আজ একটাই দাবি, চুক্তি বাস্তবায়ন করতেই হবে: ময়মনসিংহে সংহতি সমাবেশে রাশেদ খান মেনন এমপি

হিল ভয়েস, ৫ জুন ২০২৩, ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সংহতি সমাবেশে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি বলেছেন, চুক্তির দীর্ঘ ২৫ বছর অতিবাহিত হচ্ছে, আমাদের আর বসে থাকলে হবে না। আমাদের সকলকে এক হয়ে আমাদের দাবির পক্ষে লড়তে হবে। আজ আমাদের একটাই দাবি, এ চুক্তি বাস্তবায়ন করতেই হবে। তিনি বলেন, নিরাপত্তার চশমা দিয়ে দেখে বিচ্ছিন্নতার জিগির তুলে সেখানে সেনাশাসন জিইয়ে রাখা চলবে না।

আজ ৫ জুন ২০২৩ বিকাল ৩ টার দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন এর উদ্যোগে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে ময়মনসিংহের টাউন হল অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটরিয়ামে ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি গণমিছিলও অনুষ্ঠিত হয়।

অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত এর সভাপতিত্বে এবং অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংহতি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ জাসদ এর নেতা ডা: মোশতাক হোসেন, বাসদ নেতা কমরেড খালেকুজ্জামান লিপন, জাতীয় শ্রমিক জোট এর সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, এ এল আর ডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতির নেতা দীপায়ন খীসা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য ইউজিন নকরেক প্রমুখ।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি আরও বলেন, আজ ময়মনসিংহে বাম প্রগতিশীল নেতৃবৃন্দ, আদিবাসী জনগোষ্ঠী এক দাবিতে একত্রিত হয়েছে যা আনন্দের। ১৯৭১ এর অপূর্ণতা পূর্ণতা পেয়েছিল এই চুক্তির মাধ্যমে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজো তা বাস্তবায়ন হয় নি। এ চুক্তি বাস্তবায়ন সহজ ছিল না, কিন্তু তার ফল আসছে না। জিয়াউর রহমান ক্ষমতার এসে পাহাড়ের সমস্যা সমাধান না করে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করেন, যার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। এরশাদ এর সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়েছিলাম। খালেদ জিয়া জনচাপে উদ্যোগ নিলেও চুক্তি করেন নি। শেখ হাসিনার উদ্যোগে চুক্তি হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। সংঘাত জিইয়ে রাখার ফলস্বরূপ আজ সেখানে কুকি-চিন এর আনাগোনা, সেখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে দেশীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী। যা পাহাড়-সমতল সর্বত্র অশান্তির কারণ।

তিনি বলেন, এ বছর প্রস্তাবিত বাজেটে কোথাও আদিবাসীদের কথা নাই, অথচ আমরা চেয়েছিলাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ থাকবে।

তিনি বলেন, আজ পাহাড়ে মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হোটেল-মোটেল রিসোর্ট হয়েছে যার বদলা পাহাড়িরা দিচ্ছে। এসব উন্নয়ন পাহাড়ের মানুষের জন্য নয়, বাঙালিদের ভোগের জন্য।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি ছিল বিধায় সেখানে শান্তি চুক্তি করতে হয়েছিল। ১৯৬০-এ কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে কেন্দ্র করেই অশান্তির বীজ দানা বেধেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে ৭২ এর সংবিধানে সে বিরোধ জিইয়ে রেখেছে।

তিনি আরও বলেন, চুক্তিতে বলা ছিল, পাহাড়ি অঞ্চল হবে আদিবাসী অধ্যুষিত। কিন্তু আজ সে অঞ্চলে প্রচুর সেটেলার যা চুক্তি বিরোধী। পাহাড় ও সমতলে কোথাও ভূমি অধিকার নাই। উন্নয়নের নামে তাদেরকে ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। আজ সময় এসেছে সকলকে সকল অধিকারের দাবিতে একত্রিত হয়ে গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম বেগবান করার।

বাংলাদেশ জাসদ এর নেতা ডা: মোশতাক হোসেন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন এর সভা আজ আমরা ময়মনসিংহে করছি, কারণ আমরা আদিবাসী, পাহাড়িদের সাথে একাত্ম হয়েছিলাম ৭১ এর যুদ্ধে। আজ আমরা তাদের দাবির সাথে একাত্ম। আমরা সমতলের মানুষরা পাহাড়ের অধিবাসীদের অধিকারের নিশ্চয়তা চাই।

তিনি আরও বলেন, সকল জাতিগোষ্ঠীর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দেশ আজ শোষণমূলক, বৈষম্যমূলক, সাম্রাজ্যবাদী অবস্থান গ্রহণ করেছে। শান্তি শৃঙ্খলা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য পাহাড়ের ভূমি সমস্যা সমাধান করতে হবে, চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে।

বাসদ নেতা কমরেড খালেকুজ্জামান লিপন বলেন, প্রশ্ন আসে, কেন ময়মনসিংহে আমরা সমাবেশ করছি। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা বলে। কিন্তু সংবিধানে আদিবাসীদের মর্যাদা নিশ্চিত করা হয় নি যা আমাদের জন্য লজ্জার। আজকে মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা রক্ষা করতে হলে পাহাড়ি, আদিবাসীদের সাংবিধানিক মর্যাদা এবং চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে রক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিত করলেই স্বাধীনতা বাস্তবায়ন হবে। এ চুক্তি বাস্তবায়ন এর লক্ষ্যে আমাদের এ সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে।

জাতীয় শ্রমিক জোট এর সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা বলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। আজও প্রধানমন্ত্রী তিনি। তবুও কেন চুক্তি বাস্তবায়ন হয় নি। আজ আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় না। ৭১ এর যুদ্ধে বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধ করেছে, আদিবাসীরাও যুদ্ধ করেছে, তবুও কেন তারা সাংবিধানিক মর্যাদা পাবে না, চুক্তি কেন বাস্তবায়ন হবে না। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলেই সমতলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। দ্রুত ভুমি সমস্যা বাস্তবায়ন করতে হবে, চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ এল আর ডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, ২৫ বছর আগে যে চুক্তি হয়েছিলো তখন আমরা আশা করেছিলাম যে পাহাড়ে শান্তি আসবে। ২৫ বছর পর পাহাড়ে শান্তি আসে নি। সরকার ক্ষমতায় থেকেও এ চুক্তি বাস্তবায়ন না করা হতাশাজনক। এ বাজেটে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সরকার বরাদ্দ দিবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আরো পড়ুন

https://hillvoice.net/bn/%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%85%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%8f%e0%a6%96%e0%a6%a8-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%b0/

https://hillvoice.net/bn/%e0%a6%b2%e0%a6%a1%e0%a6%bc%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af-%e0%a6%a6%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a7%87-%e0%a6%b8%e0%a6%b0%e0%a6%95/

More From Author