কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের কোটার সিট পুনর্বহালের দাবি পিসিপি ও এইচডাব্লিউএফ’র

হিল ভয়েস, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, কুবি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে স্বতন্ত্র আদিবাসী কোটার সিট বিলুপ্তি, সম্মিলিত কোটায় আসনসংখ্যা কমিয়ে আনার প্রতিবাদ এবং পূর্বের স্বতন্ত্র আদিবাসী কোটা পুনর্বহালের দাবি পিসিপি ও এইচডাব্লিউএফ’র।

গত ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ (অনার্স) ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে পূর্বে স্বতন্ত্রভাবে আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দকৃত ১২টি আসন বিলুপ্ত করে উপজাতি, অ-উপজাতি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটায় সম্মিলিতভাবে মোট ১১টি আসনে কমিয়ে এনেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আদিবাসী শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডাব্লিউএফ) তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি প্রদান

বিগত বছরগুলোতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ায় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য স্বতন্ত্রভাবে ১২টি কিংবা তার অধিক আসন বরাদ্দ দেওয়া হত। কিন্তু এবারের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে পূর্বে বরাদ্দকৃত স্বতন্ত্র আদিবাসী কোটার আসন বিলুপ্ত করে দেওয়া হয় এবং একইসাথে উপজাতি, অ-উপজাতি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটায় সম্মিলিতভাবে মাত্র ১ শতাংশ অর্থাৎ ১১টি আসন রাখা হয়। এছাড়াও প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে উপজাতি, অ-উপজাতি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটার মধ্যে আসন বন্টন নিয়ে কোন সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

এমতাবস্থায় ভর্তি প্রক্রিয়ায় নানা অসংগতি, আসন বন্টন সমস্যাসহ বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় সম্মুখীন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এ ভর্তি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বৈষম্যমূলক কার্যক্রমেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন মনে করে।

পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমতলের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় পঞ্চাশের অধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। প্রায় ৩০ লাখের অধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীরা এখনও পর্যন্ত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ নানাবিধ দিক দিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ে রয়েছে। আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পাশাপাশি শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতের মাধ্যমে আদিবাসী জনগোষ্ঠীসমূহ এই প্রান্তিক পর্যায় থেকে উন্নতির দিকে ধাবিত হতে পারে। ভাষাগত ও জাতিগতভাবে ভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীসমূহ উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষাবাসী জনগোষ্ঠী থেকে এখনও বহুলাংশে পিছিয়ে রয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভর্তির ক্ষেত্রে আদিবাসীদের জন্য স্বতন্ত্র কোটা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা এখনও ফুরিয়ে যায়নি।

এমতাবস্থায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র আদিবাসী কোটার বিলুপ্তি এবং আসন সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত আদিবাসীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে অন্তরায় সৃষ্টি করবে এবং বহুজাতিক, বৈষম্যমূলক ও অন্তর্ভূক্তিমূলক রাষ্ট্র বিনির্মাণে সম্ভব নয় বলে পিসিপি ও এইচডব্লিউএফ মনে করে।

তাই পিসিপি ও এইচডাব্লিউএফ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক যে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে তা অতিদ্রুত বাতিলপূর্বক পূর্বে বরাদ্দকৃত স্বতন্ত্র আদিবাসী কোটা পুনর্বহাল করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে।

অন্যদিকে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আদিবাসী ছাত্র সংসদ ৫ ফেব্রুয়ারি  হতে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র সংরক্ষিত ১২টি কোটার সিট পুনর্বহাল রাখার দাবিতে ভিসি ও রেজিস্ট্রার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।

এছাড়াও, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা সম্বলিত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার রক্ষার্থে চার দফা দাবি জানাই আদিবাসী ছাত্র সংসদ। তা হল-

১) আদিবাসী/ উপজাতি শিক্ষার্থীদের পূর্বের ১২টি কোটার সিট অনতিবিলম্বে পুনর্বহাল রাখতে হবে।

২) আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সিট অন্য কোটা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করতে হবে।

৩) জেনারেল মেরিটের সাথে আদিবাসীদের কোটার রেজাল্ট প্রকাশ করতে হবে।

৪) সিট খালি থাকা সাপেক্ষে পরবর্তী মেরিট প্রকাশ করতে হবে।

More From Author