হিল ভয়েস, ১৭ মার্চ ২০২৫, বান্দরবান: আজ (১৭ মার্চ) সারাদেশে অব্যাহত নারী নিপীড়ন, সহিংসতা, ধর্ষণ ও রোয়াংছড়ি খামতাং পাড়ায় আদিবাসী নারী ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষকের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবিতে রোয়াংছড়িতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১০মার্চ ২০২৫ খামতাং পাড়ায় রোয়াংছড়ি হতে রুমা সড়ক নির্মাণের শ্রমিক জামাল হোসেন কর্তৃক এক আদিবাসী মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়।
আজ রোয়াংছড়ি উপজেলা আদিবাসী ছাত্র সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বান্দরবান সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী চসিংথোয়াই মারমার সঞ্চালনায় এবং বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অংশৈসাই মারমার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বান্দরবান সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী অংমেপ্রু মারমা,চট্টগ্রাম ন্যাশনাল পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষার্থী মনিলাল তঞ্চঙ্গ্যা,কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জসিংথ্যুই মারমা,জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুম্যাশৈ মারমা,সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী হ্লামংচিং মারমা,বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্স কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অংশৈসিং মারমা।
নুম্যাশৈ মারমা বলেন, সম্প্রতি সারাদেশে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম নারীদের উপর অব্যাহত যৌন নিপীড়ন, নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বস্তুত একের পর এক নারীর উপর সহিংসতা, ধর্ষণের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং ঘটনার যথাযথ বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করার কারণে এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি এখনো বিদ্যমান থাকায় বারবার এধরনের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে।
পরিশেষে তিনি রোয়াংছড়িতে আমার আদিবাসী বোনকে ধর্ষণকারীর এবং সারাদেশে ধর্ষণকারী অপরাধীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
হ্লামংচিং মারমা বলেন, ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি।এই ব্যাধিকে অচিরে নিরোধ করা না গেলে একটি সমাজ থেকে অন্য আরেকটি সমাজে ছড়িয়ে পড়বে।সেটি হলে আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবেনা। সুতরাং আমরা চাই অচিরেই এই ধর্ষণ, নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন বন্ধ হোক। অপরাধীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হোক।
তিনি আরো বলেন, আমরা একটা ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠছি, যেখানে প্রতিনিয়ত আমাদের ভয় দেখিয়ে অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে বাধা দেওয়া হয়। আমরা যাতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে ভয় পায় সে ব্যবস্হা তৈরি করে রেখেছে।
তিনি আরো বিচার হীনতার সংস্কৃতির উল্লেখ করে বলেন, দূঃখের বিষয় আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘকাল যাবৎ বিচার হীনতার সংস্কৃতি বিদ্যমান রয়েছে, দোষীরা দোষ করে ও পার পেয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী নারীদের উপর সংঘটিত সহিংসতা, নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যার কোনো সুষ্ঠু বিচার হয়নাই। তার কারণে আদিবাসী নারীদের উপর বেশি নিপীড়ন সংঘটিত হচ্ছে ।
পরিশেষে তিনি সমাবেশ থেকে রোয়াংছড়ির প্রশাসন এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, খামতাং পাড়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোরীকে ধর্ষকের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, সকল আদিবাসী নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং সারাদেশে অব্যাহত নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি সহিংসতা, যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ, হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত সকল অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্হা করা হোক।
অংশৈসিং মারমা বলেন, জুলাই অভ্যুন্থানের পর ভেবেছিলাম বাংলাদেশে সকল বৈষম্য, নিপীড়ন, সহিংসতা দূর হবে। কিন্তু দূঃখের বিষয় আমরা বৈষম্য দূর হতে তো দেখিনি বরঞ্চ অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর খাগড়াছড়ি রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে কিন্তু হামলাকারীদের আইনের আওতায় না এনে হামলাকারীদের যে আদিবাসীরা প্রতিরোধ করতে চেয়েছে তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তিনি প্রশাসনের এমন দ্বিচারিতাকে নিন্দা জানিয়ে বলেন শুধু বান্দরবানে নয় সারাদেশেই আদিবাসীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে।
তিনি শহরে ধর্ষণের শিকার শিশু আছিয়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন,সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, ধর্ষণের ঘটনাগুলোর তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং রোয়াংছড়ি খামতাং পাড়ায় ধর্ষণের শিকার আদিবাসী নারীর প্রসঙ্গ টেনে বলেন যেখানে মাইলের পর মাইল সেনাবাহিনী ক্যাম্প এবং সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে ও ধর্ষণের শিকার হতে হলো, এমন নিরাপত্তা আমাদের প্রয়োজন নেই।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু খামতাং পাড়ায় আদিবাসী নারী বহিরাগত রাস্তা নির্মাণের শ্রমিকের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়। সুতরাং যারা শ্রমিক হিসেবে কাজে আসবেন তাদের আইডিকার্ড এবং চরিত্র যাচাই বাছাই করে কাজে নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
তিনি হুশিয়ারি দিয়ে আরো বলেন,আজকে থেকে রোয়াংছড়িকে ধর্ষণ এবং ধর্ষকমুক্ত ঘোষণা করলাম, যারা ধর্ষণের মতো হীন কাজে যুক্ত হবে তাদের রোয়াংছড়ির আদিবাসী ছাত্র সমাজ প্রতিহত করবে।
পরিশেষে ধর্ষকদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে তার বক্তব্য সমাপ্ত করেন।
মিছিল আকারে উসারা মহাথেরো লাইব্রেরি থেকে শুরু করে রোয়াংছড়ি বাজারে রাধামন হোটেলের সামনে সমাবেশটি শুরু হয় এবং সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে ওয়াগই পাড়ায় রোয়াংছড়ি থানার সামনে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।