হিল ভয়েস, ১১ মার্চ ২০২৫, চট্টগ্রাম: আজ ১১ মার্চ ২০২৫ খ্রিঃ সারাদেশে নারী নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণ এর প্রতিবাদে এবং পাহাড়ে জুম্ম নারী নিরাপত্তা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিতে চট্টগ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশটি আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩ ঘটিকায় শুরু হয়। এতে সঞ্চালনা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আদর্শ চাকমা এবং সভাপতিত্ব করেন শাখা সহ-সভাপতি সৌরভ চাকমা। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পিসিপি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার স্কুল ও পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক অপূর্ব চাকমা।
অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি ডিসান তঞ্চঙ্গ্যা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সভাপতি টিকলু দে, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন চাকমা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাছেন হ্লা রাখাইন প্রমুখ।
ডিসান তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে নারী ধর্ষণ নিপীড়নের মতো ঘটনা অপ্রত্যাশিত। বিগত সময়ে পাহাড়ে একের পর এক ধর্ষনগুলোর অধিকাংশের যথাযথ বিচার হয়নি। নারীসহ সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসন সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ। অপরাধ করার পর অপরাধী দিনে দূপুরে ঘুরছে। ঢাকাস্থ আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় প্রশাসনের নিরব দর্শকের ভূমিকা রাষ্ট্রের বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রতিফলন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আজ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্যে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। পূর্বের ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পরিবীক্ষন কমিটি গঠিত হয়েছে ঠিক, কিন্তু এখনো পর্যন্ত চুক্তি বাস্তবায়নের কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলায় সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষভাবে মদদ দিয়ে থাকে। জুম্ম জনগণ এমন নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন চায়।
টিকলু দে বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি স্তরে মেয়েরা নিরাপদ নয়। ধর্ষনকারীদের বিরুদ্ধে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি ফ্যাসিবাদী হাসিনার আমলে দেখেছি তা বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও দেখতে পাচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে দেশের অবস্থার আরও অবনতি ঘটবে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও নারীদের নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। বর্তমানে আমরা চরম নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছি। আমার বোনের ধর্ষনের উপর দিয়ে আমরা কোন সংস্কার চাইনা। একাত্তর পরবর্তী সময়ে পাহাড়ে যে ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে তার মদদ হিসেবে আমরা সেনাবাহিনীকে দেখতে পাই। কল্পনা চাকমা পাহাড়ের মানুষের নির্যাতন নিপীড়নের কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা দেখতে পাই সেই কল্পনা চাকমাকে নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে সেনাবাহিনী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে ব্যার্থ হয় তাহলে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের মতো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থা হবে। এছাড়াও তিনি সরকারের কাছে প্রত্যকটি নারী নিপীড়ন ও ধর্ষন ঘটনার সুষ্ঠ বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।
সুমন চাকমা বলেন, নারী নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়া সরকারের জন্য লজ্জ্বাকর বিষয়। আমরা দেখি গতকাল রোয়াংছড়িতে এক প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষনের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই নারীদেরকে দমিয়ে রাখা হয়েছে। পাহাড়ের নারীদের অবস্থা আরো প্রান্তিক ও করুণ। দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের ভূমিকা জোরদার করতে হবে। রাষ্টের বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রত্যকটি ধর্ষণ ঘটনাকে বৈধতা দেয়। নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে আদিবাসীরা তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।
মাছেন হ্লা রাখাইন বলেন, বাংলাদেশে যে সরকার আসুক কেন আমরা নারীদের নিরাপত্তা দেখতে পাইনা। প্রতিনিয়ত নারীদের হয়রানি হতে হচ্ছে রাস্তাঘাটে। আমি যে পোশাক পরিধান করছি অন্যরা সেই পোশাক নির্ধারণ করে দেওয়ার কে। দেশের যে অবস্থা বিরাজমান কঠোর পদক্ষেপ না নিলে দেশের অবস্থা আরো খারাপ হবে। তিনি ধর্ষনকারীদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করেন।
স্বাগত বক্তব্যে অপূর্ব চাকমা বলেন, এদেশে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ধর্ষনকারীদের নিরাপত্তা দেওয়া হয় এবং প্রতিনিয়ত নিরাপত্তা দিতে দেখা যাচ্ছে। আজকে আমার বোনের নিরাপত্তা নেই, শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত কারোর এখন নিরাপত্তা নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৭ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এখনও নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। দেশে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটি নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ ঘটনায় সরকারকে জবাবদিহিতার মধ্যে আসতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে সৌরভ চাকমা বলেন, পবিত্র রমজান মাসে নারীর উপর সহিংসতা বন্ধে রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। আধুনিক সভ্যতার পিছনে পুরুষের তুলনায় নারীদের অধিক অবদান রয়েছে। সেই নারী সমাজ বর্তমানে অবহেলিত। বাংলাদেশে নারীরা বর্তমানে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। নারীর সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠা না হলে বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নতি সম্ভব নয়। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। দেশের কোথাও নারীরা নিরাপদ নয়। পাহাড়ের জুম্ম জনগণের নায্য অধিকার নিশ্চিতের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে আয়োজিত সমাবেশটির সমাপ্তি ঘটে। সমাবেশ পরবর্তীতে একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি চেরাগী মোড় থেকে শুরু হয়ে প্রেস ক্লাব হয়ে আবার চেরাগীতে এসে শেষ হয়।