রাবিতে চুক্তিবিরোধী প্রসীতপন্থী বহিরাগতদের কর্তৃক ষড়যন্ত্র ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের হুমকি প্রদানে পিসিপি’র নিন্দা

0
226

হিল ভয়েস, ১২ মে ২০২৪, রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চুক্তিবিরোধী ও প্রসীতপন্থী ইউপিডিএফ চক্র অংকন চাকমা ও রোনাল চাকমার নেতৃত্বে বহিরাগত গুন্ডা লেলিয়ে দিয়ে বিভেদের ষড়যন্ত্র এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের হুমকি প্রদান করছে বলে অভিযোগ করে বিবৃতি দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), রাজশাহী মহানগর শাখা।

পিসিপি’র রাজশাহী মহানগর শাখার দপ্তর সম্পাদক সৌখিন চাকমা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই বিবৃতি প্রদানের কথা জানানো হয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযুক্ত বহিরাগতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সমর-রূপম-সুকেশ-মনতোষ-লাল রিজাভ-মংচসিংসহ অনেক কর্মীর আত্মত্যাগে গড়া সংগঠনটি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের শোষিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠনতান্ত্রিকভাবে ৫ দফা বাস্তবায়নের আন্দোলন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন আপোষহীনভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় জুম্ম শিক্ষার্থীদের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জুম্ম শিক্ষার্থীদের কোটা বৃদ্ধি, আবাসন সংকট নিরসন, ভর্তিচ্ছুদের নানা ধরনের সহযোগিতা প্রদান করে থাকে এবং পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের শিক্ষার্থীবান্ধব এসব কার্যক্রমে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে।

কিন্তু বেশ কয়েকবছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ও বিভেদপন্থী বলে সমধিক পরিচিত ইউপিডিএফ চক্রের লেলিয়ে দেওয়া কতিপয় বিপদগামী গুন্ডা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত জুম্ম শিক্ষার্থীদের সুদৃঢ় ঐক্যে ফাটল ধরানোর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিভেদপন্থীরা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করায়। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের আহুত যেকোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীদের অব্যাহতভাবে হুমকি-ধামকি প্রদান করে থাকে যা তাদের একটি পুরোনো অভ্যাস। শুধু তাই নয় বিভেদপন্থী ও চুক্তিবিরোধী প্রসীতচক্র পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে আন্দোলনরত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করার হুমকিও নানা সময়ে প্রদান করে আসছিল।’

এতে আরো বলা হয়, ‘এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবেই তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও বিভেদপন্থী কার্যক্রম পরিচালনা করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সমুজ্জ্বল চাকমা, শামীন ত্রিপুরা, চয়েস তালুকদার, শুভ্রদেব চাকমা, রিসার্চ চাকমা, মিশুক চাকমা, জ্ঞান চাকমা, শুভাশিষ চাকমা নেতৃত্বে ১০/১২ জনের বিপদগামী গুন্ডা সাধারণ শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধামকি দিয়ে চুক্তি বাস্তবায়নের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করে।

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন যাতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে এমনই এক দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গতকাল ১১ মে ২০২৪ তারিখে ‘বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ’ এর কাউন্সিল করার নাম করে বহিরাগত বিপদগামী অংকন চাকমা, রোনাল চাকমারা সেনা-শাসকগোষ্ঠীর সাথে সুর মিলিয়ে চুক্তি বিরোধী, ঐক্য বিরোধী, জনসংহতি সমিতি বিরোধী ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কার্যক্রম বিরোধী ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও হুমকিমূলক বক্তব্য প্রদান করেছে যা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানরত জুম্ম শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক ঐক্যবদ্ধতার স্বার্থে ফাটল ধরার আশংকা তৈরি করেছে; যেটি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতিতে অবশ্যই কাম্য নয়।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ মনে করে যেকোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার স্বাধীনতা অবশ্যই সকলের রয়েছে। তাতে কারো কোনো দ্বিমত থাকার কথা নয় এবং এক্ষেত্রে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদও রাজনৈতিক মতপ্রকাশের এ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে আন্দোলনরত সংগঠন, কর্মী, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের হুমকি প্রদান করে শাসকগোষ্ঠীর নানাবিধ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কোনো ধরনের কার্যক্রম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কখনই বরদাস্ত করবে না।’

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘এমনিতর এক পরিস্থিতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সকল জুম্ম ছাত্রছাত্রীদের নিকট এই বার্তা পৌঁছে দিতে চায় যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং সেখানকার জুম্ম ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সুদৃঢ় ঐক্যবদ্ধতাকে ফাটলকারী চক্রের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সকলের সর্তক থাকতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক বাস্তবতায় নিজেদের করণীয় নির্ধারণ করতে হবে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যেকোনো কার্যক্রমে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বরাবরের মতোন তার দায়িত্ব পালন করে যাবে।’