লামা ও আলিকদমে ভূমি জবরদখল (পর্ব-১)
হিল ভয়েস, ৮ মার্চ ২০২৫, বিশেষ প্রতিবেদক: বান্দরবানের লামা উপজেলার মিরিঞ্জা এলাকায় সরকারিভাবে ‘আর’ হোল্ডিং-এর মাধ্যমে বাগান সৃজনের জন্য বরাদ্দকৃত লীজের জমির (পাহাড়ের) উপর গড়ে তুলা হয়েছে বিপুল সংখ্যক কটেজ ও রেস্তোঁরা। এইসব অনেকেই নামে-বেনামে ভূয়া কাগজপত্র দেখিয়ে জমি জবরদখলের অভিযোগ তুলছে স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালি জনসাধারণ।
লামা উপজেলার ২৮৪ নং ইয়াংছা মৌজার ৩নং ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মিরিঞ্জা বাগান পাড়া, বড় পুইত্যা ত্রিপুরা পাড়া, লাংগি পাড়া, মেনচিং ম্রো পাড়াসহ এখানে প্রায় ২ শত আদিবাসী পরিবার বসবাস করে।
স্থানীয় বাসিন্দা বীর বাহাদুর ত্রিপুরা ও মেনচিং ম্রো বলেন, আমরা এখানে ত্রিপুরা এবং ম্রো সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছি এক সাথে। কয়েক মাস আগে লামা উপজেলার পৌর মেয়র জহির ইসলামের ভাই আমির হোসেনের নেতৃত্বে আমাদের শ্মশানভূমি জবরদখল করেন। দখল করার পর জঙ্গল কেটে বিলাস রিসোর্ট নামে একটি কটেজ ও রিসোর্ট গড়ে তুলেন। তারা আরও বলেন, আমাদের শ্মশানভূমি জবরদখল করার প্রতিবাদ জানিয়ে লামা উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), বান্দরবান জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি), বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরারব অভিযোগ দেওয়া পরও কোন প্রতিকার পাইনি।
লামা উপজেলার ২৯৩ নং ছাগলখাইয়া মৌজার স্থানীয় বাসিন্দার মোঃ শাহাজান নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, “মিরিন্জা পাহাড়ের চূড়ায় সরকারিভাবে ‘আর’ হোল্ডিং মূলে বাগান সৃজনের জন্য লীজ আকারে জমি বরাদ্দ করা হলেও বাগান সৃজন না করে বিভিন্ন নামে বেনামে কাগজ দেখিয়ে জমি জবরদখল করে কটেজ ও রিসোর্ট নির্মাণ করা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, এখানে যে বাগানগুলো ছিল সেগুলোতে গাছপালা কেটে এবং পাহাড় কেটে রাস্তার তৈরি করে কটেজ হচ্ছে। সাজেকের মত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তুলা কটেজগুলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, যদি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ সরকারি লীজকৃত জমিগুলো সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে তাহলে অধিকাংশ কটেজ কাগজপত্র দেখাতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। আগামী বর্ষাতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হল মিরিঞ্জা পাহাড়। তিনি আরও বলেন, লামা উপজেলার ছাগলখাইয়া মৌজার অংশে এখন শুধু জবরদখল বাণিজ্য চলছে।
