সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং আদিবাসীদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের দাবিতে চবিতে পিসিপি ও ছাত্র ইউনিয়নের মানববন্ধন

হিল ভয়েস, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, চবি: আজ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (শুক্রবার), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং আদিবাসীদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ(পিসিপি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের উদ্যোগে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পিসিপি, চবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এনতেস চাকমা, ছাত্র ইউনিয়ন, চবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক নয়ন কৃষ্ণ সাহা, টিএফএস, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক ধন রঞ্জন ত্রিপুরা ও ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক রাজেন্দ্র ত্রিপুরা প্রমুখ।

ক্যাম্পাসে জিরো পয়েন্টে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনটি আজ সকাল ১১ ঘটিকায় শুরু হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন চাকমার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি সুদীপ্ত চাকমা। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি, চবি শাখার স্কুল ও পাঠাগার সম্পাদক অপূর্ব চাকমা।

এনতেস চাকমা বলেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলা ভাষা বিশ্বের দরবারে মর্যাদা লাভ করে। পশ্চিম পাকিস্তানের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে তৎকালীন তরুণ ছাত্র সমাজ জেগে উঠেছিল বাংলা ভাষার মান মর্যাদাকে রক্ষার জন্য। কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এদেশে বসবাসরত বাঙালি ভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য যেকোন সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেখতে পাচ্ছি না। বৃহত্তর সংস্কৃতির আগ্রাসনে বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি এখন হুমকির মুখে পড়েছে। এজন্য আদিবাসীদের ভাষা-সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য শিক্ষা কাঠামোতে এগুলোর অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজন। এছাড়াও রাষ্ট্রীয়ভাবে এগুলোর যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা দরকার আছে।

নয়ন কৃষ্ণ সাহা বলেন, আদিবাসীদের মাতৃভাষা সংরক্ষণের রাষ্ট্রীয় কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ বাঙালি জাতির মতো ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া নজিরবিহীন। বাংলাদেশে এখনো জাতিগত দমন পীড়ন চলমান রয়েছে। জুলাই গণঅভুত্থ্যানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী শাসকের পতন হলেও জাতিগত ও ভাষাগত আগ্রাসন থেমে যায়নি বরং আরও চরম রূপ ধারণ করেছে।

ধনরঞ্জন ত্রিপুরা বলেন, ভাষা যদি টিকে না থাকে যেকোনো যেকোন জাতি বিলুপ্ত হতে বাধ্য। কিন্তু আদিবাসীদের ভাষাগুলো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে। আগামীর বাংলাদেশে ভাষার বৈচিত্র্য ধরে রাখতে ভাষাগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।

রাজেন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, বাংলা ভাষার উপর উর্দু ভাষার আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে ভাষা শহীদরা রক্ত দিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষজন আজ তাদের আত্মত্যাগের কথা ভুলে গিয়েছে, তারা ভুলে গিয়েছে কিভাবে ভাষার মর্যাদা দিতে হয়। আদিবাসীদের ভাষার উপর উগ্র সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনের কারণে অনেকগুলো ভাষা হারাতে বসেছে। ভাষাগুলো বিলুপ্তির পথ থেকে বাঁচাতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

অপূর্ব চাকমা বলেন, ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ভেতর থাকা আদিবাসীদের ভাষা সম্পর্কে রাষ্ট্রের আরও সচেতন হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আমরা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সেরকম কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাই না। আমরা দেখি রাষ্ট্র প্রতিনিয়ত সাংস্কৃতিক আর ভাষাগত আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে ক্রমাগত বাঙালিকরণ করা হচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে সুদীপ্ত চাকমা বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানে সকল জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চার থাকলেও রাষ্ট্রের কোনো পৃষ্ঠপোষকতা দেখা যায় না। রাষ্ট্র ক্রমাগত আদিবাসীদের তার নিজ মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদ করছে, মা-বোনদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, এমন একটি পরিস্থিতিতে ভাষা চর্চা তো একজন আদিবাসী শিক্ষার্থীর কাছে দিবাস্বপ্নের মতো।

সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আয়োজিত মানববন্ধনটির সমাপ্তি হয়। মানববন্ধনের আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

More From Author