বাঘাইছড়িতে সীমান্ত সড়ক নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্ত জুম্মদের বিক্ষোভ ও প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি

0
653

হিল ভয়েস, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, রাঙ্গামাটি: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্তৃক রাঙ্গামাটি জেলাধীন বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইছড়ি ও সারোয়াতলী ইউনিয়নে সীমান্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় আদিবাসী জুম্ম জনগণ বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং ক্ষতিপূরণ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট স্মারকলিপি প্রেরণ করেছেন বলে জানা গেছে।

গতকাল ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ সকালের দিকে বাঘাইছড়ি ও সারোয়াতরী ইউনিয়নে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করার সময় উপস্থিত সেনা ও বিজিবি সদস্যদের সামনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহের নারী ও পুরুষগণ ব্যানার নিয়ে ও শ্লোগান দিয়ে এই বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। ব্যানারে সারোয়াতলী ইউনিয়ন ও বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের সৌজন্যে ‘কজোইছড়ি মুখ হতে মাঝিপাড়া পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের মধ্যে ক্ষতিপূরণের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ’ বলে উল্লেখ করা হয়।

এই বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশের পর ক্ষতিগ্রস্ত ৬৫ পরিবারের পক্ষ থেকে ৬৫ জনের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি স্মারকলিপি রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রেরণ করা হয়। স্মারকলিপিতে প্রধানমন্ত্রীর নিকট ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আবেদন জানানো হয়।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, “আমরা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলাধীন সারোয়াতুলী মৌজা ও বাঘাইছড়ি মৌজাস্থ ইউনিয়নের বিষয়ে উল্লেখিত গ্রামের নিম্নে স্বাক্ষরকারীর জুম্ম অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার হই। উল্লেখ্য যে, আমরা প্রায় শতাধিক পরিবার ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদনের বহু পূর্বে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে স্থানীয় উপজেলা লংগদু, কাউখালী, বরকল, নানিয়াচর এবং দিঘীনালা উপজেলা সমূহ হতে উদ্বাস্তু হয়ে উল্লেখিত জায়গায় বসতি স্থাপন করি। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে চুক্তির আওতাধীন জুম্ম অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হই।”

স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, “ইতিমধ্যে ঐসব জায়গায় আমরা নিজেরা নিজস্ব অর্থায়নে আগর, সেগুন ও ফলজ চারা রোপণ করে আগর, সেগুন ও ফলজ বাগান সৃজন করি। পাশাপাশি উক্ত বাগান হতে বিভিন্ন মৌসুমী ফল বিক্রি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে অতিকষ্টে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় গত ০১/০৭/২২ তারিখ সেনাবাহিনীর ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি) কর্তৃক উগলছড়ি চৌরাস্তা হতে কচুছড়ি মুখ হয়ে মাঝিপাড়া পর্যন্ত ৩০ ফুট প্রস্থ রাস্তা নির্মাণের ফলে সড়কের আশে-পাশে আমাদের অনেক জুম্ম আদিবাসীর বাগান-বাগিচা, ফসল, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

এতে আরো বলা হয়, “উক্ত রাস্তার ফলে আমাদের অতিকষ্টে সৃজিত বাগান ও বসতভিটা এবং স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বিশেষ ভাবে উল্ল্যেখ্য যে, উক্ত রাস্তা নির্মাণের বিপরীতে আমাদের কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণও দেয়া হই নাই। তাই প্রধানমন্ত্রীর সমীপে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করার আকুল আবেদন করিতেছি।”

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই ২০২২ সকাল ১০:০০ টায় ২৭ বিজিবি মারিশ্যা জোনের জোন কম্যান্ডার লেঃ কর্নেল মোঃ শরীফুল আবেদ (এসজিপি) নিজে এসে এই সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেন। এর পরপরই তার উপস্থিতিতেই সেনাবাহিনীর ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন এর সদস্যরা আর্য্যপুর বনবিহারের রাস্তার মুখ এলাকায় বুলডোজার ও ট্রাক্টর দিয়ে জোরপূর্বক আদিবাসী জুম্ম গ্রামবাসীর দোকান ও মূল্যবান গাছ ধ্বংস করে সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করেন।

এই সময় বাঘাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অলিভ চাকমার নেতৃত্বে স্থানীয় জুম্ম গ্রামবাসী জোন কম্যান্ডার লেঃ কর্নেল মোঃ আবেদ (পিএসসি) এর নিকট জুম্মদের ব্যাপক ক্ষতি করে এই সড়ক নির্মাণ কাজের প্রতিবাদ জানান এবং কাজটি বন্ধ করার দাবি জানান। কিন্তু বিজিবি ও সেনা সদস্যরা স্থানীয় জনগণের প্রতিবাদ ও দাবিকে তোয়াক্কা না করে সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, উগলছড়ির আর্য্যপুর দোকানের রাস্তা মুখ থেকে কজোইছড়ি মুখ হয়ে মাঝিপাড়া পর্যন্ত ৩০ ফুট প্রস্থ আনুমানিক ৪-৫ কিলোমিটার দুরত্বের রাস্তা নির্মিত হবে এবং এতে কমপক্ষে ৬৫ পরিবার জুম্ম গ্রামবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উক্ত জায়গা থেকে কজোইছড়ি মুখ হয়ে হালিমপুর বিজিবি সীমান্তবর্তী ক্যাম্প পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে এই রাস্তাটি। আর সার্বোয়াতলী ইউনিয়নের তাংগুম মুখ ব্রিজ থেকে ঐ কজোইছড়ি ক্যাম্প বিজিবি রাস্তার সাথে সংযুক্ত হবে।

বর্তমানে উক্ত জায়গায় ১০ ফুট চওড়া ইট সুলিং রাস্তা রয়েছে এবং উক্ত রাস্তায় যানবাহন চলছে। তাই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মৌজার হেডম্যান ও এলাকার গ্রামবাসীরা স্থানীয়দের ক্ষতি করে উক্ত ৩০ ফুট চওড়া সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল করার দাবি জানান।

উল্লেখ্য যে, সীমান্ত সড়ক (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা) নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে এই রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।