পিসিপি’র রাঙ্গামাটি শহর শাখার উদ্যোগে “অশুভ শক্তি প্রতিরোধ দিবস-২০২৫” উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

হিল ভয়েস, ১৫ মার্চ ২০২৫, রাঙ্গামাটি: আজ ১৫ মার্চ ২০২৫ খ্রিঃ (শনিবার) পিসিপি’র রাঙ্গামাটি শহর শাখার উদ্যোগে ১৯৯৫ সালের ১৫ই মার্চ স্মরণে অশুভ শক্তি প্রতিরোধ দিবস-২০২৫ উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আলোচনার সভার শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের আন্দোলনে আজ পর্যন্ত যারা শহীদ, আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

এতে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলন পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমা, বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সহ-সভাপতি কবিতা চাকমা এবং পিসিপি, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ম্যাগলিন চাকমা প্রমুখ।

পিসিপির রাঙ্গামাটি শহর শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক সনেট চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পিসিপির রাঙ্গামাটি শহর শাখার সভাপতি সুরেশ চাকমা। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি, রাঙ্গামাটি শহর শাখার অর্থ সম্পাদক সুব্রত তঞ্চঙ্গা। এছাড়াও উক্ত সভায় সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন পিসিপি, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা।

জগদীশ চাকমা বলেন, “যুগ যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণকে জাতিগতভাবে ধ্বংস করার লক্ষ্যে অশুভ শক্তি নানা ষড়যন্ত্র ও নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। শাসকগোষ্ঠী, সেটেলার ও উগ্রসাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বছরের পর বছর ধরে হত্যা, ধর্ষণ, ভূমি দখল ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে জুম্ম জনগণকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে আদিবাসীদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রশাসন বরাবরই নীরব থেকেছে। সম্প্রতি ১৫ জানুয়ারি এনসিটিবির ঘটনাও প্রশাসনের নিরব ভূমিকাকে স্পষ্ট করেছে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ও সেটেলারদের দমননীতির ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব হুমকির মুখে।

১৯৯৫ সালের ১৫ মার্চ তারিখে সেটেলার ও প্রশাসনের যৌথ সাম্প্রদায়িক হামলাকে প্রতিরোধ করতে তৎকালীন ছাত্র সমাজ যেভাবে রূখে দাঁড়িয়েছিল, ঠিক সেভাবেই বর্তমানেও জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ছাত্র-যুব সমাজকে সংগ্রামী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে অশুভ শক্তির যেকোন ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত ও প্রতিরোধ করতে হবে। এজন্য পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের কোন বিকল্প নেই।

সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অশুভ শক্তির প্রভাব দিন দিন বাড়ছে, যা জুম্ম জাতিসত্তার জন্য বিপজ্জনক। ছাত্রসমাজকে অবশ্যই এই শক্তিগুলোকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি ২০১২ সালে রাঙ্গামাটিতে পিসিপির নেতা-কর্মীদের ওপর চালানো গ্রেনেড হামলার ঘটনা স্মরণ করে বলেন, ভেতর থেকে যারা জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে, তাদের চিহ্নিত করা জরুরি। পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতাকারী এবং যারা পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজকে সংগ্রামী চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।পরিশেষে, তিনি জুম্ম জাতিসত্তার স্বার্থ রক্ষায় সচেতন থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

কবিতা চাকমা বলেন, শুধু ১৯৯৫ সালের ১৫ মার্চ নয়, এর আগে এবং পরেও পাহাড়ে অসংখ্য অশুভ শক্তির উত্থান ঘটেছে। অতীতের মতো, যেভাবে ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব শক্তিকে প্রতিহত করেছে, তেমনি ভবিষ্যতেও ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে।

ম্যাগলিন চাকমা সেইদিনের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে বলেন ১৯৯৫ সালের বান্দরবানে, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর নেতৃত্বে পূর্ব নির্ধারিত পিসিপির জেলা কমিটির সম্মেলন বানচাল করতে নানা ষড়যন্ত্র চালানো হয়েছিল। তিনি উল্লেখ করেন যে, এটি ছাড়াও, প্রশাসনের সহায়তায় ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে নানা অশোভন ও সাম্প্রদায়িক ভাষায় মন্তব্য করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, একপর্যায়ে, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদ হিসেবে মিছিল বের করলে, পুলিশসহ বিএনপি-জামায়াতের সেটেলার ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে পিসিপির ৭ জন নেতা কর্মী ও আরো অনেকে আহত হন।

এছাড়াও পাশের গ্রামের ২০০টিরও বেশি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, একইভাবে পার্বত্য চুক্তিকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি গোষ্ঠী নানাভাবে কাজ করছে, এবং তাদের এই অশুভ শক্তিকে চিহ্নিত করে ছাত্রসমাজকে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান।

স্বাগত বক্তব্যে সুব্রত তঞ্চঙ্গা বলেন, আজকের এই আলোচনা সভা আমাদের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ও ভবিষ্যতের আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে। ১৯৯৫ সালের ১৫ই মার্চের ঘটনা আমাদের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আজও আমাদের স্মৃতিতে বেঁচে আছে। এই সভার মাধ্যমে আমরা অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হব।

সভাপতির বক্তব্যে সুরেশ চাকমা বলেন, অতীতে পিসিপি যেভাবে লড়াই সংগ্রাম করে এগিয়ে গেছে, তেমনি ভবিষ্যতেও এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের নির্যাতন ও নিপীড়নের ইতিহাস যেমন আছে, তেমনি গৌরবময় ইতিহাসও রয়েছে। এই নিপীড়ন ও গৌরবের ইতিহাসকে স্মরণ করে, তিনি সামনের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আয়োজিত আলোচনা সভার সমাপ্তি ঘটে।

More From Author