লামা ও আলিকদমে ভূমি জবরদখল (পর্ব-৪)
হিল ভয়েস, ৩১ মার্চ ২০২৫, বিশেষ প্রতিবেদক: বান্দরবানের আলিকদমে মারাইংতং পাহাড়ের চূড়ায় অবৈধভাবে জুম ভূমি ও মৌজা ভূমি দখল করে একজন ম্রো ব্যাক্তির নামে ভূয়া আর হোল্ডিং-এর কাগজ দেখিয়ে ঢাকার বহিরাগত লোকজন দিয়ে মারাইংতং জেদী পাহাড়ের চূড়ায় ২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন ৩০% মালিকানা ও আলিকদম উপজেলার বহিরাগত ব্যক্তি কণ্ঠশিল্পী তাসিফ খান ও মোঃ মাসুম, মোঃ সাখাওয়াত হোসেনসহ বিশাল সিন্ডিকেট ৭০% মালিকানা নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনের সাথে একশত বছরের চুক্তিতে মারাইংতং পাহাড়ে মেঘচূড়া হিল রিট্রিট (Meghchura Hill Retreat) নামে একটি কটেজ ও রিসোর্ট গড়ে তোলা হয়েছে।
মারাইংতং পাহাড়ে বসবাসরত ম্রো জনগোষ্ঠীরা বলেন, “বিগত সময়ে আমরা এই পাহাড়ে জুম চাষ করতাম। গত ২০২২ সাল থেকে চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনসহ বেশ কয়েকজন বহিরাগত লোকজন নিয়ে এসে জুম ভূমি ও মৌজা ভূমি দখল করে একজন ম্রো ব্যাক্তির নামে ভূয়া আর হোল্ডিং এর কাগজ দিয়ে মারাইংতং জেদী পাহাড়ের চূড়ায় ২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, বহিরাগত ব্যক্তি কণ্ঠশিল্পী তাসিফ খান ও মোঃ মাসুম, মোঃ সাখাওয়াত হোসেনসহ বিশাল সিন্ডিকেট নিয়ে জমি দখল করে নেন।”
মেনপয় ম্রো বলেন, ২৮৯ নং তৈনফা মৌজার হেডম্যান মংক্যানু মারমা এক একর প্রতি এক লক্ষ টাকা হারে টাকা নিয়ে বহিরাগতদের কটেজ ও রিসোর্ট নির্মাণ করার জন্য হেডম্যান রিপোর্ট মূলে দখল দিয়েছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে ২৮৯ নং তৈনফা মৌজা হেডম্যান মংক্যানু মারমাকে কল দিলে তিনি এই প্রতিবেদক বলেন, “আমি একটু ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলছি বলে কল কেটে দেন। এরপর আর কল রিসিভ করেন নাই।”
মেঘচূড়া হিল রিট্রিট এর বিষয়ে জানতে ২নং চৈক্ষ্যং ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনকে ফোন করলে তিনি বলেন, মেঘচূড়া হিল রিট্রিট কজেটটা ম্রো থেকে আর হোল্ডিং মূলে কিছু জমি কিনে নেওয়া হয়েছে। বাকি জমি দখলগুলো হেডম্যান থেকে রিপোর্ট নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে চৈক্ষ্যং মৌজার ২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড ছিনারী বাজার এলাকার পানির ঝিরিতে অবৈধভাবে জুম ভূমি ও মৌজা ভূমি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে ডাক্তার সিরাজ, মেম্বার শাহাজান সিরাজ, মোঃ কামাল, মোঃ ইয়াসিনসহ আর অনেক ব্যক্তি অবৈধ বাদুরগুহা পর্যটন স্পট গড়ে তোলা হয়েছে।
এখানে পাদুই কার্বারী পাড়া, কাইরীপাড়া, চিনারী বাজার ত্রিপুরা পাড়ার লোকজন পাহাড়ে জুম চাষাবাদ করেন।
কাইরীপাড়ার লোকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বাদুরগুহা পর্যটন স্পট হওয়ার কারণে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি। এখানের পাহাড় দখল করে বহিরাগত লোকজন বিভিন্নভাবে ভূয়া কাগজপত্র দিয়ে জমি দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান।”
এই বিষয়ে ডাক্তার সিরাজ বলেন, বাদুরগুহা সুরঙ্গ টানেলসমুহ প্রকৃতির হাজার বছরের অবদান। তার জন্য আমরা কয়েকজন, প্রকৃতির নিদর্শন সুরক্ষা, পরিবেশ উন্নয়ন বিনোদনের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি সংঘ আকারে, গত ২০২২ সাল থেকে কাজ করছি। এখানে কারো জমি দখল করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
চৈক্ষ্যং মৌজার হেডম্যান ঞোমং মারমা বলেন, ডাক্তার সিরাজ তারা কিভাবে জমি নিয়েছে তা আমি জানি না। এই বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি বলে জানান প্রতিবেদককে।