পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী জুম্মদের প্রধান সামাজিক উৎসব উপলক্ষে রাবিতে ৫ দিনের ছুটির দাবিতে পিসিপির স্মারকলিপি

হিল ভয়েস, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রাবি: গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ইং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী জুম্ম জাতিসত্তাসমূহের প্রধান সামাজিক উৎসব বিঝু, বিষ্ণু, বৈসু, বিহু, সাংগ্রাই, চাংক্রান উৎসবের দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউটে পরীক্ষা না রাখা ও উৎসব উৎযাপন উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫(পাঁচ) দিন ছুটি ঘোষণার দাবিতে উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর বরাবরে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, “পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি এলাকা যা তিনটি জেলা (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) নিয়ে গঠিত)। ঐতিহাসিকভাবে সামাজিক, রাজনৈতিক, ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক ও সংস্কৃতিগত স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে এই অঞ্চলটি ব্রিটিশ শাসনামলে শাসন বহির্ভূত এলাকা (Excluded Area) হিসেবে মর্যাদা লাভ করে।

পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যেমে এ অঞ্চলটি ” ট্রাইবাল” অধ্যুষিত অঞ্চলের স্বীকৃতি লাভ করে৷

প্রসঙ্গগত উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে যুগ যুগ ধরে ভিন্ন ভাষাভাষী ১৩ টি স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বার বসবাস রয়েছে। যারা আবহমানকাল ধরে দেশের বাঙালি জাতি থেকে ভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য চর্চা করে আসছে। এই সকল জনগোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান সামাজিক উৎসব বিঝু, বিষ্ণু, বৈসু, বিহু, সাইগ্রাই, চাংক্রান।

এই প্রধান সমাজিক উৎসবের মাধ্যেমে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ভিন্ন ভাষাভাষী সকল জুম্ম জনগণের উদ্দেশ্যে ও চেতনা এক অভিন্ন সুতোয় গেঁথে রয়েছে। বর্ষবিদায় ও বরণ সহ এ উৎসবের দিনে পরিবারের লোকজন সবাই একত্রিত হয়ে থাকে এবং সামাজিকভাবে একত্রিত হয়ে পারস্পারিক সম্পর্ককে সুদৃঢ় করতে নানাবিধ ধর্মীয় ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকে৷

এছাড়া বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির মেলবন্ধনে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের মাঝে এ উৎসবের সামাজিক ও ঐতিহ্যগত গুরুত্ব অপরিসীম। স্মরণাতীত কাল থেকে উৎযাপিত হয়ে আসা এ উৎসবটি জুম্ম জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার অংশ যা তাদের পারস্পারিক ঐক্যতান ও ভ্রাতৃত্ববোধকে একইসূত্রে গেঁথে আবহমান কাল ধরে ধরে রেখেছে। এরই অংশ হিসেবে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৬ এপ্রিল (বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে) পর্যন্ত এ উৎসবাদি পালিত হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের অন্যতম দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ প্রাচ্যের ক্যামব্রীজ খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল হতে ১৬০ জনের অধিক জুম্ম পাহাড়ী শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে৷ ভৌগলিকগতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে রাজশাহী অঞ্চল দূরবর্তী হওয়ার কারণে রাবিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বাড়িতে যাওয়ার তেমন সুযোগ হয়ে উঠে না। যার কারণে পাহাড়ের জুম্ম জনগোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান সামাজিক উৎসব বিঝু, বিষ্ণু, বৈসু, বিহু, সাংগ্রাই, চাংক্রান উৎসবকে ঘিরে বাড়িতে যাওয়ার প্রবল আকাঙ্খা,উদ্দীপনা সবার মধ্যে পরীলক্ষিত হয়।

কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, বিগত বছরগুলোতে দেখা গিয়েছে যে, বিশ্ববদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ প্রধান সামাজিক উৎসবের বিষয়টি আমলে না নিয়ে উক্ত দিনগুলোতে ক্লাস, মিডটার্ম পরীক্ষা সহ ফাইনাল পরীক্ষা ইত্যাদি একাডেমিক কার্যক্রম বহাল করে রাখে। যার ফলে দেখা যায় অনেক শিক্ষার্থীকে বাড়িতে যেতে না পেরে রাজশাহীতে থেকে যেতে হয়৷

ইহাও উল্লেখ্য যে, দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন গুলো এই উৎসবের সরকারি ছুটি ঘোষণা ও কোন ধরনের পাবলিক পরীক্ষা না রাখার দাবি জানিয়ে আসছে৷ একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পক্ষ থেকে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট উৎসবের দিনগুলোতে ছুটি ঘোষণা ও কোন ধরনের পরীক্ষা, একাডেমিক কার্যক্রম না রাখার জন্য দাবী করা হয়। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট কোন ছুটির নির্দেশনা না থাকার ফলে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক একাডেমিক ক্যালেন্ডারে ছুটির তালিকা অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।
ফলশ্রুতিতে উৎসবের দিনগুলোতেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ক্লাস ও পরীক্ষা থাকায় জুম্ম শিক্ষার্থীরা তাদের প্রধানতম সামাজিক উৎসবটি পালন করা থেকে বঞ্চিত হয়।

তাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নরত পাহাড়ী জুম্ম শিক্ষার্থীরা যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে নিজেদের প্রধানতম সামাজিক উৎসব বিঝু, বিষ্ণু, বৈসু, বিহু, সাংগ্রাই, চাংক্রান পালন করতে পারে সেজন্য মাননীয় উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), রাজশাহী মহানগর শাখা ও জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার নিমোক্ত দাবি জানাচ্ছে-

১. অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভা আহবান করে ১২-১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৫ (পাচ) দিন ছুটি ঘোষণা করে আইন পাস করা।

২. বিশ্ববিদ্যালয় বাৎসরিক একাডেমিক ক্যালেন্ডারে বিষয়টি অন্তর্ভুক্তকরণ এবং সকল বিভাগ, ইনস্টিটিউটকে অবহিত করা৷”

More From Author