হিল ভয়েস, ৬ মে ২০২৫, রাঙ্গামাটি : গত ৫ মে ২০২৫ বান্দরবানের থানচি উপজেলার ২নং তিন্দু ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মংখয় পাড়ায় তিন সন্তানের জননী চিংমা খিয়াং নামের একজন জুম্ম নারীকে তিনজন বাঙালি শ্রমিক কর্তৃক জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যা ঘটনার প্রতিবাদে এবং ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ মিশিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিক্ষোভ মিছিল ও পরবর্তী সমাবেশে পিসিপি রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি সজল চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জ্ঞান চাকমার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখা পিসিপির সদস্য দিগন্ত তঞ্চঙ্গ্যা। এছাড়াও সংহতি বক্তব্য প্রদান করেন রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখা পিসিপির সহ-সভাপতি পলক চাকমা ও হেল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি এলি চাকমা।
স্বাগত বক্তব্যে দিগন্ত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ধর্ষনের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন কিছু নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম নারী তথা জুম্ম জণগণের বিভিন্ন বাস্তবতা ও লড়াই সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠতে হয়। এ দেশের জুম্ম জনগণের নিরাপত্তা নেই। জুম্ম নারী প্রতিনিয়ত বিভিন্ন হেনস্তা ও ধর্ষণের শিকার হয়। তাই জুম্ম নারীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক,সামাজিক ও নানা বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
তিনি ধর্ষকদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান ।
সংহতি বক্তব্যে পলক চাকমা বলেন, ধর্ষণ,ঘুম, হত্যা ইত্যাদি মানবাধিকার লংঘনের মতো ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে। প্রতিটি অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ করি এবং যথাযথ শাস্তির দাবি জানায়। কিন্তু আমরা তার বিচার পাই না। তার প্রধান কারণ হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়া। লড়াই সংগ্রামের ইতিহাসে যুগে যুগে ছাত্র সমাজের ভুমিকা ছিল সর্বাগ্রে। ছাত্র, তরুণ যুব সমাজই পারে শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। তাই তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের জুম্মজাতির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই সংগ্রামে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
এলি চাকমা বলেন, ধর্ষকের কোন জাত থাকে না। সে যে জাতির বা যে ধর্মেরই হোক না কেন তার একটি পরিচয় ধর্ষক। ধর্ষকর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশ সরকার আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়। তাই এ দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত যে ধর্ষণ, ঘুম, হত্যা এবং গণহত্যার মতো যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা চলমান তার কোনটির সুষ্ঠু বিচার আমরা পায়নি। তাই বলে আমাদের পিছপা হলে চলবে না। আমাদের আরো কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
সর্বশেষ সভাপতি বক্তব্যে সজল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের যে বিচারহীনতা তার প্রধান কারণ হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়া। ১৯৯৭ সালে যে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল তা উপেক্ষা করে বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে অপরেশন উত্তোরণ নামে যে সামরিক শাসন জারি রেখেছিল তা এখনও চলমান। আর চুক্তির যে মৌলিক বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে। যার ফলস্বরূপ পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণ,ঘুম,হত্যা ইত্যাদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব ঘটনা ঘটেই চলেছে।শিক্ষার্থীদের একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি রাজনৈতিক বিষয়ে সচেতন হয় আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি ধর্ষক ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জোর দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ সমাপ্তি হয়।
+ There are no comments
Add yours