। কিন্তু সেসব অপরাধের বিচার দেখতে পাই না। আজকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের এই সভা থেকে আদিবাসীদের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার জোর দাবি জানাই, তাদের উপর ক্রমাগত নির্যাতনের বিচারের জোর দাবি জানাই। একটি সমাজ-রাষ্ট্র তখনই এগিয়ে যায়, যখন সেই রাষ্ট্রের সকল জনগোষ্ঠী, যেকোন প্রান্তের মানুষ যদি বলে তারা ভালো আছে। কিন্তু আজকে আমাদের দেশে পাহাড়-সমতলে আদিবাসী মানুষেরা ভালো নেই। এই সত্যটি আমাদের মানতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, প্রগতির, সুন্দরের পক্ষে, সর্বোপরি আমরা মানুষের পক্ষে। আজকে আদিবাসীরা যে অধিকারের জন্য রাজপথে নেমেছে, যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে আমরা আপামর প্রগতিশীল মানুষ তাদের পূর্ণ সংহতি জানাই। আজকের সমাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা জোর কন্ঠে বলতে চাই, আদিবাসীরা কখনই যেন মনে না করে তারা একা, বিচ্ছিন্ন। তারা যেন মনে করে, এদেশের প্রগতিশীল মানুষেরা, সুন্দরের পক্ষের মানুষেরা সবসময়ই তাদের পাশে আছে। আমরা এক হয়ে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবো।’
সম্মানিত আলোচক অ্যাড. নিতাই প্রসাদ ঘোষ বলেন, ‘এই রাষ্ট্র যতই উন্নত, আধুনিক হোক, যদি এদেশের প্রান্তিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে পিছিয়ে ফেলে রাখা হয় তবে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে না। এদেশের যেকোনো জনগোষ্ঠী যদি পিছিয়ে থাকে, অনুন্নত জীবনযাপন করে এবং তার স্বকীয় জীবনধারা বজায় রাখতে না পারে এবং তার ভাষা-সংস্কৃতি হুমকিতে পড়ে তবে তা এদেশের জাতীয় ব্যর্থতা।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মহিউদ্দিন মাহিম বলেন, ‘বর্তমানে সময়ের বাস্তবতায় আদিবাসী যুব-তরুণদের সমাজের পরিবর্তনকারী হিসেবে ভূমিকা রাখতে হবে। মার্টিন লুথার কিং যেমন কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ের অগ্রপথিক ছিলেন একইভাবে এদেশের আদিবাসীদের অধিকার বাস্তবায়নে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় বর্ণ বৈষম্য খুব বেশি। আদিবাসী তরুণদের উপলব্ধি করতে হবে এই সমাজ কীভাবে আপনার নির্যাতন-নিপীড়ন-বঞ্চিত করে, তাহলে আপনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উপায় খুঁজে পাবেন। একইসাথে বর্তমান বিশ্বে লড়াই করে টিকে থাকার জন্য দক্ষতা অর্জন ও যোগাযোগ স্থাপনের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আদিবাসীরা যেখাবে থাকতে চায়, যেভাবে জীবনধারণ করতে চায় রাষ্ট্রকে সেই সুযোগ দিতে হবে। আজকে তারা মুক্তভাবে কথা বলতে পারছে না, মুক্তভাবে অধিকার ভোগ করতে পারছে না। যদি পারতেন, আমরা আজকে সমৃদ্ধ, আধুনিক আদিবাসী সমাজ দেখতে পেতাম। বাংলাদেশ যদি সমৃদ্ধি অর্জন করতে চায় একটা মানুষকেও পেছনে ফেলে রাখলে হবে না। আদিবাসী মানুষের অধিকার বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই, সংগ্রামকে জোরদার করে এগিয়ে নিতে হবে।’
শুভেচ্ছা বক্তব্যে অন্তর চাকমা বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করলেও আমরা দেখতে পাই, বাংলাদেশে যে পঞ্চাশের অধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করছে তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ মৌলিক অধিকার এখনও এই রাষ্ট্র বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে আদিবাসী দিবসে শুভেচ্ছাবার্তা দিয়ে বিশ্বের সকল আদিবাসীদের অধিকারে সংহতি প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসীদের অধিকার বাস্তবায়নে অঙ্গীকার দিয়েছিলেন, তার বাস্তবায়নে উদ্যোগ আমরা এখনো পর্যন্ত দেখিনি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আরো দেখতে পাই, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে আইএলও কনভেনশন ১০৭ এ অনুস্বাক্ষর করেছিলেন সে কনভেশনে উল্লেখিত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। আজকের এই সমাবেশ থেকে আমরা জোর দাবি জানাই যে, এইদেশে যে পঞ্চাশের অধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠী আছে তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।’
উদ্বোধনী পর্বের আলোচনা সভা শেষে চেরাগী মোড় থেকে থিয়েটার ইন্সটিটিউট চট্টগ্রাম প্রাঙ্গণ পর্যন্ত র্যালি করা হয়।