আদিবাসী খেয়াং নারীকে ধর্ষণ ও নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে রাঙামাটিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

হিল ভয়েস, ৬ মে ২০২৫, রাঙামাটি: আজ ৬ মে ২০২৫ বিকাল ৩:৩০ ঘটিকায় ” বিক্ষুব্ধ ছাত্র সমাজ, রাঙামাটি” ব্যনারে রাঙামাটি শিল্পকলা একাডেমির সামনে বান্দরবানে আদিবাসী খেয়াং নারী ধর্ষণ ও নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে ও ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন তনচংগ্যা স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার ফোরামের প্রতিনিধি অলনা তনচংগ্যা, বিএমএসসি রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ক্যচিংনু মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা কমিটির সহ-সভাপতি কবিতা চাকমা, পিসিপি, রাঙামাটি জেলা কমিটির সভাপতি সুমন চাকমা, সনাক, রাঙামাটি জেলার সভাপতি বাঞ্ছিতা চাকমা সহ অন্যান্য প্রতিনিধিবৃন্দ।

তনচংগ্যা স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার ফোরামের অলনা তনচংগ্যা বলেন, ধর্ষণ আমাদের আত্মার ক্ষত। আজ আমাদের নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়। প্রশাসনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি লালনের কারণে আজকে আমাদের বোন ধর্ষিত হয়েছে, হত্যার শিকার হয়েছে। এই দায় প্রশাসনকেও নিতে হবে।

বিএমএসসি রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ক্যচিংনু মারমা বলেন, আগামীকাল বান্দরবান জেলা পুলিশ খেয়াং নারী ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে ধর্ষণের পর হত্যার কোনো কথা উল্লেখ নেই। আমরা মনে করি প্রশাসন স্পষ্টভাবে ধর্ষণ-হত্যার মতো ঘটনাগুলো প্রত্যক্ষভাবে মদদ দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ৮০ দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের জাতিগতভাবে নিধনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় মদদে লক্ষ্ লক্ষ সেটেলার পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসন করা হয়। আজ তারাই ধর্ষণ-হত্যার মতো নৃশংস ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে রাষ্ট্রীয় মদদে। উক্ত মানববন্ধন থেকে ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করে যথাযথ শাস্তির দাবি জানান তিনি।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা কমিটির সহ-সভাপতি কবিতা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণ হত্যাগুলোর বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি তা একদিনে গড়ে উঠেনি। দীর্ঘকাল হতে রাষ্ট্র তার বন্দোবস্ত করে এসেছে। আমরা আগেও দেখেছি রাষ্ট্র ধর্ষকদের পাহাড়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা। তিনি উক্ত মানববন্ধন হতে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি জানান।

পিসিপি, রাঙামাটি জেলা কমিটির সভাপতি সুমন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের যে প্রেক্ষাপট তা যুগ যুগ ধরে রাষ্ট্র কতৃক আদিবাসী পাহাড়ি জনগণের উপর শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, নিষ্পেষণের ইতিহাস। মানববন্ধনে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, পাহাড়ের জনগণ আর চুপ থাকবে না, তারা আন্দোলন-সংগ্রাম করতে শিখেছে। ধর্ষণ, হত্যা, গণহত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়ে তাদের দমিয়ে রাখা যাবে না। উক্ত মানববন্ধন হতে তিনি ধর্ষক এবং হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য প্রশাসনের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানান। সে সাথে ছাত্রসমাজকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে অধিকতর সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

সনাক, রাঙামাটি জেলার সভাপতি বাঞ্ছিতা চাকমা বলেন, প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে আমাদের আদিবাসী নারীরা কর্মঠ এবং স্বাধীনচেতা। তারই সুযোগ নিয়ে সেটেলার নামের হায়েনারা আদিবাসী জুম্ম নারীদের উপর একের পর এক নৃশংস ঘটনাসমূহ ঘটিয়ে চলেছে যা খুবই উদ্বেগের বিষয়। তিনি আরও বলেন, যুগ যুগ ধরে ধর্ষণ-হত্যার মতো ঘটনাগুলোর দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি যে হয়েছে তা আমরা আজও শুনিনি এবং দেখিনি। উক্ত সমাবেশ থেকে তিনি অবিলম্বে ধর্ষক এবং খুনিদের গ্রেপ্তার করে প্রচলিত আইনে যথাযথ শাস্তির দাবি জানান।

রাঙামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সুজন চাকমার সভাপতিত্বে এবং বাবুল মারমার সঞ্চলনায় উক্ত মানবন্ধনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী উজাই মারমা।

More From Author

+ There are no comments

Add yours