লামা রাবার কোম্পানির ইন্ধনে পুলিশ কর্তৃক স্কুল নির্মাণে বাধা, ম্রো গ্রামবাসীর কলাবাগান কর্তন

0
889

হিল ভয়েস, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, বান্দরবান: ভূমিদস্যু লামা রাবার কোম্পানির ইন্ধনে লামা থানার এস আই শামীম ও রাবার কোম্পানির শ্রমিক কর্তৃক রেং ইয়ং ম্রোর কলাবাগানের কলাগাছ কেটে ফেলার ঘটনা ঘটেছে।

গতকাল শনিবার ২৪ সেপ্টেম্বর বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের রেংয়েন ম্রো কার্বারি পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে বলে এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে। গত জুন জুলাই মাসে ৩০০ কলাগাছ রোপণ করেন এই জুম চাষী।

এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, গতকাল রেং ইয়েন ম্রোর কার্বারি পাড়ার রেং ইয়েন কার্বারি বাজার থেকে বাড়িতে ফেরার পথে দেখতে পান যে, রেংইয়ুং ম্রো’র কলাবাগানের কলাগাছ কাটা। খবর পেয়ে আজ সোমবার সকালে রেং ইয়ুং ম্রো তার বাগান দেখতে যান।

ভুক্তভোগী রেং ইয়ুং ম্রো বলেন, রাবার কোম্পানির প্রায় ৪০ জন শ্রমিক তার বাগানের সব কলাগাছ কেটে দিয়েছে। মূলত তাদের জায়গা থেকে উচ্ছেদ করার জন্য রাবার কোম্পানি প্রতিনিয়ত এমন ঘৃণ্য কাজ করে যাচ্ছে। ন্যায় বিচারের জন্য প্রশাসন তাদের সহযোগিতা করছে না বলে জানান তিনি।

গতকাল রবিবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে লামা থানার এসআই শামীম-এর নেতৃত্বে পুলিশের ৪ জনের একটি টিম স্কুল নির্মাণ স্থলে উপস্থিত হয়। এ সময় মুক্তিরাম, ইনচ্যং, সিংবত ম্রো, মোহন, মেনরাও, ইয়ংইং, চংরাও, যোহন ম্রো, প্রেংসাই ম্রো সেখানে স্কুল নির্মাণ কাজ করছিলেন।

এ সময় এসআই শামীম স্কুল নির্মাণ কাজে নিয়োজিত গ্রামবাসীদের নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। এ সময় তিনি ধমক দিয়ে বলেন, এখানে স্কুল নির্মাণ করতে হলে থানার ওসির অনুমোদন নিতে হবে।

পুলিশের হুমকিতে ভয় না পেয়ে আজ সোমবার সকাল থেকে স্কুল নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করে। নির্মাণ কাজে যুক্ত কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী গ্রামবাসী বলেন, প্রশাসন ও রাবার কোম্পানি মিলে আমাদের অধিকার হরণ করার যড়যন্ত্র আমাদের তিন পাড়ার শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না। আমরা স্কুল নির্মাণ করেই ছাড়বো।

ভূমিদস্যুদের ভূমি জবরদখলের মুখে লামার সরই ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের আদিবাসীদের জীবন চলছে দারুণ সংকটে। কখনও জুম ভূমি পুড়িয়ে দেওয়া, কখনও ঝিরির পানিতে বিষ দেওয়া, কখনো ভূমিদস্যু রাবার কোম্পানি কর্তৃক মিথ্যা মামলা দায়ের, আবার কখনও কলাগাছ কেটে দেওয়া, কখনো ভূমি অধিকার কর্মীদের উপর হামলা, বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণে বাধা ও ভাঙচুর, সর্বশেষ পুলিশের সহায়তায় স্কুল নির্মাণে বাধা ও গ্রামবাসীর কলাবাগান ধ্বংস।

এভাবেই চলছে গ্রামবাসীদের উপর একের পর এক হামলা, মামলা, তান্ডবলীলা। পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী আদিবাসী ম্রো ও ত্রিপুরা গ্রামবাসীদের বংশ পরম্পরায় ভোগদখলীয় প্রথাগত ভূমি রক্ষার পরিবর্তে ভূমি বেদখলকারী রাবার কোম্পানির পক্ষে ভূমিকা পালন করে থাকে। অথচ রাবার কোম্পানীগুলো প্রতি প্লটে ২৫ একর ভূমি ইজারা পেলেও তারা স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ২৫ একরের স্থলে শতাধিক একর জায়গা দখল করে থাকে।