হিল ভয়েস, ২২ এপ্রিল ২০২৫, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গতকাল ২১ এপ্রিল ২০২৫ জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের (UNPFII) ২৪তম অধিবেশনে এজেন্ডা আইটেম ৫(ই): আদিবাসী নারীর অধিকার বিষয়ক আন্ত:আঞ্চলিক, আন্ত:প্রজন্ম ও বৈশ্বিক সংলাপ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি অগাস্টিনা চাকমা বক্তব্য রেখেছেন।
জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের অধিবেশনটি শুরু হয়েছে ২১ এপ্রিল ২০২৫ নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তরে এবং শেষ হবে আগামী ২ মে ২০২৫।
জনসংহতি সমিতির তিনজন প্রতিনিধি চঞ্চনা চাকমা, অগাস্টিনা চাকমা ও মনোজিৎ চাকমা অধিবেশনে অংশগ্রহণ করছেন, অপরদিকে বাংলাদেশের আদিবাসীদের পক্ষ থেকে কাপেং ফাউন্ডেশনের পল্লব চাকমা, আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক এক্সপার্ট মেকানিজমের (EMRIP) বিনোতা ময় ধামাই ও টনি চিরানও অধিবেশনে অংশগ্রহণ করছেন। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলও অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করছেন।
তার বক্তব্যে অগাস্টিনা চাকমা বলেন, আদিবাসী জুম্ম নারীদের নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়নের সাথে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়নের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নে ব্যর্থতার কারণে আদিবাসী জুম্ম নারীদের নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়ন অর্জিত হওয়া এখনো সুদূরপরাহত।
বিশেষ করে, অস্থায়ী সেনাক্যাম্পসমূহ প্রত্যাহার, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি, ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পরিবারসমূহের পুনর্বাসন, বাঙালি সেটেলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে পুনস্থাপন, আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদের ক্ষমতা হস্তান্তর ইত্যাদি বাস্তবায়ন না করার কারণে আদিবাসী জুম্ম নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অপরদিকে তাদের উপর সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।
২০২৪ সালে মুসলিম সেটেলারদের কর্তৃক জুম্ম নারী ও শিশুদের উপর ১২টি যৌন সহিংসতার রেকর্ড রয়েছে এবং এসব ঘটনায় ১৬ জন জুম্ম নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়। এসব ঘটনায় যদিও কয়েকজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়, দুর্বল মামলা ও পুলিশের দুর্বল ভূমিকার কারণে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েকদিন পরেই জামিনে জেল থেকে ছাড়া পায়। সুতরাং এরূপ ঘটনায় জড়িত কোনো ব্যক্তিকে এ পর্যন্ত আইনের আওতায় আনা হয়নি এবং সেই অনুযায়ী শান্তি প্রদান করা হয়নি। বিচারিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতির সংস্কৃতির কারণেই জুম্ম নারী ও শিশুর উপর যৌন সহিংসতার ঘটনাগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে অব্যাহতভাবে ঘটে চলেছে।
উদাহরণস্বরূপ, গত ১০ মার্চ বান্দরবান জেলায় মো: জামাল হোসেন নামে এক বহিরাগত শ্রমিক কর্তৃক আদিবাসী খিয়াং সম্প্রদায়ের মানসিক প্রতিবন্ধী এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রে, বান্দরবান সেনা জোনের ৫ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীন খামতাং পাড়া সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর সারোয়ার এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ভুক্তভোগীর পরিবারকে থানায় মামলা দায়ের করার পরিবর্তে একটি সামাজিক আপোষে পৌঁছার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
সেনা মেজর সারোয়ারের নির্দেশে আদিবাসী মুরুব্বিরা ধর্ষণকারী মো: জামাল হোসেনকে মাত্র ২ লক্ষ টাকা জরিমানা দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়। মেজর সারোয়ারকে যখন এই রায়ের বিষয়ে অবহিত করা হয়, মেজর সারোয়ার তখন উক্ত জরিমানা কমিয়ে দিতে মুরুব্বিদের অনুরোধ করে। গ্রামের মুরুব্বিরা জরিমানা কমিয়ে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে।
ঐ সিদ্ধান্ত শোনার পর, সেটা গ্রহণ করতেও মেজর সারোয়ার রাজি ছিলেন না। পরে, মেজর সারোয়ারের চাপে গ্রামের মুরুব্বিরা মাত্র ৪০ হাজার টাকার জরিমানা দেওয়ার রায় দিতে বাধ্য হন। এরপরও সেই টাকা বকেয়া রাখা হয় এবং ভুক্তভোগীর পরিবারকে নগদ টাকা দেওয়া হয়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী নারীদের অধিকার বিষয়ে স্থায়ী ফোরামকে এমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে যাতে সে পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদের অধিকার সহ অরক্ষিত আদিবাসী নারীদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে এবং তা করার জন্য স্থায়ী ফোরামকে অবশ্যই-
১. পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়নের স্বার্থে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
২. সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে আদিবাসী নারীদের সুরক্ষার উদ্দেশ্যে বিশেষ আইন প্রণয়নে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করতে হবে।