পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের বিভিন্ন থানা শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত

0
553

হিল ভয়েস, ২০ নভেম্বর ২০২১, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম শহরের আন্দরকিল্লাস্থ আর্বান সেন্টারে পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরাম চট্টগ্রাম অঞ্চলের টেগ বাজার শাখা, ইপিজেড থানা শাখা, বন্দর থানা শাখা, চান্দঁগাও থানা শাখা, পাহাড়তলি থানা শাখা ও আদিবাসী মহিলা ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গতকাল ১৯ নভেম্বর ২০২১ শুক্রবার।

“পাহাড়ে শোষিত জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন ও মুক্তির লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হও, শ্রমিজীবী সমাজ।” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশন সকাল ১০টা ঘটিকায় শুরু হয়। পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের বন্দর থানা শাখার সভাপতি অরবিন্দু চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তাপস হোড়।

ইপিজেড থানা শাখার সভাপতি সুজন চাকমার সঞ্চালনায় প্রথম অধিবেশনের আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে উদ্দীপন চাকমা বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে দিনের পর দিন ভূমি বেদখল, গুম, খুন, ধর্ষণ, মিথ্যা মামলায় আটকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এজন্য আমাদের  সকলকে যার যার অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই সংগ্রামে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তাপস হোড় মহোদয় বলেন, “সরকার অপপ্রচার করছে যে, পাহাড় থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করলে পাহাড়ে শান্তির পরিস্থিতি বিনস্ত হবে। তারা বহির্বিশ্বে প্রতিনিয়ত প্রচার করছে বাংলাদেশে আদিবাসী বলে বলে কিছু নেই। এই পরিস্থিতিতে এদেশে আদিবাসীসহ সকল ধর্মীয় সংখ্যলঘুরা তাদের মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছে। এই অস্তিত্ব সংকটের সময়ে আমাদের সকলকে দৃঢ় মনোবল নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই সংগ্রামের কোন বিকল্প নেই।”

উপস্থিত পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি ধীষান তঞ্চঙ্গ্যা তার বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীরা আমরা জীবন্ত জাদুঘরে আছি। যেখানে নিজ পিতৃভিটায়, নিজ বাসভূমে থেকেও সেনাবাহিনীসহ নানান প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর কাছে আমাদের প্রতিনিয়ত জবাবদিহিতা দিতে হচ্ছে। আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাগুলোর গভীরে অনুধাবন করে কাজ করতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে পার্বত্য চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই।”

আদিবাসী মহিলা ফোরামের সভানেত্রী সোনালী চাকমা তার বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, “পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও আজ ঘরে বসে না থেকে অধিকার আদায়ের পথে নেমেছে। পিছিয়ে থাকা নারীদের পাশে থেকে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব নিচ্ছে।” তাছাড়া তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য নতুন কমিটিকে স্বতঃস্ফূর্ত দায়িত্ব পালনের আহবান জানান।

আলোচনা সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অর্থ সম্পাদক নরেশ চাকমা গঠিত হতে যাওয়া নব কমিটিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামিকরণ, ভূমি জোরপূর্বক দখল ইত্যাদি প্রতিনিয়ত ঘটছে। সরকার ১৯৯৭ সালে আমাদের সঙ্গে চুক্তি করে আজ চুক্তির ২৪ বছর পরেও চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন করছে না। মূলধারার মিডিয়ায়ও এখন এসব সমস্যার কথা উঠে আসছে না। মুখ ফুটে প্রতিবাদের অধিকারও আমরা দিনদিন হারাচ্ছি।” তিনি নতুন কমিটিসহ সকলকে লড়াই সংগ্রামে মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের জন্য আরও সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান।

দিনব্যাপী আলোচনা সভা শেষে পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের চট্টগ্রাম শহরের ছয়টি থানা শাখা ও আদিবাসী মহিলা ফোরামের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।

টেগ বাজার ইউনিট কমিটির সভাপতি হিসেবে স্বপন চাকমা,সাধারণ সম্পাদক কিতন চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে শ্রী এসন চাকমাকে নির্বাচিত করা হয়।

ইপিজেড থানা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন সুজন চাকমা, সাধারণ সম্পাদক চিঝিমনি চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী স্বপন চাকমা নির্বাচিত হন।

বন্দর থানা শাখা সভাপতি নির্বাচিত হন অরবিন্দু চাকমা, সাধারণ সম্পাদক সুবোধ জ্যোতি চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক নব জ্যোতি চাকমা।

চান্দঁগাও থানা শাখার সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন মিন্টু বিকাশ চাকমা, সাধারণ সম্পাদক ধনায় চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন বোধিসত্ত্ব চাকমা।

প্রতিজীবন চাকমাকে সভাপতি, জয় চাকমা সাধারণ সম্পাদক ও নিরো চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে পাহাড়তলি থানা শাখার কমিটি গঠন করা হয়।

এছাড়াও সোনাবী চাকমা সভাপতি, তরিকা চাকমা সাধারণ সম্পাদক ও  জবা চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে আদিবাসী মহিলা ফোরামের নতুন কমিটি গঠন করা হয়।

পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের ছয়টি থানা শাখা ও আদিবাসী মহিলা ফোরামের নতুন কমিটি শপথ বাক্য পাঠ করান পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অনিল বিকাশ চাকমা।