পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বরকল থানা শাখার ২০তম কাউন্সিলন সম্পন্ন

0
141

হিল ভয়েস, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১, রাঙ্গামাটি: “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তুলি” স্লোগানে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বরকল থানা শাখার ২০তম সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে সকাল ১০ ঘটিকায় সাধারণ সম্পাদক কেতন চাকমার সঞ্চালনায় এবং লক্ষী মন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা বিধান চাকমা।

এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি বরকল থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্বাগত চাকমা। কাউন্সিলে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি বরকল থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সবিনয় চাকমা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক ছাত্রনেতা বিধান চাকমা বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসন জারি রয়েছে। অপারেশন দাবানল দেখেছি। অপারেশন দাবানলের সময়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংগঠিত গণহত্যার সম্মুখীনও হয়েছি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বরে হওয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার, ভূমি সমস্যা সমাধান, স্থানীয়দের নিয়ে পৃথক ভোটার তালিকা, স্থানীয় পুলিশ বাহিনী গঠনসহ বিভিন্ন বিষয় কার্যকর এবং বাস্তবায়িত করার কথা থাকলেও সরকার আজ ২৪ বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ সেসব বিষয়গুলো ঝুলিয়ে রেখেছে। সে সাথে অপারেশন উত্তরণের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসন বলবৎ রেখেছে। দেশের স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার সম্পূর্ণভাবে অগণতান্ত্রিক। তারা রাতের আঁধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় নিজেদের দলীয় নেতা-কর্মীদের দিয়ে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে অগণতান্ত্রিক পন্থার মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। সারা দেশের মানুষের বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকার, চিন্তার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকারকে তারা ভূলন্ঠিত করেছে।

পিসিপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ অনেক আকাঙ্খা নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হলেও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়িত না হওয়ার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা ক্রমশ অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের যে উদ্যোগ সেটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। জুম্ম জনগণ তাদের অস্তিত্ব, সংস্কৃতি হারাতে বসেছে। তার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম ছাত্র সমাজকে ভাবতে হবে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের প্রস্তুত হতে হবে।

পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমা বলেন, আজকের জুম্ম তরুণ সমাজকে তাদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। তাদের নিজেকে বুঝতে হবে, নিজের সমাজকে বুঝতে হবে, নিজের জাতির সংগ্রামের ইতিহাসকে জানতে হবে। জুম্ম জনগণ সেই মোঘল আমল থেকে শুরু করে ব্রিটিশ, তৎপরবর্তী পাকিস্তান এবং স্বাধীন বাংলাদেশের উগ্র জাতীয়তাবাদী বাঙ্গালি শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামকে জানতে হবে।

তিনি আরো বলেন, অধুনা বাংলাদেশ হওয়ার পরে জুম্ম জনগণ আশা করেছিল, এই দেশে তাদের স্বকীয়তা এবং গৌরব নিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকবে। তাদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকবে। কিন্তু, দেশের তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর কাছে যুগ যুগ ধরে বিজাতীয় শাসন-শোষণ এবং বৈষম্যে জর্জরিত জুম্ম জনগণের অধিকার পাওয়ার স্বপ্নটি উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদে চাপা পড়ে যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপদ্রুত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে দ্রুতলয়ে সামরিকায়ন করা হয়। জুম্ম জনগণ আত্মরক্ষার্থে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলেছিল। পার্বত্য চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হলে ভবিষতেও তাই হতে বাধ্য।

পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি বরকল থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্বাগত চাকমা বলেন, যে আশা ও আখাঙ্খা নিয়ে জুম্ম জনগণ সরকারের সাথে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বরে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে উপনীত হয়েছিল। আজ ২৪ বছর পর বাস্তবায়ন তো দূরে থাক, সেই আশা আকাঙ্খাকে পুরোদমে ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয়েছে। একের পর এক চুক্তি বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শাসকগোষ্ঠী জুম্ম জনগণের ক্ষমতালিপ্সু ও বিচ্ছিন্ন একটি  অংশকে মদদ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের অধিকারের পক্ষে আন্দোলনরত সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মেরে ফেলা হচ্ছে। এর পরিণতি কখনো কারো জন্য শুভফল বয়ে আনবে না।

আলোচনা সভা শেষে কেতন চাকমাকে সভাপতি এবং প্রিয় জ্যোতি চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক করে মোট ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিপার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বরকল থানা শাখা গঠন করা হয়। নবগঠিত কমিটিকে শপথনামা পাঠ করান পিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সহ-সভাপতি জিকো চাকমা।