আলিকদমে মাতামুহুরী রির্জাভ এলাকায় শিক্ষা ও চিকিৎসাবের প্রলোভনে চলছে ইসলামীকরণ

হিল ভয়েস, ১লা মে ২০২৫, বিশেষ প্রতিবেদক: বান্দরবান জেলার আলিকদম উপজেলার ৪নং কুরুকপাতা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড এলাকায় পৌয়ামুহুরীর সীমান্ত ঘেষা ম্রো ও ত্রিপুরা আদিবাসী জনগোষ্ঠীরদের শিক্ষা ও চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে চলছে ইসলামীকরণ। সাম্প্রতিক সময়ে মাতামুহুরী রির্জাভ পৌয়ামুহুরীতে সপ্তশীষ মডেল একাডেমি মসজিদ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে শিক্ষার নামে কোমল শিশু শিক্ষার্থীদেরকে ইসলামী কোরআন শিক্ষা দেওয়া হয় বলে জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ রবিবার সকালে সাড়ে ১১টায় নবপ্রতিষ্ঠিত পৌয়ামুহুরীতে সপ্তশীষ মডেল একাডেমি মসজিদ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে শিক্ষার নামে কোমল শিশু শিক্ষার্থীদেরকে ইসলামী কোরআন শিক্ষা দেওয়া জন্য এই প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়। এটিকে সপ্তশীষ মডেল একাডেমি বিদ্যালয় নাম দিয়ে উদ্বোধন করেন প্রতিষ্ঠাতা কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাহ মডেল হাসপাতাল ব্যবস্থাপক, বিশিষ্ট দাঈ ডা: ইউসুফ আলীর সভাপতিত্বে নও মুসলিম আবদুল্লাহ মুরংয়ের কোরান তেলাওয়াত ও নও মুসলিম সাইফুল ইসলাম ত্রিপুরার মধ্য দিয়ে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলিকদম উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা: রফিক উদ্দীন, ঈদগাঁও উপজেলা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন আল্ নোমান, ঈদগাঁও আদর্শ সাংবাদিক পরিষদ সভাপতি আনোয়ার হোছাইন, দাঈ মওলানা মো: আবদুল্লাহ আল মামুন, কছং মুরং কার্বারী, দোভাষি ত্রিপুরা কার্বারী, নও মুসলিম মাষ্টার কামাল হোসেন মুরং ও বিকাশ মুরং প্রমুখ।

এখানে নও মুসলিম মো: হেলাল উদ্দিন ত্রিপুরা ও দোভাষি ত্রিপুরা কার্বারী, নওমুসলিম মাষ্টার কামাল হোসেন মুরং মধ্য দিয়ে মাতামুহুরি রির্জাভ এলাকায় শিশুদের শিক্ষা ও চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে ইসলামকরণ কার্যক্রম পরিচালক হয়। সপ্তশীষ মডেল একাডেমি বিদ্যালয়ের নামে আদিবাসী শিশু শিক্ষার্থীদেরকে ইসলামী শিক্ষা ছাড়া আর কোন শিক্ষা দেওয়া হয় না।

গত কয়েক বছর আগে এ রির্জাভ এলাকায় সাথিরাম ত্রিপুরা পাড়ায় মাতামুহুরি রির্জাভের জমি দখল করার অভিযোগ এনে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় উপাসনালয় গীর্জা ভাংচুর করে লামা বন বিভাগ। এদিকে মাতামুহুরী রির্ভাজ এলাকায় কোন প্রকার আধা পাকা ভবন, পাকা ভবন নির্মাণ করা না গেলেও সপ্তশীষ মডেল একাডেমি কিভাবে নির্মাণ করা হয়েছে তা নিয়ে জনমনে নানা ধরনের প্রশ্ন দেখা গেছে।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, সুদুর কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা থেকে এসে ডা: মো. ইউসুফ আলী পার্বত্য উপজেলা আলিকদমের মায়ানমার সীমান্তবর্তী অতি দুর্গম পাহাড়ি আদিবাসী জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পৌয়ামুহুরী এলাকার শিক্ষার আলো বঞ্চিত পাহাড়ি উপজাতি জনগোষ্ঠীর শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো জ্বালাতে যে উদ্যোগ নিয়েছেন উপস্থিত নারী-পুরুষ আদিবাসী অভিভাবকদের তা মুল্যায়ন করার আহবান জানান।

নবপ্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়কে আগামীতে উচ্চতর প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরে সহযোগিতার হাত অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান। তিনি উপস্থিত আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে কোন প্রকার অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে প্রত্যেকের সন্তানদের অত্র প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দেয়ার আহ্বান জানান।

অত্র বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ডা: ইউসুফ আলী বলেন, উপজাতি শিশুদের বাসস্থান দুর্গম বিচ্ছিন্ন পাহাড়ি এলাকায় হওয়ার কারণে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সম্পুর্ণ বিনামুল্যে থাকা খাওয়াসহ আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে। আগামীতে অত্র আদিবাসী এলাকায় বিনামুল্যে ঔষধসহ মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিচালনা করা হবে বলে সভাপতির বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

তিনি বিদ্যালয়ের পাশাপাশি মুসলমানদের জন্য একটি মসজিদও প্রতিষ্ঠা করেন। অনুষ্ঠানে দুর্গম পাহাড়ি আদিবাসীর শতাধিক নারী-পুরুষ অভিভাবক তাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম বৌদ্ধ, হিন্দু ও খ্রিস্টানদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করার কর্মসূচি প্রায়ই ঘটতে দেখা গেছে। বিশেষ করে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ঘর নির্মাণ, গরু ও ছাগল পালন, সুদমুক্ত ঋণ ইত্যাদির প্রলোভনে বান্দরবান জেলায় ধর্মান্তরিত হচ্ছে। বান্দরবান জেলায় ‘উপজাতি মুসলিম আদর্শ সংঘ’, ‘উপজাতি মুসলিম কল্যাণ সংস্থা’ এবং ‘উপজাতি আদর্শ সংঘ বাংলাদেশ’-এর মতো সংগঠন কর্তৃক ধর্মান্তরিত মুসলমানদের জন্য বসতি স্থাপন করা হয়েছে এবং এই সংগঠনগুলির মাধ্যমে জুম্মদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করার কাজ পরিচালিত হচ্ছে।

More From Author

+ There are no comments

Add yours