জবরদখল ও নামে বেনামে বাগান সৃজন করার জন্য লীজের বরাদ্দকৃত পাহাড়ে গড়ে উঠা রিসোর্টসমূহের মালিকের নাম নিম্নে দেয়া গেল- মিরিঞ্জা ভ্যালীর মালিক মোঃ জিয়া উদ্দীন, মিরিঞ্জা ৯৭ রিসোর্ট-এর মালিক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সাংগ্রিলা হিল রিসোর্টের মালিক মোহাম্মদ জাহেদুল মাওলানা, রিভার ভিউ রিসোর্টএর মালিক মোঃ জামাল উদ্দিন ভুটু, মিরিঞ্জা রিসোর্টএর মালিক মোঃ আব্দুর রহিম, সবুজ স্বর্ণ রিভার ভিউ-এর মালিক চহ্লামং মারমা, মিরিঞ্জা মেঘালায় রিসোর্টএর মালিক মিরাজ উদ্দিন, বিয়ার হিল লামার মালিক এডভোকেট সাদেকুল মাওলা, মিরিখ্যায়ং ইকো রিসোর্টএর মালিক মোঃ রফিক উদ্দিন, মাউন্টেইন উইস্পার কটেজের মালিক গোলাম আকবর, চুংদার বক রিসোর্টের মালিক মোঃ সাব্বির রহমান, মিরিঞ্জা মিট ভ্যালির মালিক পুনম বড়ুয়া, রয়েল মিল রিসোর্ট এক্স রেস্টুরেন্টের মোঃ রাসেল চৌধুরী।
সবুজ দিগন্ত এগো এন্ড রিসোর্টের মালিক মোঃ ফাহিম শাহারিয়ার ইশান, গ্রীন হেভেন রিসোর্ট-এর মালিক মোয়াজ্জেম হোসেন ও ম্যানক্রাক মুরুং, মিরিঞ্জা সানসেটের মালিক নূরুল ইসলাম জিসান ও নুর মোহাম্মদ মিন্টু, আগারং রিসোর্টের সানজিতা চাকমা, রয়েল রিসোর্টের মালিক রাসেল চৌধুরী, তংথমাং রিসোর্টের মালিক মোঃ তানফিজুর রহমান, মিরিঞ্জা ক্লাউড ভ্যালির মালিক মোঃ আলমগীর হোসেন, মিরিঞ্জা সান রাইজের মালিক মোঃ সোলতান অকোর মুমিন, সুখিয়া জ্যালির মালিক এম. বশিরুল আলম, মিরিঞ্জা মেঘ মাতং-এর মালিক মোঃ ফারুক হোসেন, মিরিঞ্জি ট্রিলস-এর মালিক শাহনেওয়াজ, মিরিঞ্জা লাতং ভ্যালীর মালিক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, মিরিঞ্জা হাফং-এর মালিক মোঃ ছালা উদ্দিন, এস কে ওয়াল্ড-এর মালিক সিংক্য মং মারমা, এসকে মিরিঞ্জা হেভেন রিসোর্টের মালিক আবু সুফিয়ান, মিরিঞ্জা পাহাড়িকার মালিক মাইনু উদ্দীন পিকলু।
মিরিঞ্জা হিল কুঠির মালিক দিদারুল ইসলাম, মারাইংছা হিল রিসোর্ট এন্ড রেস্টোরেন্ট-এর মালিক মোঃ সাইদুর রহমান, মিরিঞ্জা কুটিং-এর মালিক এডভোকেট মিজানুর রহমান, মিরিঞ্জা গ্রীণ ভ্যালীর মালিক মোঃ ওমর ফারুক, হিল স্কিপ-এর মালিক মাসুম, টপ পয়েন্ট-এর মালিক রফিক, মেঘ নিড়-এর মালিক রেংপং ম্রো, সবুজ নিবাস ও মেঘ ভেলার মালিক দেলোয়ার হোসেন রফিক, ডেঞ্জার হিল-এর মালিক সাদ্দাম হোসেন, রিভার ভিউ রিসোর্ট, হিল স্টেশন, মায়ারুন ইকো রিসোর্ট-এর মালিক মোঃ জাকির হোসেন পুলক, ন্যাচারাল ভিউর মালিক অখই, ম্রো কিম -এর মালিক ডেনিয়েল ম্রো, জঙ্গল বিলাশ-এর এড. সাদ্দাম হোসেন মানিক, গ্রীন হ্যাভেন, সুখিয়া ভ্যালী, প্যারাডাইস-সহ আরও অসংখ্য কটেজ ও রিসোর্ট এর নির্মাণ কাজ চলমান আছে।