হিল ভয়েস, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, বিশেষ প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন (সিএইচটি কমিশন) বান্দরবানে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক শান্তিতে এসবের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কমিশন জোরালোভাবে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য এবং কথিত মদদপুষ্ট প্রক্সি সংঘাত দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলায় অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সমুন্নত রাখতে এবং স্থায়ীত্বশীল শান্তির জন্য গঠনমূলক সংলাপের স্বার্থে সমন্বিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছে।
সিএইচটি কমিশন ১৬ এপ্রিল ২০২৪-এ সিএইচটি কমিশন-এর তিন কো-চেয়ার সুলতানা কামাল, এলসা স্ট্যামাটোপোলু এবং মিরনা কানিংহাম কাইনের স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিবৃতিতে এইসব আবেদন জানিয়েছে।
সিএইচটি কমিশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, গত ২ ও ৩ এপ্রিল, ২০২৩ তারিখে, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় পরপর ব্যাংক ডাকাতি করে। আগ্নেয়াস্ত্র লুট করার সময় তারা পুলিশ বাহিনী, ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষী এবং আনসার সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। সিএইচটি কমিশন বিশেষত কেএনএফ এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা’র নেতৃত্বাধীন ‘শান্তি কমিটি’-এর মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা শান্তি আলোচনার এক মাসেরও কম সময় থেকে কেএনএফ-এর এই অপরাধমূলক কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
কেএনএফ-এর কর্মকান্ডের প্রতিক্রিয়ায়, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ গত ৭ এপ্রিল ২০২৪-এ বান্দরবান সফর করেন এবং কেএনএফ-এর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন। গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুসারে, গত ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত, কেএনএফ-এর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সময় মোট ৬২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অনেকেই নিরপরাধ নাগরিক, যার মধ্যে বম সম্প্রদায়ের গর্ভবতী মহিলা, ছাত্র, শিক্ষক এবং সরকারি কর্মচারী রয়েছে। এছাড়াও রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি এবং চিম্বুকের জুম্ম বাসিন্দাদের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যার মধ্যে তাদের চাল ক্রয়ের সর্বোচ্চ ৫ কিলো সীমা রয়েছে, যার লক্ষ্য কেএনএফ-এর সরবরাহ ব্যাহত করা। সিএইচটি কমিশন কিছু কেএনএফ সদস্যের কর্মকান্ডের কারণে সমগ্র বম সম্প্রদায়ের নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং সম্মিলিত শাস্তির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং অবিলম্বে নিরীহ নাগরিকদের মুক্তি ও সুরক্ষা দাবি করেছে।
উপরন্তু, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন গত ১০ এপ্রিল একটি প্রেস বিবৃতিতে দাবি করেছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীর বর্ধিত উপস্থিতির ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য কেএনএফ-এর কার্যক্রম মঞ্চস্থ করা হয়েছিল। এমনও অভিযোগ উঠেছে যে, কেএনএফ গঠন একটি স্বার্থান্বেষী মহলের দ্বারা পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি বজায় রাখার জন্য ‘ভাগ করো এবং শাসন করো’ নীতির অংশ। এছাড়া, পার্বত্য চট্টগ্রামে মারমা ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এমএনপি) নামে পরিচিত একটি নবগঠিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, যেটিকে কেএনএফের সূচনায় যারা মদদ দিয়েছে সেই একই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী দ্বারা পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য এবং আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যকার সম্প্রীতিকে অস্থিতিশীল করে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতা সৃষ্টি করার জন্য এই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর দ্বারা এই ধরনের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিকে যে সহায়তা দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে সিএইচটি কমিশন বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সিএইচটি কমিশন এইসব পরিস্থিতির জন্য গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং বিশ্বাস করে যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের ২৫ বছর পরেও দীর্ঘায়িত অ-বাস্তবায়ন থেকে এসব উদ্ভূত হয়েছে। সরকার যত বেশি বিলম্ব করবে, পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি তত জটিল হবে। এই সমস্যাগুলি মোকাবেলা করার জন্য, কমিশন নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি জরুরী বাস্তবায়নের সুপারিশ করছে:
সরকারকে অবশ্যই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়নকে দুর্বল করার জন্য কেএনএফ এবং এমএনপি-এর মতো সশস্ত্র সক্রিয় গোষ্ঠীগুলিকে পৃষ্ঠপোষকতাকারী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
● সরকারকে আর বিলম্ব না করে অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে।
● নিরাপত্তা বাহিনীকে অবশ্যই বম বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত শাস্তি বন্ধ করতে হবে, মানবাধিকার লংঘন থামাতে হবে এবং অবিলম্বে নির্দোষ বেসামরিক নাগরিকদের মুক্তি দিতে হবে।
● কমিশন কেএনএফকে শান্তি কমিটির সাথে শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করা, অপরাধমূলক কর্মকান্ড বন্ধ করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি রক্ষার জন্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার আহ্বান জানায়।
 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
             
             
                             
                             
                             
                                                     
                                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        
+ There are no comments
Add yours