হিল ভয়েস, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রাঙ্গামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেছেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত, সম্প্রদায়গত, সমষ্টিগত ও অর্থনৈতিক বৈষম্য বিদ্যমান রয়েছে। যার কারণে সেখানে সমস্যা লেগেই আছে। এখানকার মানুষদের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে বৈষম্য করা হয়েছে। এখনো সেই বৈষম্য বিদ্যমান। দেশের শাসকগোষ্ঠী এখনো আমাদের বিশ্বাস করে না, ধর্মীয় এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে। এই বৈষম্য দূর করতে যুবসমাজকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সভাকক্ষে তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আয়োজিত “বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় যুব সমাজের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এইসব কথা বলেন।
সন্তু লারমা বলেন, বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন বিদ্যমান। এরপর আশির দশকে অপারেশন দাবানল নামে সেনাশাসন ছিল। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগৃরাম চুক্তির পর সেই সেনাশাসন ‘অপারেশন উত্তরণ’ নামে এখনো বিদ্যমান আছে।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী সবাই যদি মুসলমান হত তাহলে এ বৈষম্য তৈরি হত না। শোষণ নিপীড়ন থেকে বাঁচার জন্য ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও পাহাড়ের মানুষ তা থেকে মুক্ত হতে পারেনি। বিগত সাতাশ বছরে অনেক কিছুর উন্নয়ন হলেও শাসক গোষ্ঠী পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত করেনি। আমরা আমাদের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে দিন দিন জাতিগত শোষণ-নিপীড়ন বেড়েই চলেছে।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করা হয়। প্রকৃত অর্থে পাহাড়ের স্থায়ী বাঙালিদের সাথে পাহাড়িদের মাঝে কোনো বিরোধ নেই। এখানে বৈষম্য জিইয়ে রাখা হয়েছে। আদিবাসী মানে বাঙালি মাইনাস নয়, এ ভুল ভাঙতে হবে। এ বিরোধ যেন না থাকে সে জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, জনসংখ্যা অনুপাতের হিসাব দেখিয়ে একটি অংশ দাবি তুলেছে, জেলা পরিষদ আইন, ভূমি কমিশন আইন পরিবর্তন করতে হবে। সেখানে বাঙালি ভাইস চেয়ারম্যান দাবি করা হচ্ছে। একে তামাশা উল্লেখ করে রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, তা যদি হয় তাহলে ডিসি যদি বাঙালি হয়, তাহলে এডিসি পাহাড়ি, ব্রিগেড কমান্ডার বাঙালি হলে কমান্ডিং অফিসার পাহাড়ি হবে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র কি কাজটা করবে?
সেমিনারে বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার। উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা চাকমা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার মোহাম্মদ রিজাউল করিম। সেমিনারে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কে এস মং মারমা, শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা, প্রভাষক আনন্দ জ্যোতি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা তনয় দেওয়ান, সাংবাদিক হিমেল চাকমা, সৈকত রঞ্জন চৌধুরী, উদ্যোক্তা রোজিনা ইসলাম, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপন ত্রিপুরা, যুব সমিতির নেতা সুমিত্র চাকমা, ইরফানুল হক রোমেল, সাবেক ছাত্রনেতা উদ্ভাসন চাকমা, যুব সমিতির নেতা সাগর ত্রিপুরা প্রমুখ।